প্রশ্নটা করলেন একজন রোগী। ‘আমাকে এই অ্যান্টিবায়োটিক কি ১৪টাই খেতে হবে?’ চিকিৎসক বললেন, ‘অবশ্যই এবং সময়মতো ১২ ঘণ্টা পর পর খেতে হবে।’ সত্যি বলতে, আমাদের অনেকেরই ওষুধের মাত্রা এবং এর সেবনের সময়জ্ঞানের ঘাটতি রয়েছে। ব্যবস্থাপত্রে অনেক সময় চিকিৎসক ওষুধের নাম লিখে পাশে লিখে দেন দ.ম.ন., অর্থাৎ দিনে দুবার খেতে হবে।
আর য়.ম.ন. মানে হচ্ছে, দিনে ওষুধটি তিনবার খেতে হবে। ক্ষ.ম.ন. লেখা থাকলে বুঝে নিতে হয়, দিনে চারবার। আজকাল চিকিৎসকদের অনেকেই তাঁদের ব্যবস্থাপত্রে এ ধরনের সংকেত ব্যবহার করেন না। দিনে কতবার খেতে হবে তা ইংরেজিতে লিখে দেন। আবার অনেকে বাংলায় ওষুধের প্রয়োগমাত্রা ও সময় লিখে দেন।
অ্যান্টিবায়োটিকের প্রথম দিকের ওষুধ পেনিসিলিন-ভি। একবিংশ শতাব্দীতে নতুন প্রজ্নের অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়েছে। কারণে-অকারণে এই অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর বহুল ব্যবহার দেখা যায়।
তার পরও এখন আদি পেনিসিলিন কোনো কোনো চিকিৎসক ব্যবহার করে থাকেন। তাঁদের অনেকের কাছে ‘পেনিসিলিন চয়েস অব ড্রাগস’। বয়সের তারতম্যে ওষুধের, বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিকের মাত্রার পার্থক্য থাকবে। যেমন পেনিসিলিন ভি ৫০০ মিলিগ্রাম ৬ ঘণ্টা পর পর; বয়স্কদের ক্ষেত্রে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ২৫০ মিলিগ্রাম একই সময়-ব্যবধানে সাধারণত সেবন করতে বলা হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে মাত্রা আরও কম হয়-সাধারণত ১২৫ মিলিগ্রাম ছয় ঘণ্টা পর পর দেওয়া যায়।
একটি ওষুধ খাওয়ার পর তা নানা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রক্তে মিশে যায় এবং কিছু সময় ধরে রক্তে অবস্থান করে। আবার কিছু সময়ের জন্য ওষুধটি প্রয়োজনীয় ন্যূনতম কার্যকর ঘনত্বে রক্তে থাকে।
ওষুধের পরবর্তী সময়ের প্রয়োগকাল এমনভাবে নির্ণয় করা হয়, যাতে সেবনের সময় অবশ্যই ন্যূনতম কার্যকর ঘনত্ব বজায় থাকে। এটা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।
উৎপাদনগত ভিন্নতার কারণে সময়ভেদে ওষুধ রক্তে মিশে থাকে।
যে সময়-ব্যবধানে একটি ওষুধ ন্যূনতম কার্যকর ঘনত্ব রক্তে থাকার কথা, তার চেয়ে কম মাত্রার ওষুধ খেলে তা সঠিকভাবে কাজ করবে না, অথবা যে সময়ের ব্যবধানে ওষুধ (পরবর্তী প্রয়োগ মাত্রা) খাওয়ার কথা, তা যদি না খাওয়া হয়, তাহলে রক্তে ন্যূনতম কার্যকর ঘনত্বে পাওয়া যাবে না।
নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্দিষ্ট মাত্রায় ওষুধ না খেলে কার্যকারিতায় ব্যঘাত ঘটে। যাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শমতো সঠিক সময়ের ব্যবধানে ওষুধ (বিশেষ করে অ্যান্টিবায়োটিক) খান না, তাঁদের রক্তে ওষুধের ন্যূনতম কার্যকর ঘনত্ব থাকে না।
ফলে ওষুধ খেয়ে কোনো লাভ হয় না। বরং ক্ষতি হয়; শরীর ড্রাগ রেজিসটেন্ট হয়ে যায়। মনে রাখবেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়।
বিশেষজ্ঞেরা নানা ধরনের হিসাব কষে এ মাত্রা নির্ধারণ করে থাকেন। একটি ওষুধ ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ড্রাই-সাসপেনশন, সিরাপ, ইনজেকশন প্রভৃতি বিভিন্ন আঙ্গিকে থাকতেই পারে। একই ধরনের ওষুধের ক্ষেত্রে ট্যাবলেটে আর ইনজেকশনে মাত্রা অবশ্যই এক হয় না। ইনজেকশনের ওষুধ অপেক্ষাকৃত অনেক কম সময়ে রক্তে মেশে।
উল্লেখ্য, ব্যথা কমানোর ওষুধ ব্যথা কমে গেলে আর খাওয়ার দরকার হয় না। চিকিৎসকেরা বলেন, জ্বর কমে গেলে আর প্যারাসিটামল খাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাত্রার কোর্স অবশ্যই সম্পন্ন করতে হয়।
লেখকঃ সুভাষ সিংহ রায়
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply