যাঁদের চোখের পাওয়ার আছে কিন্তু চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স পরতে চান না, তাঁদের জন্য আধুনিক একটি চিকিৎসাব্যবস্থার নাম ল্যাসিক সার্জারি। ল্যাসিক ইংরেজি Laser Assisted In-Situ Keratomileusis-এর সংক্ষিপ্ত নাম। এক্সাইমার লেজার রশ্মির সাহায্যে চোখের কর্নিয়ায় আকৃতি বা গঠনের পরিবর্তন করে সম্পূর্ণ চোখের পাওয়ারের পরিবর্তন করা হয়। ল্যাসিক-পদ্ধতির অপারেশন এর প্রকারভেদের মাধ্যমে মাইনাস বা প্লাস পাওয়ারকে পরিবর্তন করে বিনা পাওয়ার বা জিরো পাওয়ার করা হয়।
কাদের চোখে ল্যাসিক করা যায়?
নিকট দৃষ্টি বা মায়োপিয়া (-২.০০ থেকে -২০.০০ ডায়াপ্টার পর্যন্ত)
দূরদৃষ্টি বা হাইপারমেট্রপিয়া (+২.০০ থেকে +৮.০০ ডায়াপ্টার পর্যন্ত)
অ্যাসটিগম্যাটিজম (১.০০ ডায়াপ্টার থেকে ৭ ডায়াপ্টার পর্যন্ত)
সাধারণত ১৮ থেকে ২১ বছর বয়সের পর।
ল্যাসিক অপারেশন
চোখের ড্রপ বা ফোঁটা ওষুধ দিয়ে কর্নিয়াকে অবশ করা হয় এবং এক্সাইমার লেজার রশ্মির সাহায্যে এর আকৃতির পরিবর্তন করা হয়।
রোগীকে লেজার দেওয়ার সময় অবশ করা হয় বলে কোনো ব্যথা পান না।
এই অপারেশন একটি মাইক্রোসার্জারি। সুতরাং রোগীকে টেবিলে শোয়ানো হয় এবং চোখের ওপর অপারেশন মাইক্রোসকোপ এনে ফোকাস করা হয়।
মাইক্রোকেরাটোমের সাহায্যে খুব পাতলা কর্নিয়ার একটি লেয়ার তৈরি করে তা উল্টে রাখা হয় এবং চোখের কর্নিয়ার ওপর ১৫ থেকে ৬০ সেকেন্ড লেজার দেওয়া হয়। কতটুকু লেজার প্রয়োজন হবে তা ওই চোখের পাওয়ার পরিবর্তনের ওপর নির্ভর করে—কম্পিউটারের সাহায্যে হিসাব করেই দেওয়া হয়। এরপর কর্নিয়ার ওই পাতলা লেয়ারটি আগের স্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়।
লেজার দেওয়ার পর রোগী ১৫ থেকে ৩০ মিনিট হাসপাতালে অবস্থান করে বাড়ি চলে যেতে পারেন।
ল্যাসিকের জটিলতা
ল্যাসিক সার্জারি যথেষ্ট নিরাপদ একটি ব্যবস্থা। এই অপারেশনের ফলাফল ৯৯ শতাংশই সফল। যেহেতু এটি একটি অপারেশন, সেহেতু কারও কারও ক্ষেত্রে সামান্য অপারেশন জটিলতা হতে পারে। অভিজ্ঞ ল্যাসিক সার্জনের হাতে এই জটিলতাও খুব কম। অনেক রোগী অপারেশনের সময় ও পরে দু-তিন ঘণ্টা চোখ সামান্য ব্যথা ও চাপ অনুভব করেন। সাধারণত এক দিন পরই এসব উপসর্গ ভালো হয়ে যায়। চোখে অন্ধত্ব হয়ে যাওয়ার মতো জটিলতা এই সার্জারিতে হয় না বললেই চলে।
ল্যাসিকের কত দিন পর সম্পূর্ণ ভালো দেখা যায়?
ল্যাসিকের পরপরই রোগী বেশ ভালো দেখতে থাকেন। তবে সম্পূর্ণ ভালো হতে অনেকের প্রায় এক মাস সময় লাগতে পারে। অপারেশনের পর ল্যাসিক বিশেষজ্ঞ বেশ কয়েকবার রোগীকে পুনরায় পরীক্ষা করেন এবং প্রয়োজনে ওষুধ ও সামান্য পাওয়ারের চশমা বা কনট্যাক্ট লেন্স দিতে পারেন।
কাদের চোখে ল্যাসিক করা উচিত নয়
সাধারণত ১৮ বছর বয়সের আগে। কারণ এই বয়সের আগে চোখের পাওয়ার দ্রুত পরিবর্তন হতে পারে।
যাঁদের চোখের পাওয়ার প্রতিবছরই অতিমাত্রায় পরিবর্তন হচ্ছে বা স্থিতিশীল হচ্ছে না।
গর্ভবতী মহিলা (লেজার রশ্মি দ্বারা ভ্রূণের ক্ষতি এড়ানোর জন্য)।
চোখের কোনো অসুখ যেমন—গ্লুকোমা, ছানি এবং চোখে ভাইরাসজনিত রোগ থাকলে ল্যাসিক করা উচিত নয়।
শারীরিক কিছু রোগ যেমন—অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, এসএলই ইত্যাদি থাকলে ল্যাসিক করা উচিত নয়।
এম নজরুল ইসলাম
অধ্যাপক, চক্ষু বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল
শাহবাগ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ২৪, ২০১০
Leave a Reply