ডায়াবেটিস যে কারও হতে পারে। এতে মন খারাপ করা কেন? হয়েই যখন গেছে, তখন একে ঠিকমতো সামলে চললে পরিপূর্ণ জীবন যাপন সম্ভব। সত্যি কথা বলতে কি, ডায়াবেটিস হলে জীবনে আসে শৃঙ্খলা। এতে যা হয়, তা হলো পরিপূর্ণ দীর্ঘ জীবন। ১০ মিনিটের কিছু কাজ করলে অনেকটা আয়ত্তে থাকবে রোগটা। বলি, শোনেন।
যেমন ঘরের দুয়ারের বাইরেই জুতোজোড়া রেখে ঢুকবেন। কারণ হলো, খালি পায়ে যাতে না হাঁটেন। আর পায়ের যত্ন বড় কথা।
সারা শরীর জরিপ করে নিন ভালো করে। শাওয়ার নেওয়ার পর শরীরটা মুছে আয়নার সামনে দাঁড়ান। জন্মদিনের পোশাক পরেই না-হয় দাঁড়ান। এরপর পুরো দেহ ভালো করে পরীক্ষা করে নিন। কোথায় কী আছে লাল, শুষ্ক, ক্ষত, কোনো দাগ। দেখুন না বগলের নিচে, স্তন, বুক, দুটো পায়ের মাঝখানে, হাত-পায়ের আঙুলগুলোর ফাঁকে, পায়ের পাতা—সব জরিপ করা হলো?
একটা কথা বলি, জরুরি প্রয়োজনে নাশতা খাওয়ার প্রয়োজন হলো। তাই স্ন্যাকসের একটা ছোট্ট পুঁটলিতে থাক না কয়েকটা গ্লুকোজ ট্যাবলেট, ফল, ছয়টি ক্যান্ডি…। ঘটনাক্রমে রক্তের সুগার নেমে গেল, তখন জীবন বাঁচাতে এগুলো দরকার হবে তো। গ্লুকোমিটারটা রেখে দিন বিছানার পাশে ডানদিকে ছোট্ট টেবিলটাতে। মনে রাখার জন্য সকালে উঠে প্রথম কাজ গ্লুকোমিটারে রক্তের গ্লুকোজ মেপে দেখা এবং আরেকবার রাতে ঘুমুতে যাওয়ার আগে, চিকিৎসক যেমন পরামর্শ দেন। লক্ষ থাকবে যে আহারের আগে রক্তের সুগার যেন ৯০-১৩০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এবং রাতে শোয়ার আগে যেন থাকে ১১০-১১৫ মিলিগ্রামের মধ্যে।
জিমে যান অনেকে। অনেকে অফিসে যান ব্যাগ নিয়ে। জিমব্যাগে যেন থাকে একটি ট্যাগ। ব্যায়াম করার আগে একবার এবং ব্যায়ামের পর আবার রক্তের গ্লুকোজ মেপে নিন। তাহলে রক্তে সুগারের বিপজ্জনক অবনতি ঠেকানো যাবে।
জীবনের সঙ্গে যেন মিলেমিশে যায় ইনসুলিন ইনজেকশন, যিনি ইনসুলিন নেন তার জন্য বলি। যেমন দিনে খুব ব্যস্ত কর্মসূচি, খাওয়াদাওয়ার সময় ঠিক নেই, যখন-তখন খাওয়া। চিকিৎসক দেবেন হয়তো দ্রুত কাজ করে এমন ইনসুলিন—চিকিৎসা যা হচ্ছে, এর কিছুটা পরিবর্তন হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শে।
এই দ্রুত ক্রিয়াশীল ইনসুলিন হয়তো নেওয়া হলো খাওয়ার ঠিক আগে, এরপর ফল পেলেন রক্তের সুগারের ওপর আধঘণ্টার মধ্যে।
খাবার খাবেন কম করে কয়েকবারে। যেসব খাবারে রক্তের সুগার বেশি ওঠে না, দ্রুত সেগুলো খেতে হবে। পুষ্টিকরও হতে হবে এসব খাবার।
জলপানটা জরুরি। রক্তে গ্লুকোজ বেশি হলে শরীর থেকে জলহানি হয়। ত্বক শুকিয়ে যায়। চুলকানি হতে পারে, ত্বক ফেটেও যেতে পারে। সে জন্য আশঙ্কা থেকে যায় সংক্রমণের। তাই প্রচুর পানি পান করতে হবে। অন্যান্য তরল পানীয়ও পান করতে হয়। ত্বক থাকবে আর্দ্র ও স্বাস্থ্যকর।
হাতে পরে নিন মেডিকেল অ্যালার্ট ব্রেসলেট। ঘড়ি, অঙ্গুরীয় এগুলোর পাশাপাশি থাকবে ব্রেসলেট। প্রতিদিন পরতে হবে। খুলে যদি রাখতেই হয়, তাহলে রাখুন টুথব্রাশ বা চাবির পাশে। জরুরি অবস্থায় কাজে লাগবে। এমন দুর্ঘটনা ঘটল যে কথা বলা গেল না, বাকরুদ্ধ হয়ে এল, হতবিহ্বল—সংকটের এই সময় জানানো যাবে যে ডায়াবেটিস আছে। দিনে ৩০ মিনিট ব্যায়াম যথেষ্ট। ব্যস্ত জীবনে একটানা ৩০ মিনিট কঠিন? ১০ মিনিট করে তিনবার ৩০ মিনিট—সকালে ১০ মিনিট স্ট্রেংথ ট্রেনিং বা খেলা, দুপুরে খাওয়ার পর হাঁটা আর বিকেলে হাঁটা।
ফার্স্টএইড কিড সঙ্গে রাখলে আরও ভালো। ডায়াবেটিস জটিলতার সামান্য ক্ষতকে বড় সমস্যায় পরিণত করতে পারে। যেমন ক্ষত পরিষ্কারের জন্য হাইড্রোজেন প্যারোক্সাইড। ছোটখাটো কাটা, ছেঁড়া, ফাটার জন্য ট্রিপল অ্যান্টিবায়োটিক ক্রিম। ‘গজ’ ব্যান্ডেজ, ডেটল, বেনজিন। আর গজ যেন জীবাণুমুক্ত হয়। সামান্য সচেতনতাই ডায়াবেটিস সামলানো যাবে সহজেই।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মে ০৫, ২০১০
Leave a Reply