সব বয়সের লোকই জীবনের কোন না কোন সময়ে হাঁটুর ব্যথায় ভোগে। হাঁটু এমন একটি জটিল এবং গুরুত্বপূর্ন জোড়া যা বসতে, দাড়াঁতে, হাঁটতে, দৌড়াতে, উপরে উঠতে এবং নামতে একান্ত প্রয়োজন। শরীরের বিভিন্ন জোড়ায় বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্যথা হয় । হাঁটু শরীরের বড় একটি জোড়া এবং ওজন বহনকারী বিধায় হাঁটুতে বিভিন্ন সমস্যার কারণে ব্যথা বেশী হয় । গঠনগতভাবে হাঁটু ফিমার (উরুর হাড়), টিবিয়া (লেগের হাড়) ও প্যাটেলা (নী ক্যাপ) এই তিনটি হাড় এবং বিভিন্ন ধরনের লিগামেন্ট সমম্বয়ে গঠিত । জোড়ার মধ্যে হাড়ের প্রান্তে থাকা মসৃণ কার্টিলেজ বা তরুনাস্থি (মেনিসকাস) জোড়ার বিভিন্ন মুভমেন্টে সহায়তা করে এবং লিগামেন্ট জোড়ার স্ট্যাবিলিটি রক্ষা করে । কিছু সমস্যার ব্যথা হঠাৎ করে শুরু হয় ; আবার কিছু ব্যথা আস্তে আস্তে শুরু হয় এবং দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে । ব্যথার উৎপত্তির স্থান বিবেচনা করলে – অধিকাংশ ব্যথা হাঁটুর লোকাল বা সহানীয় ব্যথা এবং কিছু ব্যথা রেফার্ড বা কোমর এবং কটির জয়েন্ট থেকে আসে ।
হাঁটু ব্যথার কারনসমূহ :
১। শতকরা ৬০ ভাগই বংশানুক্রমিক। ২। আর্টিকুলার সারফেস (তরুনাস্থি) ইনজুরী। ৩। মেনিসকাস (দুই হাড়ের মাঝ খানে থাকে) ইনজুরী। ৪। লিগ্যামেন্ট ইনষ্ট্যাবিলিটি বা ইনজুরী। ৫। জোড়ার হাড় ভাঙলে ও জোড়া ডিসপ্লেসমেন্ট হলে। ৬। হিপ বা হাঁটুর জোড়ার বিকৃত অবস্থা। ৭। ইনজুরীর কারণে খেলোয়ারদের বা অন্যদের পরবর্তী জীবনে অসটিওআর্থ্রাইটিস হয়। ৮। ডায়াবেটিস, থাইরয়েড এবং এক্রোমেগালী রোগীরা অসটিওআর্থ্রাইটিস রোগে ভোগে। ৯। রিউমাটয়েড, গাউটি, রিএকটিক, ইনফেকটিভ ও অসটিওআর্থ্রাইটি কারনে ব্যথা হয়। ১০। বার্সার প্রদাহ (বর্সাইটিস) – হাঁটুর চারিদিকে অনেক বার্সা থাকে। ১১। টেনডিনাইটিস। ১২ । সাইনোভাইটিস, সাইনোভিয়াল কনড্রোমাটোসিস ও সাইনোভিয়াল টিউমার। ১৩। হাড় ও তরুনাস্থির ক্ষয় (ওসটিওকনড্রাইটিস ডেসিকেন্স)। ১৪ । প্যাটলার তরুনাস্থি নরম ও ক্ষয় (কনড্রোমলাসিয়া প্যাটলার প্যাটলা)। ১৫। টিবিয়াল টিউবেরোসিটি সমস্যা (ওসগুডস্ল্যাটার ডিজিজ)।
উপসর্গ: উপসর্গের ধরন নির্ভর করে প্রধানত ইহার কারণ সমুহের উপর । প্রধান লক্ষন সমূহ নিম্নরূপ :
১। প্রধান অসুবিধা ব্যথা। ২। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে অসুবিধা হয়। ৩। বেশীক্ষণ বসে থাকলে হাঁটু শক্ত হয়ে যায় এবং সোজা করতে কষ্ট হয়। ৪। নামাজ পড়তে অসুবিধা হয়। ৫। টয়লেটে বসলে উঠতে অসুবিধা হয়। ৬। মাঝে মাঝে হাঁটু ফুলে যায়। ৭। জোড়ায় শব্দ হয়, যাকে ক্রেপিটাস বলে । ৮। মাঝে মাঝে জয়েন্ট আটকে যায় বা সোজা করা যায় না। ৯। পেশী শুকিয়ে যায়। ১০। পেশী দুর্বলতা ও লিগ্যামেন্ট নষ্টের জন্য জয়েন্ট আনস্ট্যাবল হয়। ১১। অসমতল জায়গায় হাটলে মনে হবে জ্োড়া ঘুরে যায় বা ছুটে যাবে।
করনীয় বা চিকিৎসা: হাঁটুর নিরাময় নির্ভর করে এর ব্যথার কারণ সমূহের উপর। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হাঁটুর সমস্যা সমূহ কনজারভেটিভ বা মেডিকেল চিকিৎসায় ভালো হয়। তবে চিকিৎসা শুরুর আগে রোগীকে ভালোভাবে শারীরিক পরীক্ষা ও প্রয়োজনীয ল্যাবরেটরী পরীক্ষা করানো একান- প্রয়োজন।
ল্যাবরেটরী পরীক্ষা: ১। রক্ত-সি বি সি, আর এ, আর বি এস, সি আর পি, সেরাম ইউরিক এসিড ও আই সি টি ফর টি বি।
২। এক্ম-রে। ৩। এম এর আই। ৪। সি টি স্ক্যান। ৫। জয়েন্ট ফ্লুউড – ব্যাকটেরোলিজিক্যাল ও ব্যায়োক্যামিক্যাল পরীক্ষা। ৬। সাইনোভিয়াল বায়োপসি।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা বা নিরাময় :
১। প্রয়োজনীয় বিশ্রাম। ২। ব্যথা নিরামযের জন্য এনালজেসিক ওষুধ সেবন। ৩। এন্টিবায়োটিক থেরাপি। ৪। পেশীর স্ট্রেসিং, নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। ৫। ফিজিক্যাল থেরাপি – এস ডব্লিউ ডি ও ইউ এস টি। ৬। ইন্ট্রাআর্টিকুলার স্টেরয়েড ইনজেকশন। ৭ । নি ক্যাপ বা ইলাষ্টিক সাপোর্ট ব্যবহার করলে জোড়ায় ভারসাম্য রক্ষা হবে। ৮ । গরম সেক ব্যবহার করলে ব্যথা কিছু কমে আসবে।
অপারেশন: প্রয়োজনীয় অপারেশন বা সার্জিকেল চিকিৎসা নির্ভর করে সমস্যার কারণ সমূহের উপর:
১। আর্থ্রোস্কোপি : ছোট ছিদ্রের মাধ্যমে আর্থ্রোস্কোপ জোড়ায় প্রবেশ করিয়ে (ক)ওসটিওফাইটস ও ইনফেকটেড সাইনোভিয়াম রিমোভ করা হয় , (খ) সাইনোভিয়াল বায়োপসি নেওয়া হয়, (গ) মেনিসকাস রিপেয়ার বা রিমোভ করা হয় এবং (ঘ) সর্বাধুনিক পদ্বতিতে নতুন লিগামেন্ট তৈরী করা হয়। ২। হাড় ভাঙার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। ৩। রিএলাইনমেন্ট ওসটিওটোমি।
৪। জয়েন্ট রিপ্লেসমেন্ট । ৫। জয়েন্ট ফিউশন (আর্থোডেসিস)
ডাঃ জি.এম. জাহাঙ্গীর হোসেন
কনসালটেন্ট-হাড়, জোড়া, ট্রমা ও আর্থ্রোস্কোপিক সার্জরী
ডিজি ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, মিরপুর,ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, মার্চ ২০, ২০১০
পৃথা
আমার বয়স ১৯ বছর।গত বছরের শেষ দিকে ভর্তি পরীক্ষার সময় ট্রেন থেকে লাফ দিয়ে নামতে গিয়ে বাম পায়ের হাটুর joint এ বেশ ব্যাথা পেয়েছিলাম।তার পর থেকে কোথাও পা ভাঁজ করে ২-৩ মিনিট বসলে বা টয়লেট থেকে ফিরে আসার সময় উঠে ঠিকমত দাড়াতে পারিনা,তখন বাম পা বসে থাকা অবস্থায় যেমন ভাঁজ করা ছিল,ঐ ভাবেই ধরে রাখতে হয় কমপক্ষে ২-৩ মিনিট।তারপর ও ঐ পা পুরোপুরি সোজা করা যায়না।তখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাটতে হয় আরও ৩-৪ মিনিট।এরপর পা সোজা হয়।কিভাবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?জানালে খুবই উপকৃত হবো।
Bangla Health
ডাক্তার দেখিয়ে নিন। ফিজিক্যাল থেরাপির দরকার হতে পারে। এরা পরীক্ষা করে দরকার হলে পরে কিছু বিশেষ ধরনের ব্যায়াম শিখিয়ে দিতে পারেন।
রাজিব
আমার বয়স ২৩ ।হালকা পাতলা ওজন ৫০KG ।তিন দিন আগে ছোট একটা বস্তু সরাতে গিয়ে মাজায় ছোট একটা টান লাগে তার পরে ব্যাথা ,খুব একটা তীর্ব না হালকা ।প্রথমে MOOV লাগায় পরের দুই দিন প্যারাসিটামল খাই,ব্যাথা আগের চেয়ে আরেকটু কম কিন্তু উচু নিচু একাত ওকাত বসার পরে ওঠলে ব্যাথা করে ।আমি কি ঔষুদ খেলে উপকার পাবো তারাতারী জানালে খুবই উপকার হয় খুবই তারাতারী please ।
Bangla Health
আপনাকে ডাক্তার দেখানো উচিত হবে আগে।
maruf
amar age 34.amar hatuta kono problem nai but feture a hatuta batha na korea tar jonno ki korbo?kalboD khabo.
Bangla Health
নিয়মিত ক্যালসিয়াম সম্বৃদ্ধ খাবার খেয়ে যেতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে।
maruf
calcium basi kala ki kono problem hobea?
Bangla Health
মাত্রাতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো নয়।
jui
চ্রেডমিলে হাটলে কি হাটু ব্যাথা হয়?
Bangla Health
ব্যথা হওয়ার কথা নয়। তবে হলে একটু নরম মাটিতে, বা নরম ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটবেন।