আপনি জানেন কি, আপনার দুটো কিডনি প্রতিদিন প্রায় ১৭০ লিটার রক্ত পরিশোধিত করে আপনার শরীরকে সুস্থ রাখে?
দুটো কিডনিতে প্রায় ২০-২৫ লাখ ছাঁকনি রয়েছে, যা অনবরত আপনার রক্তকে পরিশোধিত করে যাচ্ছে।
কিডনি আপনার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, রক্তস্বল্পতা দূর করতে সাহায্য করে এবং আপনার অস্থিগুলো শক্তিশালী করে থাকে।
শরীর সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখার জন্য একটি কিডনিই যথেষ্ট।
কিডনির প্রধান রোগ নেফ্রাইটিস বা নেফ্রোটিক সিনড্রোম, যা কিডনির ছাঁকনি বা ফিল্টার মেমব্রেনকে ক্ষতবিক্ষত করে। এর কারণে শরীর থেকে অত্যাবশ্যক প্রোটিন বেরিয়ে যায়।
প্রস্রাব প্রদাহ কিডনির একটি সাধারণ রোগ হলেও শিশুদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হতে পারে।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ কিডনি রোগ নয়, তবু কিডনিকে আক্রান্ত করে কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে।
যেসব রোগ কিডনিকে আক্রান্ত করে কিডনির কার্যকারিতা বিনষ্ট করে বা কিডনি ফেইলুর হয়: ১. নেফ্রাইটিস ২. ডায়াবেটিস ও ৩. উচ্চ রক্তচাপ। সুতরাং প্রাথমিক পর্যায় থেকে এসব রোগের চিকিত্সায় যত্নবান হোন।
দুটো কিডনি ৯০ শতাংশ অকেজো হওয়ার পরই কেবল ডায়ালাইসিস বা কিডনি সংযোজনের মতো চিকিত্সার প্রয়োজন হয়।
জীবিত অবস্থায় আপনি আপনার একটি কিডনি কেবল মা-বাবা, ভাইবোন, ছেলেমেয়েকে নির্ভয়ে দান করতে পারেন। তাঁদের ভেতর রক্তের গ্রুপ বা টিস্যু টাইপ না মিললে তখন আপন চাচা, মামা, ফুফু, খালা বা স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে কিডনি দান করতে পারেন।
মৃত ব্যক্তি (ব্রেনডেথ-ভেন্টিলেটরে থাকা অবস্থায়) আত্মীয়-অনাত্মীয় সবাইকে কিডনি দিতে পারে।
৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ডায়াবেটিস রোগী কিডনি রোগে ভোগে থাকে।
উচ্চ রক্তচাপের কারণে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ রোগীর কিডনি অকেজো হতে পারে।
ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখুন এবং কিডনি রোগ থেকে বাঁচুন।
শুধু রক্তচাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা এবং রক্তের ক্রিয়েটিনিন ও সুগার পরীক্ষা করেই জানা যায় কিডনি রোগ আছে কি না।
কিডনি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনই হলো বেঁচে থাকার একমাত্র উপায়।
শিশুদের টনসিলাইটিস, প্রস্রাবে প্রদাহ ও চর্মরোগের তাত্ক্ষণিক চিকিৎসা করুন।
কিডনি রোগ ছোঁয়াচে নয়, তবে বংশানুক্রমিক হতে পারে।
আপনার বয়স যদি ৪০ বছরের ওপরে হয়, আপনি যদি ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকেন অথবা বংশে যদি কিডনি রোগ থাকে, তবে অবশ্যই আপনার রক্ত ও প্রস্রাব পরীক্ষা করে জেনে নিন, আপনার কিডনি রোগ আছে কি না।
কিডনি নষ্ট হলে ডায়ালাইসিস করে চিকিৎসা করার সামর্থ্য বাংলাদেশে ১০ শতাংশেরও নেই। কিডনি রোগ সম্পর্কে জানুন, সতর্ক থাকুন এবং প্রতিরোধ করুন।
সচেতন হলে স্বল্প ব্যয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধ করা সম্ভব।
বর্তমান ধারায় কিডনি রোগী বৃদ্ধি পেলে ২০২০ সালে বাংলাদেশে তিন কোটি ৮০ লাখ মানুষ ক্রনিক কিডনি রোগে আক্রান্ত হবে।
বাংলাদেশে বর্তমানে দুই কোটি লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত।
বাংলাদেশে প্রায় ৪০ হাজার রোগী ধীরগতিতে কিডনি অকেজো হয়ে প্রতিবছর অকালে মৃত্যুবরণ করে।
অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথানাশক ওষুধের ব্যবহার ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা অনেক রোগীকে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে।
অতিরিক্ত ডায়রিয়া, বমি ও রক্তক্ষরণে আকস্মিক কিডনি বিকল হওয়ার প্রধান কারণ।
মেয়েদের গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ পরবর্তী পর্যায়ে কিডনি রোগের কারণ হতে পারে।
নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে কিডনি বিকলের কারণ।
অধ্যাপক হারুন আর রশিদ
কিডনি সভাপতি, কিডনি ফাউন্ডেশন ও
বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, মার্চ ১০, ২০১০
Sabuj Ahmed
জন সচেতনতামুলক লিখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।