সারা দেশে এখন শোকের মাতম। ঘূর্ণিঝড় সিডর কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার মানুষের প্রাণ। উপকূলীয় অঞ্চলসহ উপদ্রুত সব এলাকায় যাঁরা এখন সাহায্যের অপেক্ষায় রয়েছেন, তাঁদের স্বাস্থ্য রক্ষার প্রশ্নটিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এ ধরনের একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সর্বপ্রথম যে জিনিসের প্রয়োজন হয়, তা হলো বিশুদ্ধ পানি। উপকূলীয় এলাকার অনেক স্থানেই লবণাক্ত পানি প্রবেশ করেছে, ফলে পানীয়জলের অভাব এখন প্রকট। যাঁরা সাহায্য নিয়ে যাবেন, তাঁরা বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ইত্যাদি অবশ্যই সঙ্গে নিয়ে যাবেন। এরপরই খাবার। দুর্যোগের পরপরই যে খাবার গ্রহণ করা হয়, সেগুলো স্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করছে কি না, তা দেখা দরকার। যেমন, এ সময় দিতে হবে শুকনো খাবার। চিঁড়া, গুড়, মুড়ি, বিস্কুটের প্যাকেট ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। খিচুড়ির মতো খাবার এ সময় গ্রহণ করা চলবে না।
সাধারণত এ রকম সময় ডায়েরিয়া, আমাশয় ইত্যাদি রোগের প্রকোপ হয়। এ কারণে প্রয়োজনমতো ওষুধ নিয়ে যেতে হবে। নানা ধরনের পেটের অসুখের ওষুধ এখন উপদ্রুত এলাকায় বেশি দরকার। ফ্লাজিল, অ্যান্টিবায়োটিক ইত্যাদিও নিয়ে যেতে হবে।
অনেক সময় শ্বাসযন্ত্রেও অসুখ হয়, সেসব ক্ষেত্রেও অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। আর নিতে হবে খাবার স্যালাইন। এই জিনিসটির প্রয়োজন খুব বেশি। ঝড়ের সময় যাঁরা আঘাত পেয়েছেন, তাঁদের জন্য সার্জিক্যাল ব্যান্ডেজ নিতে হবে। একটি ফাস্ট এইড কিটবক্স সঙ্গে নিয়ে যেতে হবে। ডিসপোজেবল সিরিঞ্জ, নিডল, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি তো লাগবেই।
ঘরহারা মানুষের আশ্রয় নিশ্চিত করতে শেল্টার হাউস গড়ে দিতে হবে। তাঁদের হাতে মোমবাতি, দিয়াশলাই দিতে হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচার ক্ষেত্রে প্রকৃতিই সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এবার যেমন সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রা কমিয়ে দিয়ে লাখ লাখ মানুষকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ কথা মনে রেখে উপকূলীয় এলাকায় বনায়ন করার দিকে জোর দিতে হবে।
যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁরা দ্রুত নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবেন, আমরা সেই আশাই করব।
লেখকঃ অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২১ নভেম্বর ২০০৭
Leave a Reply