আর মাত্র দুই দিন পরই কোরবানির ঈদ। এ সময় গরু, খাসি ও অন্যান্য পশুর মাংস খাওয়া হয়ে থাকে। সমস্যা হলো তাদের, যাদের পেটের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা হূদরোগ আছে কিংবা যারা এসব রোগের প্রাক-পর্যায়ে রয়েছে।
তবে পরিমিতি বোধ যেখানে রসনা সংবরণ করতে পারে, সেখানে আর ভয়ের কিছু নেই—অন্তত বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা তা-ই বলেন। হূদরোগ বিশেষজ্ঞ আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী বলেন, মাংসে তেল বা ঘিয়ের পরিমাণ কমিয়ে দিলে, ভুনা গোশতের বদলে শুকনো কাবাব করে খেলে, কোমল পানীয় ও মিষ্টি একেবারে কমিয়েখেলে কোরবানির ঈদের সময়ও ভালোই থাকা যায়। সেই সঙ্গে হালকা ব্যায়াম বা বেশ কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করে শরীর থেকে অতিরিক্ত ক্যালরি কমিয়ে নিতে পারলে আরও ভালো। এ ছাড়া তরকারির ঝোল থেকে গোশত কিংবা সবজি আলাদা করে নিয়ে তা ডালে মেখে খেলেও চর্বির পরিমাণ কিছুটা কমে।
পরিপাকতন্ত্র ও লিভার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ এস এম এ রায়হান বলেন, করোনারি হূদরোগ, বিশেষ করে প্রবীণ ব্যক্তি, যাঁদের ইসকেমিক হূদরোগ আছে এবং রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি, তাঁদের তৈলাক্ত মাংস কমিয়ে খেতে হবে। সারা বছর তাঁরা যে ধরনের নিয়মকানুন পালন করেন খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে, কোরবানির সময়ও এর ব্যতিক্রম করা ঠিক হবে না। কোরবানির মাংস দু-এক দিন খেলে যে শরীরের খুব ক্ষতি হয়ে যাবে তা নয়, তবে চিকিত্সকের তত্ত্বাবধানে যাঁরা রয়েছেন, বিশেষ করে করোনারি হূদরোগী, ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) রোগী, ডিসপেপসিয়ায় আক্রান্ত রোগী, তাঁদের অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করে ঈদের সময় খাওয়াদাওয়ার পরিকল্পনা করতে হবে। স্থূলকায় শরীর যাদের, তাদের অবশ্যই ঈদের সময় খাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। নিয়মিত ওজন পরীক্ষা করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, শরীরের উচ্চতা অনুপাতে স্বাভাবিক ওজন বেড়ে যাচ্ছে কি না।
বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকেরা বলেন, কোরবানির মাংস সংরক্ষণ করা একটি জরুরি বিষয়। ফ্রিজে সংরক্ষণ করা সম্ভব না হলে সঠিকভাবে মাংস জ্বাল দিয়ে রাখতে হবে। অর্ধসিদ্ধ মাংস খাওয়া কোনোভাবেই ঠিক নয়। মাংসে জীবাণুর সংক্রমণ হলে মারাত্মক অ্যান্টারাইটিস হতে পারে। এটা পেটের এক ধরনের সংক্রামক রোগ, যা খুবই ভয়াবহ। যেকোনো পশুর চর্বি খাওয়া এমনিতেই স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। কোরবানির সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে খেয়াল রাখা উচিত। অনেক সময় দেখা যায়, আমরা রান্না সুস্বাদু হবে এমন ভুল ধারণা পোষণ করে মাংসে বেশ কিছু চর্বি আলাদাভাবে যোগ করে থাকি। এটা ঠিক নয়। যতটুকু সম্ভব মাংসের চর্বি ছাড়িয়ে খাওয়া ভালো। বাজারে এখন শীতকালীন সবজি এসে গেছে। মাংসের সঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণে শীতের সবজি খাওয়া যেতে পারে। টাটকা সবজি পাকস্থলীকে সাবলীল রাখে। সেই সঙ্গে দরকার পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা।
কাজী ফাহিম আহমেদ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ২৫, ২০০৯
Leave a Reply