হৃদরোগ থাকলে চিকিৎসক দর্শন ঘন ঘন হলে ভালো। হঠাৎ করে ডাক্তারের চেম্বারে কেন? বারবার গেলে ক্ষতি কি? নিয়মিত ডাক্তার দেখালে ফল হয় ভালো। করোনারি হৃদরোগ একবারে নির্মুল হবেনা। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে, নিয়মমাফিক চললে রোগকে বেশ মোকাবেলা করা যায়। হার্ট এটাকের ঝুঁকি বা অন্যান্য সমস্যা অনেকটা এড়ানো যায়।
চেকআপ ও টেস্ট: ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিতে হবে কতবার চেকআপ ও রক্তের পরীক্ষা করাতে হবে। হৃদরোগ হয়ে থাকলে রক্তের চাপ ও কোলেস্টেরল বেশ কয়েকবার তো মাপতে হবে। ডাক্তার রোগের ঝুঁকিগুলো নজরদারি করা এবং প্রয়োজনে চিকিৎসা করতে পারে। নিয়মিত চেকআপ ও টেস্ট করে এসব ঝুঁকির অনেকটা জানা যায় যেমন-
০ রক্তের কোলেস্টেরল মান, যেমন ক্ষতিকর এলডিএল ও হিতকর এইচডিএল মান, রক্তের চর্বি অর্থাৎ ট্রাইগ্লিসারাইড মানও জানা প্রয়োজন হয়।
০ রক্তের চাপ
০ রক্তের সুগার মান, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি রয়েছে কি না, তা জানা।
পরামর্শ চাইতে হবে: ঝুঁকিগুলো যাতে এড়ানো যায়, রোগ যাতে আরো শোচনীয় না হয় সেজন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস চর্চার পরামর্শ দিতে পারেন ডাক্তার। হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জীবনাচরণে পরিবর্তন যা আনা যায় সেসম্পর্কেও থাকবে ডাক্তারের পরামর্শ।
হৃদরোগের খাদ্যবিধি: স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করলে নিয়ন্ত্রণে থাকবে রক্তের চাপ ও রক্তের কোলেস্টেরল। সম্পৃক্ত চর্বি পরিহার করা, ট্রান্সফ্যাট ও কোলেস্টেরল পরিহার করা, প্রচুর ফল, শাক-সবজি ও কমচর্বি দুধজাতদ্রব্য গ্রহণ। ডাক্তার ও পথ্যবিদ এ ব্যাপারেও দিতে পারেন পরামর্শ।
নিয়মিত ব্যায়াম করা: ব্যায়ামের কর্মসূচী শুরু করার আগে ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে নিতে হবে। হাঁটা-একটি ভালো ব্যায়াম। হাঁটা শুরু করা যায়। সপ্তাহে অন-ত: ৫ দিন আধ ঘন্টা হাঁটলে অনেক লাভ।
শরীরের বাড়তি ওজন ঝেড়ে ফেলতে হবে: ঠিক ঠিক মত খেলে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা সম্ভব।
ধূমপান বর্জন করা: ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। অন্য যারা ধূমপান করে এদের সংস্পর্শ ত্যাগ করতে হবে। কারণ অন্যের সিগারেটের ধোঁয়াও নিজের স্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি হতে পারে। ডায়াবেটিস থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ মত চলতে হবে। স্বাস্থ্য পরিচর্যাকেন্দ্রের কর্মীদের সঙ্গে মিলে নিজের রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিজের ওষুধ পর্যালোচনা করতে হবে, প্রয়োজনে। হৃদরোগ চিকিৎসার জন্য ও কিছু ঝুঁকি কমাবার জন্য অনেকের প্রয়োজন হয় ওষুধ। ডাক্তার ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন এমন সব ওষুধের-
০ রক্তের জমাট পিন্ড প্রতিরোধের জন্য ওষুধ। এগুলোর ঘনিষ্ট তদারকি প্রয়োজন হয়।
০ রক্তের কোলেস্টেরল কমাবার ওষুধ। মাঝে মাঝে এর ও নজরদারি প্রয়োজন। লিভারের কাজ-কর্ম দেখার জন্য টেস্ট করতে হয় মাঝে মাঝে, এসব ওষুধ দিলে।
০ রক্তচাপ কমাবার জন্য ওষুধ। নিয়মিত রক্তচাপ মাপানো হলে একে নিরাপদ পর্যায়ে রাখা সম্ভব। অনেক সময় নতুন ওষুধ যোগ করা প্রয়োজন হতে পারে।
০ হার্টের শ্রমভার হ্রাসকরার জন্য ওষুধ। অনেক হৃদরোগীকে তাদের হার্টের কাজকর্ম উন্নত করার জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে হয়। নিয়মিত চেকআপ করলে এতে আরও কাজ হয়।
০ বুকে ব্যথা (এনজাইলা) হ্রাস করতে হবে। উপসর্গ প্রশমন করতে হবে।
০ জানতে হবে, ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও জিজ্ঞাসা থাকলে, ত্বরিৎ জেনে নিতে হবে ডাক্তারের কাছ থেকে। পরবর্তী এপয়েন্টেমেন্টের জন্য অপেক্ষা করা যাবেনা।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরী সার্ভিসেস, বারডেম, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, এপ্রিল ১০, ২০১০
Leave a Reply