৮৪ বছর বয়স তাঁর। পুরোনো ডায়াবেটিসের রোগী। একটি ফুসফুস বিকল। তাঁর স্ত্রীর বয়সও তাঁর কাছাকাছি। ভয়ানক এক রক্তনালির রোগ থেকে বেঁচে গেছেন তিনি। ১২ বছর আগে তাঁরা দুজন বুড়ো বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিলেন—হাল ছাড়া যাবে না। চলতেই হবে, এগিয়ে যেতেই হবে। হতে পারি বুড়ো, তাতে কী হয়েছে? মনে তো জোর আছে। বুড়ো বয়সে যেন বালকবীরের বেশে বিশ্ব জয় করা। এই বুড়ো দম্পতির নাম না-ই বা জানলেন। তাঁরা কী করলেন তাই শুনি। তাঁরা যোগ দিলেন ব্যায়ামের ক্লাসে। বাড়ির কাছে একটি পার্ক। সেখানে দুজন হাঁটেন সন্ধ্যাবেলা, প্রতিদিন আধা ঘণ্টা। ধীরে ধীরে তাঁরা নিজেরা শক্তি অর্জন করতে থাকলেন।
ব্যায়াম মানে হাঁটাহাঁটি। তাই বা কম কী? এর আগে দু-তিন সিঁড়ি ওপরে উঠলে হাঁপিয়ে উঠতেন পুরুষ সঙ্গীটি। এখন এক ডজন সিঁড়ি ভাঙলেও তেমন ক্লান্তি লাগে না। স্ত্রী সঙ্গীটির সার্জারির পর তিনি শিখে গেছেন, কী করে বাঁ বাহুটি উঁচু করে তুলতে হয় এবং ভারসাম্যও রক্ষা করতে হয়। এভাবে প্রতিদিন চর্চা করলে বেশ কাজ হয়। প্রতি শুক্রবার দুজনই যোগব্যায়াম করেন, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার তাঁরা ৪৫ মিনিট ব্যায়াম করেন ব্যায়ামের ক্লাসে। অন্যান্য দিন তাঁরা হাঁটেন পার্কে। এভাবে করতে করতে অনেক শান্তি-স্বস্তি এল তাঁদের শরীরে। শ্বাসকষ্টও অনেক কমে গেল। রক্তের শর্করায় সুস্থিতি এল। ওষুধের চাহিদা কমে এল। ডায়াবেটিস এখন বেশ নিয়ন্ত্রণে। ভদ্রলোক বললেন, ‘আমি এখন সারা দিন কাজ করতে পারি। যখনই চাই কাজ করতে পারি। ক্লান্তি আসে না। তরুণ মনে হয় নিজেকে।’
৬০ যখন বয়স, তখন পার্কে ৩০ মিনিট জোরে হাঁটলে ভালোই লাগে। মজা লাগে এমন কিছু দিয়ে শুরু হোক না চর্চা। ব্যায়ামটা যদি ভালো না লাগে, করতে যদি মজা না লাগে, তাহলে এতে লেগে থাকা যাবে না। তবে কেবল ব্যায়াম করলেই যে বয়স্ক লোকজন স্বাস্থ্যবান থাকবেন তা নয়। অভ্যাসের ব্যাপার আছে।
যিনি বছরের পর বছর ধূমপান করে এসেছেন, তিনি এই কু-অভ্যাস ছেড়ে দেওয়ার মাসখানেক পরই বুঝতে পারবেন এর সুফল। ধূমপানে ফুসফুসের ধ্বংসযজ্ঞ ঠেকানো যাবে না। কম ক্যালোরি গ্রহণ করা, প্রচুর ফল ও সবজি আহার, ধীরে ধীরে খাওয়ার কথা বলেন নিউইয়র্কের আন্তর্জাতিক লংজিবিটি সেন্টারের সভাপতি রবার্ট বাটলার। আরও চাই ভিটামিন-ডি, ক্যালসিয়াম।
আরও যা পরামর্শ
একা থাকা উচিত নয়। যেকোনো বয়সে অন্যের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা, বন্ধুত্ব, আড্ডা, হই-হুল্লোড় এসব ভালো। সুস্থ থাকার উপায়। মেয়েদের বন্ধুবান্ধব ও সামাজিক বন্ধন পুরুষদের চেয়ে বেশি। এ জন্য তাদের আয়ুও বেশি। তাই বন্ধুরা, মন খুলে কথা বলুন, নিজেকে ছেড়ে দিন, হালকা হোন, গোমড়া মুখ কেন? হাসুন। অন্তরঙ্গ হোন বন্ধুদের সঙ্গে। কথা বলুন, আড্ডা দিন। ভালো থাকবেন। পরাজিত হবে রোগ।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস বারডেম হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, এপ্রিল ০৭, ২০১০
Leave a Reply