উচ্চ কোলেস্টেরল ঝুঁকি বাড়ায়
বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় পৌনে দুই কোটি লোক মারা যায় হূদরোগসংক্রান্ত কারণে। এর প্রায় ৮০ শতাংশ লোকই স্বল্পোন্নত বা অনুন্নত দেশের অধিবাসী। হূদরোগের অন্যতম প্রধান কারণ, রক্তে কোলেস্টেরলের উচ্চমাত্রা। কোলেস্টেরল, যা চোখে দেখা যায় না বা অনুভব করা যায় না, অথচ প্রতিমুহূর্তে ধমনিতে জমা হতে থাকে ধীরে ধীরে, এবং যা জীবনের জন্য অবশ্যই ঝুঁকিকর। ছোটবেলা থেকেই এ প্রক্রিয়া শুরু হয়। কারও দ্রুত, কারও বা ধীরগতিতে। রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরল সবচেয়ে হতাশাব্যঞ্জক দুনিয়াজুড়ে শারীরিক সমস্যা। বাংলাদেশের প্রায় তিন শতাংশ লোকের রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল আছে। বাংলাদেশের মানুষ সাধারণত মাঝারি গড়নের, তাদের হূিপণ্ডের আকারও আনুপাতিক হারে ছোট। যেসব ধমনি হূিপণ্ডে রক্ত সরবরাহ করে, সেগুলো আনুপাতিক হারে সরু। সুতরাং এই সরু ধমনিতে কোলেস্টেরল জমলে সহজেই রক্ত চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অকালে হার্ট অ্যাটাক, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ (স্ট্রোক), এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কোলেস্টেরল সাধারণত রক্ত ও দেহকোষে পাওয়া যায়। যদিও কোলেস্টেরলকে আমরা সব সময় খারাপ চোখে দেখার চেষ্টা করি, আসলে ভালো-মন্দ মিলিয়েই কোলেস্টেরল।
সুস্বাস্থ্যের জন্য কোলেস্টেরলের প্রয়োজন আছে। এটা শরীরের শক্তির উত্স, মস্তিষ্ক এবং বিভিন্ন কোষ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের পরিমাণ মোট কোলেস্টেরলের ২৫ থেকে ৩০ ভাগ। এরা রক্ত থেকে কোলেস্টেরলকে যকৃতে নিয়ে আসে। এতে রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমে যায়। ভালো কোলেস্টেরল হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। এর পরিমাণ কমে গেলে হূদরোগের আশঙ্কা বেড়ে যায়। অন্যদিকে খারাপ কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমতে থাকে। এতে রক্তবাহী নালি সরু হয়ে যায়। এ ধরনের কোলেস্টেরলের পরিমাণ রক্তে বেড়ে যাওয়া মানে হূদরোগ তথা অকালমৃত্যুর আশঙ্কা বেড়ে যাওয়া।
রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ার কারণ প্রধানত দুটি। প্রথমত জেনেটিক, দ্বিতীয়ত কিছু রোগের কারণে—যেমন ডায়াবেটিস, মোটা স্বাস্থ্য, হাইপোথাইরয়েডিজম, যকৃত্ বা বৃক্কের অসুখ। চোখের পাতায়, হাতের পেছনে, কনুই বা গোড়ালিতে কোলেস্টেরল জমতে পারে, যা সহজেই দেখা যায়। এগুলো রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের পরিমাণ ইঙ্গিত করে। তবে কোলেস্টেরলের পরিমাণ জানতে হলে রক্ত পরীক্ষার প্রয়োজন।
সাধারণত ১২ ঘণ্টা খালিপেটে থেকে রক্ত পরীক্ষা করা হয়। কোলেস্টেরলের পরিমাণ ব্যক্তি ও লিঙ্গভেদসহ মেয়েদের মাসিক, গর্ভধারণ এবং কিছু ওষুধের কারণে হেরফের হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকলে হূদরোগের ঝুঁকি কমে যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ৪ দশমিক ৫ মিলিলিটার রাখাটা জরুরি।
এর চেয়ে কমাতে পারলে স্ব্যাস্থের জন্য ভালো। রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান উপায় হলো, নিয়মিত জীবনযাপন করা।
এর মধ্যে খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন—যেমন কম চর্বিযুক্ত খাবার, কম লবণ ব্যবহার, পশুর চর্বি সম্পূর্ণ বর্জন, লাল মাংস (গরু, খাসি, ভেড়া, মহিষ) বর্জন বা পরিমিত খাওয়া, ধূমপান সম্পূর্ণ ছেড়ে দেওয়া, তাজা ফল ও শাকসবজি বেশি করে খাওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম বাড়ানো দরকার।
কারও যদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে, তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। আজকাল বাজারে এ জন্য কার্যকর ওষুধ পাওয়া যায়। তবে নিজে নিজেই ওষুধ খেতে যাবেন না, চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকলে হূদরোগের ঝুঁকি কমবে, দীর্ঘদিন বাঁচবেন, সঙ্গে অন্যান্য রোগের ঝুঁকিও কমে যাবে।
অভিশপ্ত উত্তরাধিকার
হূদরোগ বংশানুক্রমিকভাবে এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সংক্রমিত হতে পারে। বংশে হূদরোগ (করোনারি হূদরোগ) থাকলে পরিবারের অন্য সদস্যদের এটাকে ‘সতর্কসংকেত’ হিসেবে নেওয়া উচিত। করোনারি হূদরোগ অনেকটা জেনেটিক কারণ, পরিবেশ ইত্যাদি দ্বারা নিযন্ত্রিত হয়ে থাকে। পরিবারের আপন সদস্যরা (বাবা, মা, ভাই ও বোন) যদি অল্প বয়সে (নারীদের ক্ষেত্রে ৬০ বছরের আগে, পুরুষের ক্ষেত্রে ৫০ বছরের আগে) হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন, তবে ওই পরিবারের সদস্যদের হূদরোগের ঝুঁকি, যে পরিবারে হূদরোগ নেই, তার চেয়ে অনেক বেশি। পরিবারে কতজন সদস্যের হূদরোগ আছে তার ওপর ভিত্তি করে এ ঝুঁকি নয় গুণ পর্যন্ত বেশি হতে পারে। পরিবারের সদস্যদের উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ থাকার কারণে হূদরোগ হতে পারে। অথবা তাদের জিনে এমন কিছু থাকতে পারে, যাতে বংশানুক্রমিকভাবে করোনারি হূদরোগ হতে সহায়তা করে। অথবা তাদের সামাজিক জীবন যাপনের ধরন বা পারিপার্শ্বিকতার প্রভাব থাকতে পারে। ফ্যামিলিয়াল হাইপার লিপিডেমিয়ায় উচ্চ কোলেস্টেরল পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। তার মানে, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ‘দুষ্ট জিন’ থাকে, যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, মানে হূিপণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনি সরু হয়ে যাওয়া। বাবা-মায়ের একজনের যদি এ রোগ থাকে, তবে তাদের সন্তানদের হূদরোগ হওয়ার আশঙ্কা ৫০: ৫০। যদি পরিবারের কোনো সদস্যের এ রোগ থাকে, তবে সেটা পরিবারের সব সদস্যকে বলাটা জরুরি। এতে তারা রক্তের কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাসহ প্রয়োজনীয় উপদেশ পেতে পারেন চিকিত্সকের কাছ থেকে। এতে তাঁদের হূদরোগের আশঙ্কা তথা অকালমৃত্যুর ঝুঁকি কমে যাবে। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া হূদরোগের ঝুঁকি পরিবর্তন সম্ভব নয়। পরিবারের সদস্যদের যদি হূদরোগ থেকে থাকে, তবে হূদরোগের অন্যান্য ঝুঁকি যতটা সম্ভব কমানো উচিত। এ জন্য সম্পূর্ণভাবে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, চর্বিযুক্ত খাবার বর্জন করা, কম লবণ খাওয়া, শরীরের ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। ফলমূল ও তাজা শাকসবজির খাদ্যাভ্যাস করা উচিত।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে পরিবারের হূদরোগের পুরো ইতিহাস জানাটা জরুরি। যদিও করোনারি আর্টারি ডিজিজে বংশের প্রভাব রয়েছে, এর পরও অন্যান্য ঝুঁকি কমালে হূদরোগের আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়। আপনার চিকিত্সককে আপনার হূদরোগ সম্পর্কে এবং আপনার বংশানুক্রমিক হূদরোগের ঝুঁকির কথা জানানো দরকার। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আপনাকে প্রয়োজনীয় উপদেশ দেবেন, প্রয়োজনে ওষুধও নিতে হতে পারে।
যে ঝুঁকি কমানো যাবে না বা বাদ দেওয়া যাবে না, সেটা নিয়ে অযথা দুশ্চিন্তা করবেন না। বরং নিয়মিত জীবন যাপন করে হূদরোগের অন্য ঝুঁকিগুলো কমিয়ে এবং নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ ও সুন্দরভাবে জীবন উপভোগ করা সম্ভব।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
বহু বছর আগে হিপোক্রেটিস বলেছিলেন, হালকা-পাতলা গড়নের মানুষের চেয়ে স্থূল ব্যক্তিদের সহসা মৃত্যুর আশঙ্কা অনেক বেশি। তখনকার মতো এখনো কথাটি সত্য হয়ে আছে। দুনিয়াজোড়া স্থূল লোকের সংখ্যা বেড়েই চলেছে প্রতিদিন। আর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্থূলতা-সম্পর্কিত রোগবালাই। এ প্রবণতা শুধু বয়স্ক ব্যক্তিদের নয়, অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যেও দেখা দিচ্ছে। মেদহীন সুস্বাস্থ্যের জন্য যে চীনারা গর্ব করত, বিগত কয়েক বছরে সে দেশে সব বয়সের স্থূল লোকের সংখ্যা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। এ সমস্যা বিশ্বজুড়ে। স্থূলতা নিজেই একটি রোগ। স্থূলকায় ব্যক্তিদের শরীরে বাড়তি ওজন থাকায় হূিপণ্ডের চাপ বাড়ে, সব শরীরে প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ করতে হূিপণ্ডকে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। এতে হূিপণ্ডের নিজেরই অক্সিজেনের চাহিদা বেড়ে যায়। প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের সরবরাহ না পেলে বুকে ব্যথা হতে পারে। হূিপণ্ডের বেশি পরিশ্রমের কারণে এর দেয়ালগুলো মোটা হয়ে যায়। ফলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫০ থেকে ৬০ ভাগ স্থূল ব্যক্তির মৃদু থেকে মধ্যম মানের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। আর ১০ ভাগ ব্যক্তি অতি উচ্চ রক্তচাপে ভুগে থাকে। এসবের ফলে হূিপণ্ডের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। এতে হার্ট ফেইলিওর হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এর সঙ্গে দেখা দিতে পারে অনিয়মিত হার্ট রেট। এসবের সঙ্গেই রয়েছে অকালমৃত্যুর আশঙ্কা। এ ছাড়া স্থূলকায় ব্যক্তিদের ডায়াবেটিস, ঘুমের ব্যাঘাত, গিঁটে ব্যথা ও নানা ধরনের ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
শুধু না-খেয়ে বা কম খেয়ে ওজন কমানো সম্ভব নয়। এর জন্য দরকার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং তা মেনে চলা। সুস্বাস্থ্যের জন্য যেমন দরকার সুষম খাবার, তেমনি দরকার নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম, অর্থাত্ ব্যায়াম। ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে এর শুরু এবং দরকার এটা দৈনন্দিন কাজে পরিণত করা। যারা ওজন কমাতে আগ্রহী, তাদের দুটি দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। মনটা শক্ত করে লক্ষ্য স্থির করতে হবে যে আপনি আপনার স্বাভাবিক ওজনে ফিরে আসতে চান সারা জীবন। প্রতিদিন একটি ডায়েরিতে টুকে রাখুন, আপনি কখন কী খাচ্ছেন এবং দৈনন্দিন কী পরিমাণ পরিশ্রম করছেন। পরিকল্পনা অনুসারে নিজেকে তৈরি করুন। শাকসবজি, ফলমূল, কম লবণযুক্ত, চর্বিযুক্ত বা স্বল্প চর্বিযুক্ত খাবারসহ স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাবেন। ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করেছেন, তার চেয়ে বেশি ক্যালরি ব্যয় করতে হবে। এর জন্য দরকার শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম। একেবারেই কিছু না করার চেয়ে কিছু একটা করা ভালো। সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন ৪০ মিনিট করে ব্যায়াম করা উচিত। হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। হাঁটলে একটানা তিন কিলোমিটার (১ দশমিক ৮ মাইল) হাঁটবেন। তবে শুরুতে অসুবিধা হলে এর চেয়ে কম হাঁটুন। ধীরে ধীরে হাঁটার পরিমাণ বাড়ান। দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা—এগুলোও ভালো ব্যায়াম। পারলে লিফট ব্যবহার না করে সিঁড়ি ব্যবহার করুন, বাসে যাতায়াত করলে গন্তব্যের একটা স্টপেজ আগে নেমে হেঁটে গন্তব্যস্থলে যান। রিকশায় না চড়ে হেঁটে যান, পাশের দোকানে বা ঘুরে আসুন বন্ধুর বাসা থেকে।
একই ধরনের ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম সবাইকে করতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। যেটি আপনার পছন্দ, সেটিই আপনি বেছে নিন। স্বাস্থ্যসম্মত নয় এমন খাবার অতিরিক্ত গ্রহণ করাই স্থূলতার অন্যতম মূল কারণ। কী খাচ্ছেন একটু খেয়াল করে খাবেন। রাতে ও দুপুরে খাবারের সময় সাধারণের চেয়ে ছোট প্লেটে খাবার নিন। এতে শাকসবজির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। দিনে নিয়মিত তিন বেলা খাবার খান। দেখা গেছে, একবার পেট পূর্ণ করে খাওয়ার চেয়ে অল্প করে দুবার খেলে বেশি স্বস্তি পাওয়া যায়। ক্ষুধাকে চিনতে শিখুন। পেটে ক্ষুধা না থাকলে জোর করে খাবেন না বা অল্প পরিমাণে খাবেন। সপ্তাহে অন্তত এক দিন একই সময়ে একই রকম কাপড় পরে নিজেকে ওজন করুন এবং এটা টুকে রাখুন। ওজন কমছে দেখলে মনটা খুশি হয়ে উঠবে এবং আরও ওজন কমানোর উত্সাহ পাবেন।
সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করা ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণের বিকল্প নেই। সেটা স্থূলকায় থেকে হালকা-পাতলা গড়নের মানুষ, সবার জন্য প্রযোজ্য। সামান্য ওজন কমলেও এর সুফল পাবেন। হূদরোগসহ অন্যান্য রোগের আশঙ্কা কমে যাবে। অনেক সময় ওজন কমানোর ফলে হূদরোগ ও উচ্চ কোলেস্টেরলের ওষুধ নেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না। সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে পরিমিত আহার ও নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমকে করে নিন আপনার জীবনসঙ্গী।
উদ্বেগের বেগ কমান
স্ট্রেস বা উদ্বেগ আমাদের নিত্যসঙ্গী। কারও কম, কারও বা বেশি। আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং তা পূরণের জন্যই সাধারণত মানুষ উদ্বিগ্ন হয়। বিভিন্ন জনের কাছে এর অর্থ বিভিন্ন রকম। এর প্রকাশও বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে করে থাকে। স্ট্রেসের ভালো-মন্দ দুই দিকই আছে। স্ট্রেস আমাদের ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করে, লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করে। সত্যি কথা বলতে, একটু স্ট্রেস থাকা ভালো। অনেকে আবার ইচ্ছে করেই নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করে লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য। আবার অতিরিক্ত স্ট্রেস আমাদের ক্ষতবিক্ষত করে। ব্যক্তিসমাজকেও ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। উদ্বেগের স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব রয়েছে। স্বল্পমেয়াদি প্রভাব—যেমন হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, মাথাধরা, হঠাত্ করে রেগে যাওয়া বা বিরক্ত হওয়া, পাতলা পায়খানা হওয়া ইত্যাদি। আর দীর্ঘমেয়াদি ফল হিসেবে উচ্চ রক্তচাপ, হূদরোগ, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘস্থায়ী অতি আবেগ বা উদ্বেগের সঙ্গে সঙ্গে হূদরোগে সংক্রমিত হওয়ার কারণে অকালমৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। স্ট্রেস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। স্বজন হারানোর ব্যথা, অসুস্থ হওয়া, চাকরি হারানো বা পাওয়া, সন্তান জন্ম নেওয়ার পর এ রকম যেকোনো কারণে মানুষ কমবেশি উত্তেজিত বা আবেগাপ্লুত হয়। যদিও আবেগ-উত্তেজনা জীবনসঙ্গী, তবু অতিরিক্ত আবেগ-উত্তেজনা ও রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এগুলো রক্ত জমাট রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হতে পারে, হতে পারে অনিয়মিত হার্টবিট। রাগী লোকের হূদরোগ হওয়ার আশঙ্কা কম রাগী লোকের চেয়ে দুই গুণ বেশি। আর হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা তিন গুণ বেশি।
আমরা অনেক সময় বোকার মতো আমাদের আবেগ, মনের কথা, রাগের কথা লুকিয়ে রাখি নিজের মধ্যে। ভাবি, এভাবেই নিজের আবেগ-উদ্বেগকে লুকিয়ে রাখা যাবে, যা ঠিক নয়। পরিশ্রম করুন, নিয়মিত ঘুমান, হাসিখুশি থাকুন, স্বাস্থ্যকর খাবার খান, উদ্বেগ কমান, মনের কথা অন্যকে খুলে বলুন, সংলাপে বসুন, নিজে শান্তিতে থাকুন, অন্যদেরও শান্তিতে থাকতে দিন।
এম এইচ মিল্লাত
কনসালট্যান্ট, কার্ডিয়াক সার্জন
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ডিসেম্বর ০৯, ২০০৯
Leave a Reply