মানুষের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ চোখ। চোখ খুব নাজুক। এর বেশির ভাগ অংশ রক্তনালিবিহীন। তাই কোনো রোগে স্বল্প সময়ে চোখের তথা দৃষ্টির ক্ষতি হয় বেশি। এ জন্য দ্রুত রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সা জরুরি।
বাংলাদেশে চক্ষু চিকিৎসাসেবা জনগণের দোরগোড়ায় নেওয়ার কথা বললে প্রথমেই আসবে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর প্রসঙ্গ, যারা গ্রামে থাকে।
বাংলাদেশে ক্ষীণ বা স্বল্পদৃষ্টির মূল কারণ ছানি, রিফ্রাকটিভ, গ্লুকোমা, ডায়াবেটিস ও বয়সজনিত রেটিনার ক্ষতি, আঘাত, ভিটামিন ‘এ’-এর অভাব ইত্যাদি।
সচেতনতা, শিক্ষার অভাব, দারিদ্র্য, সেই সঙ্গে দূরত্বে চোখের চিকিৎসকের অবস্থান ও টাকার অভাবে গ্রামের রোগীদের চিকিৎসায় বিলম্ব হয়। ফলে চোখের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।
বাংলাদেশে বর্তমানে ৯০০ জন চোখের চিকিৎসকের অর্ধেক থাকেন শহরে। জেলা পর্যায় থেকে হিসাব করলে গড়ে ১০-১৫ লাখ লোকের জন্য রয়েছেন একজন চিকিৎসক। উপজেলা বা গ্রামপর্যায়ে কোনো চোখের চিকিৎসক নেই বললেই চলে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে প্রতিবছর বিভিন্ন ক্যাটাগরির ১০-১১ জন চোখের চিকিৎসক বের হচ্ছেন। পাসের হার কমের জন্য কে দায়ী, সে আলোচনায় যাব না। তবে বর্তমান অবস্থা এমন, যত সংখ্যক ভর্তির কোটা আছে, আবেদনপত্র জমা পড়ে তার চেয়ে কম।
এটা সহজেই বোঝা যায়, আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে উপজেলা পর্যায়ে স্থায়ীভাবে চোখের কোনো চিকিৎসক পাওয়া সম্ভব নয়। তবে সেখানে আছেন তিন-পাঁচজন এমবিবিএস চিকিৎসক। প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন হাজার চিকিৎসক বের হচ্ছেন। এর একটি অংশ বিশেষত, যাঁরা সরকারি চাকরি নেবেন, আবশ্যিকভাবে তাঁদের উপজেলায় একটা নির্দিষ্ট সময় থাকতে হবে। বর্তমান বাস্তবতা হলো, চোখের সমস্যা নিয়ে বিলম্বে হলেও রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। এমবিবিএস চিকিৎসকেরা চোখের চিকিত্সা এড়িয়ে যান। উপযোগী পাঠ্যক্রম ও প্রশিক্ষণের অভাবে পর্যাপ্ত কর্মদক্ষতা অর্জন না করার ফলে তাঁদের মধ্যে একধরনের ভীতি কাজ করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এ উপমহাদেশে পরিচালিত গবেষণাপত্রে একই উপাত্ত তুলে ধরা হয়েছে। পাঠ্যক্রম রচিত হবে সেই অঞ্চলের প্রয়োজনের ওপর ভিত্তি করে। পশ্চিমা দেশ আর আমাদের প্রয়োজন ভিন্ন। ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অব অফ্থালমোলজি এ বিষয়টির ওপর খুবই গুরুত্ব দেয়। এ মুহূর্তে গ্রামাঞ্চলে চোখের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বর্তমানে উপজেলার এমবিবিএস চিকিৎসকদের জেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। আর পঞ্চম বর্ষের ছাত্রদের চোখবিষয়ে পাঠ্যক্রমে সামান্য সংযোজন ও পুনর্বিন্যাস করে সুনির্দিষ্ট কিছু রোগের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ, চশমার (চাল্লিসা ও সাধারণ মায়োপিয়া) ব্যবস্থাপত্রসহ কিছু রোগের সম্পূর্ণ চিকিৎসা দেওয়া ও প্রয়োজনে সঠিক সময়ে রেফার্ড করতে পারার জন্য গড়ে তোলা সম্ভব। সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইউনিয়ন উপকেন্দ্রে স্বাস্থ্যকর্মীদেরও প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এতে গ্রামের বঞ্চিত মানুষ কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। এ অবস্থায় হাতুড়ে চোখের চিকিৎসক তৈরি নিরুৎসাহিত হবে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চোখের বহির্বিভাগ খুলে সচেতনতা বাড়ানো ও চোখের প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়াও প্রয়োজন।
ডা. এ কে খান
চোখের পাওয়ার-বিভ্রান্তি সহযোগী অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান (চক্ষু)
গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৩, ২০১০
Leave a Reply