উচ্চরক্তচাপ সম্পর্কে আমাদের সবারই কমবেশি ধারণা আছে। এটি যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর, তাও আমরা অনেকেই জানি। উচ্চরক্তচাপ মানুষকে নিঃশব্দে আস্তে আস্তে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যায়। বাংলাদেশে প্রায় শতকরা ১০ ভাগ পুরুষ এবং ১৫ ভাগ নারী্র উচ্চরক্তচাপে ভুগে থাকে। ৬০ বছরের বেশি শতকরা ৬৫ জনের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে।্রগ্রামের চেয়ে শহরাঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের উচ্চরক্তচাপের প্রকোপ বেশি।
হূৎপিণ্ডের সংকোচনের ফলে রক্ত ধমনির সারা শরীরে প্রবাহিত হয়। রক্তচাপ বলতে রক্তবাহী ধমনির মধ্যে রক্তের চাপকে বোঝায়।্রহূৎপিণ্ড সংকোচনের ফলে ধমনির মধ্যে যে চাপের সৃষ্টি হয় তার সর্বোচ্চ চাপকে ‘সিস্টোলিক’ রক্তচাপ বলে।্রআবার হূৎপিণ্ড প্রসারিত হওয়ার ফলে রক্তের চাপ কমে যায়, এই রক্তচাপকে ‘ডায়াস্টোলিক’ রক্তচাপ বলে।
উচ্চরক্তচাপ বলতে বোঝায়, কোনো কারণে রক্তচাপ যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশ্রি হয় তবে এটি শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের জন্য ক্ষতিকর, বিশেষত হূৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের জন্য। উচ্চরক্তচাপ হলে হূৎপিণ্ডকে সেই রক্তচাপের বিপক্ষে রক্ত বেশি জোরে সংকোচন বা পাম্প করতে হয়। এতে হূৎপিণ্ডের্র পরিশ্রম বেড়ে যায়। অর্থাৎ হূৎপিণ্ডের নিজেরই বেশি অক্সিজেন প্রয়োজন হয়। প্রয়োজনমতো অক্সিজেন সরবরাহ না পেলে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। উচ্চরক্তচাপে রক্তবাহী্র ধমনিগুলো শক্ত হয়ে যায়। ফলে স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিউর, চোখের সমস্যাসহ নানা ধরনের জটিল রোগ দেখা দিতে পারে।
একজন সুস্থ স্বাভাবিক্র মানুষের্র সিস্টোলিক রক্তচাপ সাধারণত ১১০ থেকে ১৪০ মিলিমিটার মারকারি এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৭৩ থেকে ৯০ মিলিমিটার মারকারি থাকার কথা। তবে বয়স, লিঙ্গভেদ, শারীরিক পরিশ্রম, স্থূলতা, ফিটনেস ইত্যাদির ওপর রক্তচাপ কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে যাদের রক্তচাপ ১৪০ এর নিচে, তাদের হূদরোগের ঝুঁকি কম।
অন্যান্য রোগের সঙ্গ্রে উচ্চরক্তচাপের পার্থক্য এটাই যে উচ্চরক্তচাপের সাধারণত কোনো্র উপসর্গ থাকে না। এ জন্য যারা্র উচ্চরক্তচাপে ভোগেন তাঁরা উচ্চরক্তচাপ সাধারণত অনুভব করেন না। প্রকৃতপক্ষে যাঁদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশ্র জানেনই না যে তাঁদের উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। সাধারণত রক্তচাপ পরীক্ষা করার সময় এটি ধরা পড়ে।্র উচ্চরক্তচাপের আসল কারণ অনেক সময় জানা যায় না। কতগুলো কারণ্র এর্র সঙ্গে সরাসরি জড়িত, যেমন পারিবারিক্র ইতিহাস, স্থূলতা, কম কায়িক পরিশ্রম, অতিরিক্ত লবণ বা চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া, ধূমপান, বয়স. উদ্বেগ, উত্তেজনা ইত্যাদি। সম্প্রতি সমীক্ষায় দেখা গেছে, আর্সেনিকের বিষক্রিয়া্র রক্তচাপ বাড়ায়। যাঁদের রক্তে আর্সেনিকের পরিমাণ যত বেশি, তাঁদের উচ্চরক্তচাপ হওয়ার আশঙ্কাও বেশি। আপনার উচ্চরক্তচাপ আছে কি না তা জানার একমাত্র্র উপায় রক্তচাপ পরীক্ষা করা। একবার্র মেপে রক্তচাপ বেশি পাওয়া গেল্রে সেটিকে উচ্চরক্তচাপ বলা ঠিক হবে না। দিনের একই সময়ে পরপর কয়েক দিন রক্তচাপ মেপ্রে যদি বেশি দেখা যায়, তব্রে উচ্চরক্তচাপ বলা যেতে পারে। আপনার ডাক্তার আপনাকে এ ব্যাপার্রে সঠিক পরামর্শ দিতে পারে।
এ সমীক্ষায় দেখা গেছে, আমেরিকায় শতকরা ১১ ভাগ মানুষ উচ্চরক্তচাপে মারা যায় প্রতি বছর।
আরেক সমীক্ষায় দেখা্র গেছে, যুক্তরাজ্যে ১০ ভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ ভাগ উচ্চরক্তচাপের রোগী সঠিকভাবে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখত। সিস্টোলিক রক্তচাপ ২০ মিলিমিটার মারকার্রিকমাতে স্ট্রোকের প্রকোপ কমে যায় ৫০ ভাগ। আর হূদরোগের প্রকোপ কমে যায় ২৫ ভাগের মতো। জীবনযাত্রা পরিবর্তন করে বা ওষুধ সেবন কর্রে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। যদি উচ্চরক্তচাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকে অর্থাৎ খুব বেশি রক্তচাপ নয়, এমন রোগীরা শুধু জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যম্রে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এসবের মধ্যে রয়েছে বেশি করে শাকসবজি, ফলমূল খাওয়ায়,্র চর্বি ও লবণ পরিহার করে ছয়-সাত ঘণ্টা একটানা ঘুমানো। শুধু জীবনযাত্রা পরিবর্তনের মাধ্যমে যদি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব না হয়, তবে এর সঙ্গে কিছু ওষুধ সেবন করতে হবে নিয়মিত।
সাধারণত উচ্চরক্তচাপের রোগীদের সারা জীবন নিয়মিত ওষুধ সেবন করতে হয়।
আপনার সুন্দর, সুস্থ, কার্যকর ও আনন্দময় জীবনের জন্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
যাদের বয়স ৩০ বছরের বেশি তাঁরা অন্তত বছরে একবার নিজে রক্তচাপ পরীক্ষা করুন।
হাবিবী মিল্লাত,
সিনিয়র কনসালট্যান্ট,
কার্ডিও ভাসকুলার সার্জারি
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক সেন্টার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ১৯, ২০১০
Leave a Reply