ওরাল থ্রাশ হলো মুখের ফাংগাল সংক্রমণ। ওরাল থ্রাশ ক্রিম রংযুক্ত সাদা সংক্রমণ সৃষ্টি করে, যা সাধারণত জিহ্বা অথবা চিবুকের অভ্যন্তরে দেখা যায়। এ ধরনের সংক্রমণ ব্যথাযুক্ত হতে পারে আবার সংক্রমণস্থল থেকে ব্রাশ করার সময় মৃদু রক্ত বের হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ওরাল থ্রাশ ক্ষণস্থায়ী ক্যানডিডা সংক্রমণ।
ওরাল থ্রাশের লক্ষণঃ ওরাল থ্রাশে সাদা, ক্রিম অথবা হলুদাভ দাগ মুখের অভ্যন্তরে দেখা যায়। এসব দাগযুক্ত স্থান সামান্য একটু উঁচু থাকে। সাধারণত এ স্থানগুলোর নিচে কোনো ব্যথা থাকে না। টুথব্রাশের সময় যদি আঘাত লাগে, তাহলে এখান থেকে সামান্য রক্তপাত হতে পারে। বয়স্কদের মুখে জ্বালাপোড়া ভাব অনুভূত হতে পারে এবং গলায়ও একই সমস্যা হতে পারে।
যদিও ওরাল থ্রাশে সবাই আক্রান্ত হতে পারে, তবু এটি বেশি হয় শিশু ও বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে। যাদের রোগপ্রতিরোধ-ব্যবস্থা দুর্বল, তাদের ক্ষেত্রে ওরাল থ্রাশ নিরাময় করা অনেক সময় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের মুখগহ্বরে ক্যানডিডা বিদ্যমান থাকে। যাঁরা কৃত্রিম দাঁত পরিধান করে থাকেন, তাঁদের সবারই ক্যানডিডা থাকবে। কিন্তু এতে সাধারণত কোনো খারাপ প্রতিক্রিয়া থাকে না। ক্যানডিডা সাধারণত মুখে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না মুখের রাসায়নিক পরিবর্তনের কারণে তা অন্যান্য জীবাণুর সঙ্গে ক্যানডিডাকে সংক্রমণে সাহায্য করে থাকে। মুখের অভ্যন্তরে এ পরিবর্তন হতে পারে অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অথবা কেমোথেরাপির কারণে। এ ছাড়া ডায়াবেটিস থাকলে, নেশা করলে অথবা অপুষ্টিতে ভুগলে এ ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। যাদের কৃত্রিম দাঁত ঠিকভাবে লাগানো হয় না, তাদের ক্ষেত্রে মিউকাস মেমব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা ক্যানডিডা সংক্রমণে সাহায্য করে ওরাল থ্রাশের সৃষ্টি করতে পারে।
ওরাল থ্রাশের চিকিৎসাঃ যেসব কারণে ওরাল থ্রাশের সৃষ্টি হয়েছে, তা নির্ণয় করে অপসারণ করতে হবে। অ্যান্টিফাংগাল ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। নিস্টাটিন ওরাল সাসপেনশন, মাইকোনাজল এসব ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ফ্লুকোনাজল-জাতীয় ওষুধও ওরাল থ্রাশের চিকিৎসায় দেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া অন্যান্য ওষুধও প্রয়োজন হতে পারে রোগীর রোগের বিভিন্ন উপসর্গ অনুযায়ী। তবে ওরাল থ্রাশের চিকিৎসায় অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ ওরাল থ্রাশের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ অনেক সময় রোগীর দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থায় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। মুখের ফাংগাল সংক্রমণে চিকিৎসা প্রদান করার আগে রোগীর কোনো যৌনরোগ আছে কি না তাও খতিয়ে দেখতে হবে। অহেতুক ওষুধ প্রয়োগ বা সেবন না করাই উত্তম।
ডা· মো· ফারুক হোসেন
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply