গরমের এই শুরুর সময়টায় ডায়রিয়া হওয়ার ঘটনা সাধারণত বেশি ঘটতে দেখা যায়। সাধারণত চিকিৎসা চলার পরও ডায়রিয়া না কমলে এবং তা যদি ১৪ দিনের বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তখন তাকে ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া বলে। শিশুদের ক্ষেত্রে সাধারণত রোটা ভাইরাসের আক্রমণে ডায়রিয়া হয়। বড়দের ক্ষেত্রে বাইরের খোলা খাবার খেলে, দূষিত পানি পান করলে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে কলেরা হয়।
ডায়রিয়ার লক্ষণ
২৪ ঘণ্টায় তিনবার বা এর বেশি পানিসহ পাতলা পায়খানা হওয়া।
শরীর দুর্বল হওয়া।
খাওয়ায় রুচি কমে যাওয়া।
ডায়রিয়া শুরুর প্রথম দিকে বমি হয়। পরে অনেক ক্ষেত্রে বমি কমে যায়।
জ্বর এলেও তা খুব একটা তীব্র হয় না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শরীর হালকা গরম থাকে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে যা করবেন
বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নখ কেটে সব সময় ছোট রাখতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে। তারা বাইরে খেলাধুলা করে, ঘরের ছোট ছোট জিনিস হাতে নিয়ে মুখে দেয়। তাই সব সময় হাত পরিষ্কার রাখা উচিত। নিজেদেরও তা করতে হবে। শিশুদের দায়িত্বও নিতে হবে। খাবার সব সময় ঢেকে রাখা উচিত। পরিষ্কার স্থানে খাবার রাখতে হবে। তা না হলে মাছি বা অন্যান্য রোগবাহিত কীটপতঙ্গ খাবারে বসতে পারে। এগুলোর মাধ্যমে রোগ ছড়াতে পারে। শৌচাগার থেকে আসার পর সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে। হাতের কাছে সাবান না থাকলে ছাই দিয়ে হাত ধুতে হবে। তখন বেশি পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নেওয়া উচিত। প্রতিটি বাসাবাড়িতে খাওয়ার স্যালাইন ও জিংক ট্যাবলেট সব সময় রাখা উচিত। জিংক ট্যাবলেট খেলে অনেক সময় শিশুদের বমি হয়। তখন তা খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া উচিত। বমি বন্ধ হলে ১০ দিনের মধ্যে ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করা উচিত। তাতে ভবিষ্যতে ডায়রিয়া হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে।
ওষুধ-পথ্য
ডায়রিয়ার সবচেয়ে বড় ওষুধ খাওয়ার স্যালাইন। বড়দের ক্ষেত্রে চালের স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে। এতে শরীরে খাবারের ঘাটতি পূরণ হয়। ডায়রিয়া হলে যেহেতু শরীরে লবণ-পানির স্বল্পতা হয়, তাই তা পূরণ করাই হবে প্রধান লক্ষ্য। অনেকে মনে করেন, ডায়রিয়া হলে স্বাভাবিক খাবার খাওয়া যাবে না। ব্যাপারটা ঠিক নয়। রোগীর সব সময় শুধু স্যালাইন খেতে ভালো না-ও লাগতে পারে। তাই রোগীর রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী খাবার খেতে দিতে হবে। তবে স্বাভাবিক খাবার একটু নরম করে খাওয়ানো উচিত। খাওয়ার স্যালাইনের পাশাপাশি ডাবের পানি ও যেকোনো ফলের রস খাওয়ানো যায়। ডায়রিয়া হলে চিকিৎসকেরা অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে থাকেন। অল্প আকারে ডায়রিয়া হলে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া উচিত নয়। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায়। বেশি অ্যান্টিবায়োটিক খেলে কোনো রোগ হলে তা আর কাজ করবে না। অবশ্য ডায়রিয়া বেশি হলে তা যেন আর না ছড়ায়, সে জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া যেতে পারে।
আজিথ্রো মাইসিন ৫০০ মিলিগ্রামের দুটো ক্যাপসুল আধা ঘণ্টা পর পর খাওয়ানো যায়। তবে খালি পেটে খাওয়ানো উচিত নয়। বমি হতে পারে। বমির সঙ্গে ওষুধ বেরিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি ট্যাবলেট খাওয়ানো উচিত। অনেক ক্ষেত্রে সিপ্রোসিন দেওয়া হয়। তিন দিন ১২ ঘণ্টা পর পর এই ওষুধ খাওয়ানো হয়ে থাকে। তবে পায়খানার সঙ্গে রক্ত গেলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। সবচেয়ে বড় কথা, নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে সব কাজ করতে হবে।
পানি যেভাবে বিশুদ্ধ করবেন
পানি পান করার আগে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে।
কমপক্ষে ১০ মিনিট পানি ফোটালে তাতে রোগজীবাণু থাকে না।
এরপর পাত্রে পানি কিছুক্ষণ রেখে দিন। যদি কোনো ময়লা থাকে তবে নিচে পড়ে যাবে।
পরে ওপরের অংশের পানি ছেঁকে আলাদা পাত্রে ঢেলে নিতে হবে।
এ ছাড়া বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করা যায়।
বেশির ভাগ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পানি বিশুদ্ধকরণট্যাবলেট বিনা মূল্যে পাওয়া যায়।
এসব ট্যাবলেট পানি সংরক্ষণ ট্যাংকে দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করা যায়।
আজহারুল ইসলাম খান
প্রধান, শর্ট স্টে ইউনিট
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র (আইসিডিডিআরবি)
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৭, ২০১০
Leave a Reply