হৃৎস্বাস্থ্য নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই খবর হচ্ছে। কয়েক বছর থেকে কিছু খবর হচ্ছে আলোচিত। সেগুলো উল্লেখ করার মতো।
মাছের তেল
ব্যবস্থাপত্রের প্রয়োজন নেই, মাছের তেলে রয়েছে অফুরন্ত শক্তি। এক ডজনেরও বেশি গবেষণা থেকে জানা যায়, রক্তে যদি কোলস্টেরল বেশি থাকে, তাহলে মাছের তেল খেলে হূদেরাগ ও রক্তনালি রোগের সমস্যা কমে আসে ২০ শতাংশ। যদি হার্ট অ্যাটাক একবার হয়, তাহলে দ্বিতীয়বার অ্যাটাকের আশঙ্কা কমে আসে ১৫ থেকে ৩০ শতাংশ। মাছের তেলে কী আছে? মাছের তেলে রয়েছে মেদ-অম্ল ইপিএ এবং ডিএইচএ—এদের রয়েছে তেমন হিতকারী গুণ। গবেষক কার্ল জে লেভি এমডি বলেন, সবাই দৈনিক ইপিএ ও ডিএইচএ মিলে একত্রে ৫০০ মিলিগ্রাম গ্রহণ করলে ভালো। সপ্তাহে দুই বেলা মাছ খেলে বা মাছের তেলের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করে এ চাহিদা মেটানো যায়।
এসপিরিন বড়ি গ্রহণের আগে চিকিত্সকের পরামর্শ নেওয়া ভালো
এই হূদ্নায়কটি পুরুষের ক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক ও নারীদের স্ট্রোকের ঝুঁকি কমালেও বিশেষজ্ঞরা পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ ঘটাতে এর ক্ষমতা সম্পর্কেও অবহিত, তাই এ নিয়ে চিন্তিত। একে ব্যবহারের নীতিমালা করা হয়েছে আমেরিকার প্রিভেনটিভ টাস্কফোর্স থেকে।
গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন যা করা হয়েছে তা হলো, সাধারণভাবে পুরুষেরা ৪৫ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত এসপিরিন বড়ি গ্রহণ করতে পারেন প্রতিরোধক হিসেবে, নারীরা ৫৫ বছর পর্যন্ত; ৭০ পেরোলে গ্রহণ করা ঠিক নয় আর চিকিেকর পরামর্শ ছাড়া কারও এই বড়ি গ্রহণ করা উচিত নয়।
এক লোডোজ এসপিরিন ৮১ মিলিগ্রাম দৈনিক অথবা নিয়মিত এসপিরিন বড়ি ৩২৫ মিলিগ্রাম, এক দিন পরপর।
বিষণ্নতার চিকিৎসা করতেই হবে
হূদেরাগ হলে মন খারাপ হয় ঠিকই, তবে এও ঠিক যে হূদেরাগের একটি বড় ঝুঁকি হতে পারে বিষণ্নতা। ৬৩ হাজার নারীর মধ্যে গবেষণায় দেখা গেছে, যারা গবেষণার ১২ বছর ছিলেন বিষণ্ন, তাদের হূদেরাগে আকস্মিক মৃত্যুর আশঙ্কা হতে পারে দ্বিগুণ। রসেস্টার, মিনেসোটার মোয়ো ক্লিনিকের হূদিবজ্ঞানী শ্যাবোন এইচহেইস এমডি বলেন, এ জন্য পরামর্শ, ওষুধ—এসব এদের প্রয়োজন। মন ভালো করার ওষুধ সাট্রালিন, সাইটালোগ্রাম দেওয়া যেতে পারে পরামর্শে।
ধ্যানমগ্ন হওয়া উচিত হূত্স্বাস্থ্যের জন্য
গবেষণায় দেখা গেছে, চাপ প্রশমনের কৌশল অবলম্বন করলে রক্তচাপ ও ধমনিতে চর্বি জমার ধাতও কমে। এমন দেখা গেছে, ধ্যানচর্চা করলে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ও হূত্সমস্যা নিয়ে মানুষের অকাল মৃত্যুর হারও কমে। ২০১ জন আফ্রিকান আমেরিকান লোক যাদের হূদেরাগ রয়েছে, তারা তুরীয় ধ্যানচর্চা করেছে, তাদের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের মৃত্যুর আশঙ্কা যারা ধ্যান করেনি তাদের তুলনায় ৪৭ শতাংশ কম। গবেষক ডা. থিওডোর কোচেন বলেন, ‘সবকিছুর সমাধানের জন্য আমরা ধাবিত হচ্ছি ওষুধের কাছে। তবে আমাদের গবেষণা বলে, চাপ হ্রাসের কৌশল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি কৌশল।’
ধূমপান নিষিদ্ধ করাকে সমর্থন দিন
২০০৬ সালের দিকে জনসমাবেশে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ করার পর থেকে ‘ধূমপান করবেন না’—এই প্রতীক, সাইনবোর্ড, নির্দেশনা প্রচারিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। গবেষকেরা বলেছেন, যেসব অঞ্চলে প্রকাশ্যে ধূমপান নিষিদ্ধ—এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, প্রচার করা হয়েছে, সেসব অঞ্চলে প্রকাশ্যে ধূমপান কমেছে ৪৭ শতাংশ। বাংলাদেশে রয়েছে ধূমপানবিরোধী আইন এবং আইন ভঙ্গকারীর জন্য জরিমানা। তবে এর কঠোর প্রয়োগ প্রয়োজন।
ধূমপান বন্ধ করলে হূদেরাগ কমে আসবে ব্যাপকভাবে।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ২৬, ২০১০
Leave a Reply