যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতাল/কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিকেল সেন্টারের হার্ট সার্জন ডা· মেহমেত সি ওজ একবার বলছিলেন, ‘অনেক খারাপ খবর আমাকে দিতে হয়। কৌতুকরসে মিশিয়ে ধীরে ভাঙি খবরটি। রোগীরা তখন এর মুখোমুখি হয়ে মোকাবিলা করতে পারে অনেক সহজে। ভালো হয়ে যেতেও সুগম হয় পথ।’
এ রকম অনেক তথ্য-উপাত্ত আছে যে হার্ট সার্জারির পর বিষণ্ন রোগীদের মৃত্যুহার বেশ উঁচু আর আশাবাদী রোগীদের ক্ষত সংক্রমণ হয় অনেক কম।
হাস্য-পরিহাস এমন আশাবাদের জ্ন দেয়, একটি বড় দাওয়াই এটি।
ভয় ভেঙে দেয়
মানুষ নিজের শরীর ও এর কুশল নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে। কৌতুকরস বরফ ভাঙার কাজ করে, উড়িয়ে নিয়ে যায় ভয়, উদ্বেগ।
ডা· ওজ জানান, এমন অনেক অস্ত্রোপচারের রোগীকে বলতে হয়, সার্জারির পর হয়তো তাদের বুদ্ধিবৃত্তি সামান্য খর্ব হতে পারে। রোগী ভয় পেতেই পারেন, চরম বিপদের আশঙ্কা।
তখন ডা· ওজ মজা করে বলেন রোগীদের সামান্য ব্যাপার, হয়তো দ্বিতীয় বছরের কথা মনে থাকল না। এক-আধটু ভুল, এমন ভুলে যাওয়া হতেই পারে। রোগীরা বোঝেন এ তেমন ক্ষতি নয়, তাই আশ্বস্ত হন।
পুনঃ আশ্বাস দেয় রোগীকে
ওপেন হার্ট সার্জারির পর ডা· ওজকে প্রশ্ন করেছিল রোগী, ‘ডাক্তার, আমার বুকের ক্ষতে ব্যথা করছে।’ চোখ টিপে ্নিত হেসে উত্তর দিলেন তিনি, ‘এমনকি মনে হচ্ছে যে কেউ আপনার বুক খুলেছে, হাড় কেটেছে এবং সেখানে অপারেশন করেছে?’ এতে তাকে বলা হলো যে ব্যথা হওয়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার এবং রোগী ক্রমে ক্রমে সুস্থ হয়ে যাবেন, ব্যথাও চলে যাবে।
শিথিল করে মন
সার্জারির মতো চিকিৎসা-পদ্ধতি মন ও শরীরের ওপর বেশ চাপ সৃষ্টি করে। যেকোনো ইঞ্জিন আমরা জোরে চালাই, শরীরের ওপরও এটি খাটে, সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত, হঠাৎ করে কোনো এক সময় একটি গিয়ার পিছলে যাওয়া বিচিত্র নয়।
হৃৎস্পন্দনে হতে পারে অনিয়ম, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, বেদনার প্রতি অধিক সংবেদনশীল হওয়া। মানুষ যখন কৌতুক করে, হাস্যরসাত্মক সংলাপ বলে, তখন স্বয়ংক্রিয় স্মায়ুতন্ত্র হঠাৎ করে নেমে আসে নি্নগ্রামে, উঁচু গিয়ারে উঠে আসার জন্য, আর এ জন্যই এই অবসরে শিথিল হয় হৃৎপিণ্ড।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসক
প্রতিদিন যদি চিকিৎসককে দুঃসংবাদ দিতে হয়, তাহলে এ কাজটি বেশ কঠিন বটে। অনেক চিকিৎসকের জন্য এ রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে গিয়ে কষ্টের শিকার হতে হয়। পারস্পরিক মোকাবিলার জন্য কৌতুক বড় হাতিয়ার। জীবনু উপভোগের জন্যও এটি প্রয়োজন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
Leave a Reply