আমাদের দেহ মোট ২০৬টি বিভিন্ন আকৃতির অস্থি বা হাড় নিয়ে গঠিত। পা থেকে মাথা পর্যন্ত রয়েছে এসব অস্থির বিস্তৃতি। সারা দেহেই অস্থির সঙ্গে মাংসপেশি লেগে থাকে। অজস্র অস্থির সমন্বয়ে আমাদের দেহের গঠন তৈরি হয়। আর অস্থির ওপরে মাংসপেশি, শিরা, উপশিরা, স্মায়ু সংযুক্ত থেকে দেহের শোভা বর্ধন করে এবং দেহের অভ্যন্তরীণ নরম অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে। হাড় দেখতে সাদাটে বাদামি বর্ণের। এর প্রধান উপাদান লৌহ, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম (খনিজ লবণ), আয়োডিন, সোডিয়াম, পানি ও বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক উপাদান।
অধিকাংশ হাড়ের মধ্যে ছোট ছোট অসংখ্য ছিদ্র রয়েছে। এসব ছিদ্রের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন স্মায়ু, শিরা-ধমনি হাড়ের ভেতর প্রবেশ করে আবার হাড় থেকে মাংসপেশিতে ঢোকে। হাড়ের ভেতরের ফাঁপা, নরম ও তরল টাইপের অংশকে বলে অস্থিমজ্জা। মানুষের অস্থিমজ্জা গরু-ছাগলের অস্থিমজ্জার মতো। ২০৬টি হাড়ের মধ্যে মাথার খুলি হাড় আটটি, মুখমণ্ডলের হাড় ১৪টি, মেরুদণ্ডের ৩৩টি, বক্ষপিঞ্জর ২৯টি, দুই হাতে ৬০টি, শ্রেণীঅস্থি চক্রের (কোমরের) দুটি। এ ছাড়া দুই পায়ে ৬০টি হাড় রয়েছে।
প্রতিটি হাড় একে অপরের সঙ্গে লিগামেন্ট নামক স্থিতিস্থাপকতাসম্পন্ন, শক্ত মাংসপেশি দ্বারা সংযুক্ত। হাড়গুলো পরস্পরের সঙ্গে পৃথক জয়েন্টে আবদ্ধ থাকে। যেমন-হাতের হাড় ঘাড়ের হাড়ে যুক্ত হয়ে ‘সোলডার জয়েন্ট’ তৈরি করে। আবার পায়ের দুটো হাড় হাঁটুর কাছে এসে ‘নি জয়েন্ট’ তৈরি করে। এভাবে সারা দেহের হাড়গুলো অজস্র জয়েন্ট তৈরি করে। হাড়ের জন্যই মাংসপেশি সঠিক আকৃতি পায়। এ জন্য হাড়কে মাংসপেশি বা দেহের অবলম্বন বলা হয়।
শরীরে হাড়ের কাজ
* হাড় বা কঙ্কাল না থাকলে আমরা শুধু মাংসপেশি নিয়ে দাঁড়াতে পারতাম না; চলাচল করা সম্ভব হতো না। দেহের হাড় আমাদের সোজাভাবে দাঁড়াতে ও চলাচলে সাহায্য করে।
* বাইরের আঘাত থেকে অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে। যেমন-বক্ষপিঞ্জর (বুকের হাড়) হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও যকৃৎকে আঘাত থেকে বাঁচিয়ে রাখে।
* হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, লৌহ, ফসফরাস, সোডিয়াম থাকে। দেহের প্রয়োজনে হাড় তা সরবরাহ করে।
* রক্তের উপাদান আরবিসি (লোহিত রক্তকণিকা), ডব্লিউবিসি (শ্বেতকণিকা), প্লেটলেট (অণুচক্রিকা) তৈরির অন্যতম প্রধান স্থান হলো হাড়ের অস্থিমজ্জা।
হাড়ের যত্ন
* লৌহসমৃদ্ধ খাবার (ছোট মাছ, কাঁচকলা, কচুশাক, কচু, কচুর লতি, বিট, গরুর মাংস, লালশাক, গরুর দুধ) খান।
* উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা বাড়তি লবণ খাবেন না।
* হজমে সমস্যা না থাকলে দৈহিক গড়ন বুঝে প্রতিদিন এক কাপ দুধ খাবেন। দুধে সব রকম ভিটামিন রয়েছে। তাই নিয়মিত দুধ খান।
* বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে (আমাদের দেশে বিশেষত চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা) হাড়ের ক্ষয় বেড়ে যায়। আর হাড়ের ক্ষয় পুরুষদের তুলনায় নারীদের বেশি হয়। তাই ৪০ পার হলেই হাত ও হাঁটুর অস্থিসন্ধি, পায়ের পাতায়, কোমরে ব্যথা হয়। এ জন্য শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন, ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খান। ব্যথা তীব্র হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
* গর্ভধারণ ও মাসিকের জন্য নারীর দেহে তুলনামূলকভাবে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকে। আর লোহিত ও রক্তকণিকার (রক্তের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান) অন্যতম প্রধান উপাদান হিমোগ্লোবিন। তাই এই দুই বিশেষ সময়ে নারীরা যথেষ্ট সচেতন হোন।
* ওজন কমানোর জন্য হঠাৎ অতিমাত্রায় খাবার নিয়ন্ত্রণ উচিত নয়। এটি হাড়ের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। তাই খাবার নিয়ন্ত্রণ করলে ধীরে ধীরে করুন।
* শরীরচর্চাকারী, খেলোয়াড়, নৃত্যশিল্পীরা পুষ্টিবিদদের কাছ থেকে খাবারের তালিকা ঠিক করিয়ে নিন।
লেখকঃ ফারহানা মোবিন
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply