প্রারম্ভ কথা
ক্যানসার মানেই আঁতকে ওঠা, আর লিভার হলে তো কথাই নেই। সত্যি বলতে কি, অন্যান্য ক্যানসারের তুলনায় বিশেষ করে, পুরুষদের মধ্যে লিভার ক্যানসারের প্রকোপ একটু বেশিই। শরীরে যতসব ক্যানসার হয়, তার মধ্যে লিভার ক্যানসারের স্থান পাঁচ নম্বরে। আর এ রোগের চিকিৎসা করা না হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সময় পাওয়া যায় হাতেগোনা কয়েক মাস। এর মূল কারণ লিভার ক্যানসারে রেডিওথেরাপির কোনো ভূমিকা নেই, আর কেমোথেরাপির রেসপন্সও খুব একটা আশাপ্রদ নয়। তবে এতসব হতাশার গান গাওয়ার জন্য এই লেখা নয়। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় লিভার ক্যানসারের চিকিৎসায়ও অগ্রগতি হয়েছে। আর এ বিষয়ে আলোকপাতই এ লেখার প্রতিপাদ্য।
কেন হয়?
আমাদের দেশে লিভার ক্যানসারের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস। গবেষণায় আমরা দেখতে পেয়েছি, এ দেশে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত শতকরা প্রায় ৭০ জন রোগীই হেপাটাইটিসজনিত লিভার রোগে ভুগছে। এর পরই বীরদর্পে অবস্থান করছে যথাক্রমে হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভার। পাশাপাশি অ্যালকোহল, আর মাঝেমধ্যে অটোইমিউন হেপাটাইটিসের মতো অখ্যাত রোগগুলো তো রয়েছেই। হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে ভুগছেন এমন শতকরা প্রায় পাঁচজন লোক লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত। আর হেপাটাইটিস-সি ভাইরাস ও ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে এ সংখ্যাটি যথাক্রমে শতকরা ২০ ও ৩০ জন। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, তবে আমরা শিশুদের মধ্যেও বিশেষ করে, হেপাটাইটিস-বিজনিত লিভার ক্যানসার খুঁজে পাই।
কেমোথেরাপির নতুন কী?
ফাইভ ফ্লুরোইউরাসিল, ডক্সোরুবিসিন আর টেমোক্সিফেনের মতো কেমোথেরাপির ওষুধগুলো দীর্ঘদিন ধরেই মন্দের ভালো হিসেবে লিভার ক্যানসারের চিকিৎসায় ব্যবহূত হয়ে আসছে। তবে আগেই যেমনটি বলেছি, এদের কার্যকরতা তেমন সুখপ্রদ নয়। বেশ কয়েক বছর ধরে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে কেপসিটাবিন, আর সম্প্রতি এ তালিকায় যোগ হয়েছে সুরাফিনেব। এই নতুন ওষুধ দুটির সুবিধা হলো, এগুলো মুখে খেতে হয়, হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন হয় না বললেই চলে এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম আর কার্যকরতাও আগের ওষুধগুলোর তুলনায় বেশি।
তবে সমস্যাও আছে। আর তা হলো, এই প্রতিটি ওষুধের দাম খুব বেশি। পাশাপাশি সুরাফিনেব বাংলাদেশে সহজলভ্যও নয়।
আছে আরও ভালো কিছু
লিভার ক্যানসারের আশাব্যঞ্জক দুটো চিকিৎসাপদ্ধতি হচ্ছে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন ও পারকিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইনজেকশন। এ দুটি পদ্ধতিতে বেসিকটা একই। উভয় ক্ষেত্রেই ক্যানসারকে দেহের বাইরে থেকে গাইডেড প্রবের মাধ্যমে পুড়িয়ে ছোট করে আনা হয়। এর মধ্যে রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনে আউটকাম পারকিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইনজেকশনের তুলনায় সামান্য ভালো হলেও এর সীমাবদ্ধতা অনেক গুণ বেশি।
প্রথমত, এটি সাত থেকে আট গুণ বেশি দামি, অর্থাৎ একবার রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনের খরচ দিয়ে সাত থেকে আটবার পারকিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনের জন্য সিটিস্ক্যান গাইডেন্সের দরকার পড়ে, আর পারকিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইনজেকশনের জন্য সাধারণ আলট্রাসনোগ্রামই যথেষ্ট। পাশাপাশি রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশনের জন্য যেসব বিশেষায়িত যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে, তা খুবই দামি। আর এ দেশে তার চেয়েও বেশি দুর্লভ। এ সবকিছু বিবেচনায় সারা বিশ্বেই পারকিউটেনিয়াস অ্যালকোহল ইনজেকশন লিভার ক্যানসারের চিকিৎসায় একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় চিকিৎসাপদ্ধতি।
লিভার প্রতিস্থাপন: স্বপ্ন নয় সত্যি
টিউমারের সাইজ খুব বড় না হলে, আর রোগীর শারীরিক অবস্থা সব মিলিয়ে ভালো থাকলে অপারেশন করে টিউমার ফেলে দেওয়া লিভার ক্যানসারে খুবই কার্যকর। তবে যে চিকিৎসায় এ রোগ একেবারেই নির্মূল করে, বলা চলে, রোগীকে নতুন জীবন দেওয়া সম্ভব, তার নাম লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন। আমাদের প্রতিবেশী সিঙ্গাপুর ও ভারতে বহুদিন ধরেই সফলভাবে লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন হয়ে আসছে, অথচ এত দিন আমাদের কাছে তা ছিল অমাবস্যার চাঁদ। আর খরচের কারণে এ দেশের বেশির ভাগ রোগীর জন্যই এ চিকিৎসাটি ছিল তার চেয়েও দুষ্প্রাপ্য কিছু। তবে আশার কথা, অবস্থা আর বেশি দিন সে রকম থাকবে না। গ্রাউন্ড ওয়ার্ক আর কোলাবরেশন এখন অনেকটাই শেষ। আমরা এখন আশা করতেই পারি, এ বছরের মধ্যেই এ দেশে সুলভে সফল লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন সম্ভব হতে যাচ্ছে।
ডা. মামুন-আল-মাহতাব
সহকারী অধ্যাপক,
লিভার বিভাগ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জুন ০২, ২০১০
apurbo
লিভার ক্যানসার আক্রান্ত ব্যাক্তির সেবা করলে কি লিভার ক্যানসার হওয়ার সম্ভবনা আছে ( ক্যানসার আক্রান্ত ব্যাক্তি কে খাওয়ানো , কাপর ধোয়া, গোসল, টয়লেট পরিস্কার ইত্যাদি) দয়া করে অতি শীঘ্রই জানাবেন ।
Bangla Health
না নেই।
Ayan mandal
Ami kacha roson khele amr pet er majh khan e jala kore ota ki problem pls bolun sir
Bangla Health
ভেজে বা সিদ্ধ করে খেয়ে দেখতে পারেন।