অনিদ্রা হয় অনেকেরই। আর সুনিদ্রার জন্য মানুষের চেষ্টারও শেষ নেই। চোখ বুজে মেষের সারি দেখে দেখে মেষ গোনা… ১০০ থেকে উল্টোদিকে গুনে আসা—কত চেষ্টা যে চলে! কিন্তু তবু অনেকে কড়িকাঠ গুনে গুনে রাত পার করেন—ঘুম আসে না চোখে। ভুল হলো, আজকাল ছাদে কড়িকাঠ নেই; শুধু ছাদ দেখে দেখে বা টিকটিকি দেখে দেখে রাত কাটানো।
একটা কথা বলি। পুষ্টি যদি সঠিক হয় তাহলে অনিদ্রা ঠেকানো যায়, এমন কথা বলছেন বিজ্ঞানীরা। বিকেল বা সন্ধ্যাবেলা ঠিকমতো খাওয়া আর সবচেয়ে যা গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, কী কী খাবার পরিহার করা উচিত তা জেনে সেগুলো এড়ানো—এভাবে আসতে পারে সুনিদ্রা।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে কী কী খাদ্য বা পানীয় গ্রহণ না করা উচিত?
ক্যাফিন বর্জন করুন
পরিহার করুন ক্যাফিনযুক্ত পানীয় ও খাদ্য।
কফি, চা, কোমল পানীয়, চকলেট—শুতে যাওয়ার বেশ কয়েক ঘণ্টা আগে থেকে এসব গ্রহণ করা অনুচিত।
ক্যাফিন এমন এক প্রকৃতিজাত রাসায়নিক, যা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করে; মানে হলো, এটি স্নায়ুতন্ত্র ও ভাবনার সূত্রকে উজ্জীবিত করে। যারা ক্যাফিনের প্রতি সংবেদনশীল, এদের ক্ষেত্রে এমন উদ্দীপনা সুখকর হয় না। ঘুমের আগে আগে চা-কফি পান করলে অনিদ্রা হতে পারে। যারা সংবেদনশীল, তাদের ঘুমাতে যাওয়ার আধঘণ্টা আগে থেকে এসব পানীয় পান বর্জন করা উচিত।
মদ্যপান করবেন না
মদ্যপান বর্জনীয় হলেও অনেকে লুকিয়ে করেন—ঘরে, বাইরে, ক্লাবে। অনেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগেও পান করেন শিথিল হওয়ার জন্য, মধ্যরাতে ঘুম ভাঙে তাঁদের। কালক্রমে মদ্যপানে নিদ্রা অশান্তির কারণ হয়, অস্বস্তি হয়, অনিদ্রা হয়ে ওঠে সঙ্গী। তাই মদ্যপান বর্জন করাই শ্রেয়।
পেটভরে আহার নয়
ঘুমাতে যাওয়ার আগে আগে অতিভোজন বা পেটভরে আহার বা বড় নাশতা খেলে ঘুমে চোখ ঢুলুঢুলু হয়, কিন্তু সত্যিকারের ঘুম আসে না। বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা যখন করা হয়, তখন পরিপাক হয়ে যায় শ্লথগতি, খুব অস্বস্তি লাগে, ঘুম আর আসবে না।
তাই রাতের খাবার যা খাবেন, এতে যেন ৬০০ ক্যালরির বেশি না থাকে। আর খেতে হবে ঘুমানোর অন্তত তিন ঘণ্টা আগে।
ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত দেড় ঘণ্টা আগ পর্যন্ত তরল পান করা যাবে। এ বড় গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ। যারা মধ্যরাতে ঘুম থেকে জেগে টয়লেটে যান, এঁদের জন্য পরামর্শ হলো, শুতে যাওয়ার ৯০ মিনিট আগ পর্যন্ত তরল পান করে নিন। এরপর আর না করাই ভালো। ওষুধ খাওয়ার জন্য পান করতেই হয় তাহলে বড়ি গেলার জন্য চুমুকে পানি পান করুন। ওষুধ খেতে যদি গ্লাসভর্তি পানি পান করতে হয়, তাহলে সম্ভব হলে সন্ধ্যাবেলা সে ওষুধ খেলে ভালো। দেখুন, এ রকম চর্চা করে ঘুম আসে কি না।
অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, নভেম্বর ১৮, ২০০৯
Leave a Reply