কেস স্টাডিঃ আসিফের (ছদ্মনাম) বয়স ১০ বছর। ঢাকার একটি স্কুলের ছাত্র। স্কুলের বার্ষিক বনভোজনে তাকে নেওয়া হয় একটা পিকনিক স্পটে। খুব সুন্দর জায়গাটা। চারদিকে হালকা জঙ্গল, তার মধ্যেই পিকনিক স্পট। সবার মতো আসিফও আনন্দ ও মজা করছিল। লাফালাফি, ছোটাছুটি ইত্যাদি। হঠাৎ কোথা থেকে একটা হুলো বিড়াল এসে আসিফের পায়ে কামড় দিয়ে চলে গেল।
ব্যথায় আসিফ ছটফট করতে লাগল। অন্যরা এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিল। তারপর খাওয়া-দাওয়া শেষ করে চলে এল সবাই ঢাকায়। আসিফের বাবাকে ঘটনা জানানো হলো। তিনি তখনই চিকিৎসকের কাছে নিলেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো তাকে জীবজন্তু কামড়ানোর ইনজেকশন (এআরভি) দেওয়া শুরু করলেন। তিন দিনের মাথায় আসিফের প্রচণ্ড জ্বর এল, সঙ্গে মাথাব্যথা। জ্বরের ঘোরে আস্তে আস্তে সে জ্ঞান হারাল। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে তাকে ভর্তি করানো হলো। পাঁচ-ছয় দিন অজ্ঞান থাকার পর ধীরে ধীরে আসিফের জ্ঞান ফিরতে শুরু করল। জ্ঞান ফিরল ঠিকই, তবে তার গলার স্বর ফুঁযাসফেঁসে হয়ে গেছে।
উল্টাপাল্টা কথা বলে, হাঁটতে পারে না। তার অস্বাভাবিক আচার-আচরণের জন্য মা-বাবা কেঁদে অস্থির। তাঁদের অনুরোধে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হলো এবং পোস্ট এনকেফালাইটিস সিনড্রোম ডায়াগনোসিস করল মেডিকেল বোর্ড। মা-বাবাকে জানানো হলো, এটা ঠিক হতে বেশ কিছুদিন লাগবে। বিভিন্ন রকমের থেরাপি অর্থাৎ ফিজিওথেরাপি, স্পিচথেরাপি ও অকুপেশনালথেরাপি চলতে লাগল। এভাবে কেটে গেল ছয় মাস। আসিফ এখন একা একা হাঁটতে পারে, তবে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারে না। কথাবার্তাও অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে।
এখনো স্কুলে যাওয়া শুরু হয়নি। বাসায় টিউটর এসে পড়িয়ে যায়। আসিফের সুস্থ হতে আরও হয়তো মাসখানেক বা তারও কিছু বেশি সময় লাগতে পারে।
এনকেফালাইটিসের লক্ষণ
- জ্বর।
- প্রচণ্ড মাথাব্যথা।
- হাত-পায়ে অবশতা বা দুর্বলতা।
- খিঁচুনি।
- মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা।
- অজ্ঞান হয়ে যাওয়া।
যেসব পরীক্ষা করা হয়
লম্বার পানচার অর্থাৎ মেরুদণ্ডের হাড়ের মধ্য দিয়ে সুচ ফুটিয়ে ব্রেনের পানি অর্থাৎ সিএসএফ নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হয়। ব্রেন সিটি বা এমআরআইতে মাঝেমধ্যে দাগ পাওয়া যেতে পারে। ব্রেন ইইজি করে ব্রেন ্লো বা খিঁচুনি দেখা হয়ে থাকে।
চিকিৎসা
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভাইরাসের মাধ্যমে এ রোগ হয়। তাই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে কোনো কাজ হয় না। এসাইক্লোভির দেওয়া হয়। এ ছাড়া সিমটোমেট্রিক চিকিৎসা অর্থাৎ উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়। অল্প মাত্রায় এনকেফালাইটিস হলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পুরোপুরি সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু বেশি মাত্রায় হলে অঙ্গহানি হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। যেমন সুস্থ হওয়ার পরও খিঁচুনি হওয়া, পা টেনে হাঁটা বা শরীরের একপাশে পক্ষাঘাত হওয়া বানরণশক্তি কমে যাওয়া।
পরামর্শ
- পোষা জীবজন্তু নিয়মিত পশু চিকিৎসকের কাছে নিন ও ভ্যাকসিন দিন।
- জীবজন্তু কামড় দিলে ক্ষতস্থানটি খুব ভালোভাবে সাবান দিয়ে ঘষে ঘষে ধুয়ে ফেলুন।
- দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন (এআরভি) নেওয়া লাগবে কি না তা জানুন।
- এনকেফালাইটিস হয়ে গেলে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিন।
লেখকঃ ডা· সেলিনা ডেইজি
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ২৮ নভেম্বর ২০০৭
Leave a Reply