পরিপূর্ণ স্বাস্থ্যসুবিধা থাকা প্রয়োজন
বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্যসেবার প্রধান লক্ষ্য হলো-
* শিক্ষার্থীদের সুস্থতা বজায় রাখা
* রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচি
* যথাসময়ে রোগ নির্ণয়
* রোগ হলে এর যথাযথ চিকিৎসা ও চিকিৎসা-পরবর্তী পর্যবেক্ষণ
* স্বাস্থ্যশিক্ষা
* স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরি ও বজায় রাখা
আমাদের দেশের বিদ্যালয়গামী শিশুদের বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো হয় তা হলো-
অপুষ্টি; অপুষ্টিজনিত রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া; চোখের অন্ধত্ব-সম্পর্কিত রোগ; সংক্রামক ব্যাধি; কৃমি সংক্রমণ এবং দাঁতের ক্ষয়রোগ বা ডেন্টাল ক্যারিজ।
স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাঠামো
- বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় প্রতিটি ছাত্রের সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং অন্তত চার বছর পর পর একবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার। মলমূত্র, রক্তের রুটিন পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা দরকার।
- এ ছাড়া প্রতিদিনই শরীরে র্যাশ, সাধারণ ঠান্ডা লাগা, কাশি, সর্দি, স্বরের পরিবর্তন, বমি, ঘাড় শক্ত ভাব, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, জ্বর, ডায়রিয়া, অস্থিসন্ধি ফোলা, চুলকানি, পেটে ব্যথা প্রভৃতি হলো কি না তা পর্যবেক্ষণ করা যেতে পারে।
- প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক থাকা দরকার, যিনি শিশুদের স্বাস্থ্যসমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হবেন।
ফার্স্ট এইড সুবিধা
হঠাৎ মূর্ছা যাওয়া, বমি, ডায়রিয়া, খিঁচুনি-এসব থেকে দূরে থাকার জন্য শিক্ষার্থীদের শিক্ষাক্রম এমনভাবে তৈরি করা দরকার, যাতে বেশি শ্রমের পিরিয়ডগুলোর মধ্যে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ থাকে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-ধনী-দরিদ্র-এসবে কোনো পার্থক্য শিক্ষকের আচরণে যেন প্রকাশ না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। কেননা এসব বিষয় শিশুমনে প্রবলভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।
মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য
বছরে একবার দাঁত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা রাখা উচিত।
চোখের যত্ন
শিশুর চোখের অসুবিধা বা কানে শোনার কোনো সমস্যা সরাসরিভাবে তার শিক্ষা গ্রহণে প্রভাব ফেলে। প্রতিবছর একবার করে দৃষ্টিশক্তি পরীক্ষা করে দেখা প্রয়োজন।
শোনা
সব শিশুর ক্ষেত্রে জীবনের প্রথম বছরে স্বাস্থ্য পরিদর্শকের সাহায্যে ডিসট্রেকশন পদ্ধতিতে কানে ঠিকমতো শুনছে কি না, তা নির্ণয় করে নেওয়ার বিধান রয়েছে। কানে কম শোনার প্রধান কারণ-শিশুবয়সে কানপাকা রোগ। তাই এদিকটির প্রতি খেয়াল রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণ পুষ্টি
বিদ্যালয়ে ছেলে-মেয়েদের এমন খাবার দিতে হবে, যাতে তাঁর জন্য প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় আমিষের অর্ধেক ও দৈনিক ক্যালরির এক-তৃতীয়াংশ থাকে। এ ছাড়া দাঁতের রোগ, শরীরে লৌহের ঘাটতিজনিত রক্তস্বল্পতা, রাতকানা, ভিটামিন-এ, গলগণ্ড প্রতিরোধে খনিজ ও ভিটামিনসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাবারও স্কুলের খাবারে অন্তর্ভুক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।
স্বাস্থ্যশিক্ষা
এটি মূলত শিক্ষকের দায়িত্ব। বিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শক তাঁকে সাহায্য করতে পারেন। শিক্ষার্থীদের ত্বকের যত্ন, চুল-নখ কাটা, দাঁতের যত্ন, পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা প্রভৃতি বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া দরকার।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি ও বজায় রাখা
চাই ধোঁয়ামুক্ত পরিবেশ। থিয়েটার, ব্যস্ত সড়ক, কলকারখানা, রেল জংশন থেকে নিরাপদ দূরত্বে হোক বিদ্যালয়ের অবস্থান। আলো-বাতাসপূর্ণ শ্রেণীকক্ষ। প্রতিটি ছাত্রের জন্য ৩০০ বর্গ সেন্টিমিটার জায়গা। প্রতিটি শ্রেণীকক্ষে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকবে। শিক্ষার্থীপ্রতি একটি ডেস্ক থাকতে পারে। ভেতরের দেয়ালের রং হবে সাদা। প্রতিটি কক্ষ যেন ভালোভাবে প্রাকৃতিক আলো পায়। ছেলে ও মেয়ের জন্য থাকবে আলাদা শৌচাগারের ব্যবস্থা। প্রতি ১০০ জনের জন্য একটি ইউরিনাল, প্রতি ১০০ জনের জন্য একটি ল্যাট্রিন বরাদ্দ থাকা উচিত। নিরাপদ ও পরিষ্কার পানির পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখা জরুরি।
নাম, জন্মতারিখ, মা-বাবার নাম ও ঠিকানা টেলিফোন নম্বরসহ, স্বাস্থ্যের আগের সব রেকর্ডের নথি, টিকাদান কার্ড, প্রতিবছর শিশুর উচ্চতা ও ওজনের তালিকা সংরক্ষণ করা দরকার।
স্কুল কমিটি স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনায় নিবন্ধিত সাধারণ চিকিৎসক নিয়োগ দিতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী ও সেবিকা।
লেখকঃ ডা· প্রণব কুমার চৌধুরী
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো
Leave a Reply