কিছু চমকপ্রদ স্বাস্থ্য-সংবাদ এসেছে ২০০৯ সালে।
বন্ধ্যাত্ব বিমোচনের চেষ্টা—এমন হলে কী হয়?
১.
নাদিয়া সুলেমন। বিবাহিত জীবন নয়, কোনো কাজেও নিয়োজিত নন—এমন একজন মা, যিনি ইতিমধ্যে ছয় সন্তানের জননী; তিনি জন্ম দিলেন একসঙ্গে আটটি সন্তানের। অক্টুপ্লেটের। এটি কি ঠিক ছিল? ন্যায়নীতির ভিত্তিতে সঠিক ছিল? এমন প্রশ্ন হতেই পারে। ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞরা ক্যালিফোর্নিয়ার এই মহিলার জরায়ুতে ভ্রূণ স্থানান্তর করে নীতিগর্হিত কাজই করেছেন।
২.
এইডসের টিকা নিয়ে কত কথা! যেটুকু সফলতা এল, এ নিয়ে তেমন উল্লাস করা না গেলেও কিছুটা আনন্দ হবে বিজ্ঞানীদের মনে। ১৬ হাজার থাই পুরুষ ও নারীর মধ্যে এইচআইভি টিকা প্রয়োগ করে এইডস ভাইরাসের সুরক্ষায় সামান্য হলেও সফলতা এল। বিজ্ঞানীরা এই সফলতার ওপর ভিত্তি করে এগিয়ে যেতে চান বড় সাফল্যের দিকে।
৩.
ওজন হ্রাস করা যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা ইদানীং অনুধাবন করছেন অনেকেই। স্থূলতা একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা। বলা হচ্ছে বাদামি মেদ বা ব্রাউন ফ্যাটের কথা। শরীরে এই বাদামি মেদের সামান্য অংশকেও যদি উদ্দীপ্ত করা যায়, তাহলে ডায়েটিং না করে বা ব্যায়াম না করেও বছরে প্রায় নয় পাউন্ড ওজন শরীর থেকে হারানো সম্ভব হবে। একসময় মনে করা হতো, শিশুদের শরীর গরম রাখার জন্য বাদামি মেদ প্রয়োজন হতো, কিন্তু পূর্ণবয়স্কদের থাকত না সেই বাদামি মেদ। এখন কী করে এই বাদামি মেদকে আরও সক্রিয় করা যায়, এ নিয়ে চলছে বিজ্ঞানীদের প্রচেষ্টা।
৪.
বিভিন্ন ব্যথা-বেদনায় টাইলেনল একটি বহুল ব্যবহূত ওষুধ। টাইলেনলের ভেতর সক্রিয় উপকরণটি হলো ‘এসিটামিনোকেন’। এ ওষুধ নিয়ে এসেছে কিছুটা দুঃসংবাদ।
আমেরিকার প্রতিবছরের ৫৬ হাজার ইমারজেন্সি ভিজিটের খতিয়ানে দেখা গেল, তাদের অনেকেই অতিমাত্রায় টাইলেনল গ্রহণ করে এসেছেন। এ জন্য এফডিএ পূর্ণবয়স্কদের জন্য নির্ধারিত মাত্রা আরও কমানোর সুপারিশ করেছে। ঠান্ডা লাগা, ফ্লু, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা, মাথাধরা—এসব উপশমের জন্য ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসি থেকে কেনা যায় এসিটামিনোকেন। আর এ জন্যই অতিমাত্রায় ওষুধ সেবন।
৫.
স্তন ক্যানসার নারীদের বড় সমস্যা। একে আগাম নির্ণয়ের জন্য নিজের স্তন নিজে পরীক্ষা করা, চিকিত্সককে দিয়ে পরীক্ষা করানো, এমনকি ম্যামোগ্রামও প্রচলিত। তবে কত বয়স থেকে ম্যামোগ্রাম করা উচিত, এ নিয়েও তর্কবিতর্ক হচ্ছে বিজ্ঞানী মহলে। নিয়মনীতি, গাইড লাইন নিয়ে চলছে বিতর্ক। মতানৈক্য। আমেরিকার প্রিভেনটিভ সার্ভিসেস টাস্কফোর্স পরামর্শ দিয়েছে, যেসব নারীর মাঝারি ঝুঁকি, তাঁদের জন্য ম্যামোগ্রামের রুটিন স্প্রিনিং শুরু হওয়া উচিত ৫০ বছর বয়স থেকে। আগে বয়সসীমা ছিল ৪০, উন্নীত করা হলো ৫০-এ। ব্যাখ্যা দেওয়া হলো, এত ম্যামোগ্রামের জন্য যে ক্ষতি হয়, যেমন বাড়তি বিকিরণের মুখোমুখি হওয়া, ফলস পজিটিভ ফলাফল, অতিচিকিত্সা, মনের উদ্বেগ ও চাপ—এসব ক্ষতি অনুযায়ী সুফল ততটা হয় না।
৬.
ক্যানসারে মৃত্যুবরণ করলেন একজন তারকা। ফারাহ ফসেট। মলদ্বারের ক্যানসারে মারা গেলেন ৬২ বছর বয়সে। টিভির জনপ্রিয় চার্লিস অ্যাঞ্জেলসের সেই ফারাহ ফসেট অনেকেরই পরিচিত। জনগণের সঙ্গে দীর্ঘদিন তিনি ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থেকেছেন। প্যাট্রিক সোয়াজের কথাও এসে যায়। ২০০৮ সালে যখন তাঁর দেহে ক্যানসার নির্ণয় হয়, তখন তাঁর নতুন টিভি সিরিজের জন্য ১৩টি নতুন ইপিসোড শুট করার জন্য তিনি তৈরি। প্যাট্রিক মারা যান অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারে ২০০৯ সালে ৫৭ বছর বয়সে। সিনেটর টেড কেনেডি ৭৭ বছর বয়সে মারা গেলেন মস্তিষ্কের ক্যানসারে। ৪৬ বছর ধরে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ম্যাসাচুসেটসকে।
৭.
মৃত্যু হলো কিংবদন্তি পুরুষ মাইকেল জ্যাকসনের। এই ‘প্রপোফল মৃত্যু’ বিস্ময়াভিভূত করেছে সংগীতপ্রিয় বিশ্বকে। ৫০ বছর বয়সে প্রোপোফল ওষুধটির তীব্র বিষক্রিয়ায় মহাপ্রয়াণ ঘটল এই পপসংগীত-সম্রাটের। চেতনাবিনাশের এই ওষুধ প্রোপোফল, অন্যান্য ঘুমের ওষুধের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। কথিত আছে, তাঁর ব্যক্তিগত চিকিত্সকই তাঁকে নিদ্রাভিভূত করার জন্য এমন ওষুধের ককটেল দিয়েছিলেন। এই মৃত্যুকে হত্যা বলা হচ্ছে, তবে এ জন্য অভিযোগ এখনো দায়ের করা হয়নি।
৮.
পিনাটের মধ্যে বিষাক্ত জীবাণু সালমোনেলার বসতি, জানা গেল আবার। ২০০৯ সালের গোড়ার দিকে মিনেসোটার স্বাস্থ্য-পরিদর্শকেরা রহস্যময় সালমোনেলা সংক্রমণের কারণ খুঁজতে খুঁজতে উত্স পেলেন পিনাটে। চিনাবাদাম বা যে নামেই একে ডাকা যাক না কেন, পরে দেখা গেল আইসক্রিম থেকে শুরু করে কুকুরের খাদ্য—সবকিছুতে থাকতে পারে সালমোনেলা-সংক্রমিত পিনাট। শেষ সংবাদ: তিন হাজার ৯১৯টি পিনাট খাদ্য গ্রহণের ফলে ৭১৪ জন অসুস্থ, ৪৬টি রাজ্যে মৃত্যু হলো নয়জনের।
৯.
আমেরিকার সবচেয়ে বড় ঘরোয়া খবর হলো, স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংস্কার। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অথচ সবচেয়ে দুর্বোধ্য, বেশ আলোচিতও বটে। একে কম বোঝা গেল, কারণ সংস্কারটি বেশ জটিল। তাই দুর্বোধ্য। এতে রয়েছে অনেক ভুল তথ্যও। তাই স্বাস্থ্য পরিচর্যা সংস্কারের প্রকৃত ইস্যুগুলো নিয়ে সজাগ থাকা বেশির ভাগ নাগরিকের বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধনী দেশে, গরিব দেশে সর্বত্র স্বাস্থ্য পরিচর্যা নিয়ে চাণক্যনীতির শেষ কবে হবে, কেউ জানে না।
১০.
বিশ্বে ঘটল সোয়াইন ফ্লু মহামারি। এ বছরের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য সংবাদ কাহিনির জন্ম হলো সম্ভবত ২১ এপ্রিল। জানা গেল, সিডিসি (সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল, আটলান্টা) মানুষকে আক্রমণ করা ফ্লুর দুটো নতুন প্রজাতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছে। দ্রুতই ২০০৯ এইচ১এন১ সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস ঘিরে ধরল বিশ্বকে। এখন অবশ্য প্রকোপ অনেক কম। তবে আবার কি এমন মহামারির পদধ্বনি শোনা যাবে শিগগিরই?
শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৬, ২০১০
yosufkhan
sir
amr slam neban sir amr mathy akdhronar denraf moty baer hoy onak boly soreyses
sir jode amky akta pot dekan ami kose hoby amr mathy jayidendrafta mor than 8 yer amr age 29 thanks