মা হওয়া কি চাট্টিখানি কথা। বাচ্চার নাওয়া-খাওয়া, ঘুম, চিকিৎসা, পোশাক-আশাক সব দিকেই যে মাকে নজর দিতে হয়। দশ হাতে দশ দিক সামলানোর মতো ব্যাপার। তবে নতুন মা-বাবা তাঁদের সন্তানের জন্য অনেকের কাছ থেকে বেশ কিছু পোশাক উপহার হিসেবে পেয়ে যান। এর কোনো কোনোটি মনোহর হলেও বদলিয়ে নিতে হয়। একেক বয়সের শিশুর পোশাক একেক ধরনের। ফলে মাকে বাচ্চার বয়সের উপযোগী কাপড়চোপড় সংগ্রহের দিকে মনোযোগী হতে দেখা যায়। আবার গরম, শীত, বর্ষা ঋতুভেদেও সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট রকমের পোশাক পরানোর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
ডায়াপারের ব্যবহার
অধুনা সমাজে এর ব্যবহার বেড়েছে। শিশুর বয়স আড়াই বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত ডায়াপার পরানোর প্রচলন রয়েছে। ডিসপোজেবল ও কটন দুই ধরনের ডায়াপার শিশুকে পরানো যেতে পারে। আধুনিক মা-বাবা এ রকম পোশাকে নানা রকম সুবিধা দেখতে পান। বিশেষত, বাচ্চাকে নিয়ে কোথাও বেরোনোর সময়। ডায়াপারসম্পর্কিত কিছু তথ্য: বেশি দামি ব্র্যান্ডের দরকার নেই। খেয়াল রাখতে হবে ভেতরের প্লাস্টিক আবরণ যেন শিশুর ত্বক স্পর্শ না করে। অনর্থক বা বেশি ডায়াপার ব্যবহারে শিশুর মলমূত্র একসঙ্গে মিলে ডায়াপার র্যাশ তৈরি হয়।
পরিবেশবাদীরা ইদানীং ডায়াপার ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে সোচ্চার হচ্ছেন। অনেক ডায়াপার আছে, যেসব প্রাকৃতিকভাবে ধ্বংস হয় না। এতে জন্মানো ভাইরাসজীবাণু যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হলে বা উন্মুক্তভাবে ছড়িয়ে দেওয়া হলে পানি ও বায়ুদূষণ ঘটায়, যা মারাত্মক, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি।
ইনফ্যান্ট বয়সের পোশাক পরিচ্ছদ
এ বয়সে দ্রুত বাড়তে থাকে শিশু। তাই বেশি দামি পোশাক কিনে রাখা আর্থিক অপচয়। এ বয়সের শিশুর পোশাক নির্বাচনে কিছু বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে:
শীতে বা বর্ষায় শিশুকে উষ্ণ রাখতে হলে হাত বা পায়ের মোজা পরানো যায়। তবে সেই সঙ্গে মাথায় হ্যাট বা শীতটুপি পরানোর কথা মনে রাখতে হবে। কেননা অল্প বয়সী শিশুর মাথা শিশুদেহের সারফেস এরিয়া হিসেবে এক বড় অংশ। সুতরাং তা আবৃত রাখতে হয়। শিশুর জন্য সুতির কাপড় পরিধান করানোই উত্তম। বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করে কাপড়চোপড় যেন না ধোয়া হয়। তাতে শিশুর সংবেদনশীল ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
শিশুকে বেশি বেশি কাপড়চোপড়ে বলা যায় একগাদা পোশাক-আশাক পরিয়ে অনেক মা-বাবা ঠান্ডা না লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এটি অনুচিত। এতে করে শিশু অতিরিক্ত গরম আবহাওয়ায় ঘেমে একাকার হয়ে যায়। ডিহাইড্রেশন ফিভারে পতিত হয়। এ বিষয়ে একটি ‘রুল অব থাম্ব’ আছে। তা হলো, আপনি শরীরে যে কয়েক প্রস্থের পোশাক পরে বের হচ্ছেন, যেমন মার্কেটে যাচ্ছেন, বাচ্চাকেও সে কয়েক প্রস্থের পোশাক পরিয়ে বেড়াতে নিয়ে যান।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশু শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক
শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১৭, ২০১০
Leave a Reply