ছোটরা কি ব্যায়াম করবে? শারীরিক সুস্থতার জন্য শিশুরও ব্যায়ামের প্রয়োজন আছে বৈকি। শিশু খেলছে, দৌড়াচ্ছে, নাচছে—এ সবই তার শরীরচর্চা।
শিশুবয়সে ব্যায়ামের উপকারিতা
নিয়মিত শরীরচর্চায় সবাই উপকৃত হয়। যেসব শিশু দৈহিক কাজে নিয়োজিত থাকে, তারা সুফল পায় বিভিন্নভাবে:
মাংসপেশি ও অস্থি দৃঢ়তর হয়।
স্থূল মেদবহুল শরীরের পরিবর্তে সুস্থ মেদহীন দেহ লাভ করে।
অতিরিক্ত ওজনজনিত কুফল থেকে রেহাই পায়।
শিশুবয়সে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিচুতে থেকে যায়।
জীবন সম্পর্কে সুস্থ-সুন্দর ভাবনার উন্মেষ ঘটে।
স্বাস্থ্যকর ঘুম হয়, শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে সহজে ভেঙে পড়ে না।
শিশুকে মুক্ত বাতাসে নিয়মিত ব্যায়াম করার উত্সাহ দেওয়া হোক। শরীরচর্চাকালে শিশুর হূত্স্পন্দন বাড়ে, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হয়। হূদ্যন্ত্র বেশিবার অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত দেহের প্রয়োজনীয় প্রতিটি কোষে পরিসঞ্চালন করে।
কোন ধরনের শরীরচর্চা
খেলাধুলার আনন্দে শিশু বেশ কিছু ব্যায়াম সেরে নিতে পারে: হাডুডু, ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, বাস্কেটবল, সাইকেল, টেনিস, সাঁতার, জগিং, হাঁটা, দৌড়ানো।
শিশুস্বাস্থ্য বিষয়ের বিজ্ঞানীদের পরামর্শ—দুই বছরের নিচের শিশু যেন একদম টেলিভিশন না দেখে। আর দুই বছরের বেশি বয়সী শিশু এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য নিয়ন্ত্রিতভাবে টেলিভিশন দেখতে পারে। তথ্যে বেরিয়ে এসেছে, গড়ে শিশুরা প্রতিদিন তিন ঘণ্টার মতো টেলিভিশন দেখে সময় যাপন করে। আর তার সঙ্গে অন্যান্য স্ক্রিন মিডিয়া যুক্ত হলে (যেমন টিভি, ভিডিও, ডিভিডি, কম্পিউটার গেমস, ভিডিও গেমস) সময়কাল দাঁড়াচ্ছে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো। এতে করে শিশু স্থূল হচ্ছে দেহ ও মনে। খুলছে না তার দেহসৌষ্ঠব, বন্দিত্বে আটকে যাচ্ছে শৈশবের সৃষ্টিশীল দিনগুলো।
দৈনিক কতক্ষণ ব্যায়াম করতে হবে
মা-বাবাকে তাঁর শিশুসন্তানের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় সন্তানের নিয়মিত শরীরচর্চার ওপর মনোযোগী হতে হবে। দুই বছরের বেশি বয়সী শিশুরা সপ্তাহের প্রতিটি দিন (সম্ভব হলে) কমপক্ষে এক ঘণ্টা মাঝারি থেকে অতিরিক্ত মাত্রার ব্যায়াম করবে।
এক বছরের কম বয়স (ইনফ্যান্ট) শরীরের নড়াচড়া কার্যক্রম তার মাংসপেশি চালনায় উন্নতি সাধন করে।
টোডলারস বয়সে দৈনিক নিদেনপক্ষে দেড় ঘণ্টার ব্যায়াম হোক। প্রিম্বুল বয়সে প্রতিদিন দুই ঘণ্টার জন্য, স্কুলবয়স কমপক্ষে এক ঘণ্টা বা বেশি। ঘুমানো ছাড়া ইনফ্যান্ট বয়সী ও ছোট শিশু দীর্ঘ সময়ের জন্য নিস্তেজ থাকবে কেন? অন্তত পুরো এক ঘণ্টা বিশ্রামে থাকার পর সচল কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া উচিত। পা বাড়াবে। এটি দেখবে, সেটি ধরবে। আর স্কুলবয়সে শিশু একনাগাড়ে দুই ঘণ্টার বেশি সময় ধরে যেন অলস বসে না থাকে, তাও দেখা দরকার।
শিশুকে নিয়মিত শরীরচর্চায় অনুপ্রাণিত করার টিপস
নিজেও উদাহরণ তৈরি করুন। আপনার লাইফস্টাইল শিশুকে উদ্দীপ্ত করবে।
শিশুকে তার বয়স অনুযায়ী নানা শ্রমের কাজে নিয়োজিত করুন।
সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করুক। লিফটের আরাম-অলসতা কিছুক্ষণ নাহয় বাদ যাক।
প্রতিদিনের ব্যায়াম এক রকম না করে তাকে নতুন নতুন জায়গায় হাঁটার কর্মসূচিতে যুক্ত করা যায়।
প্রণব কুমার চৌধুরী
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৬, ২০১০
Leave a Reply