আবার এসে গেল বিশ্ব অ্যানেসথেসিয়া দিবস। ১৮৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরের ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালে প্রথম সফল অ্যানেসথেসিয়া প্রয়োগ করা হয়।
বিশ্বব্যাপী বিগত ১৬৩ বছরে অ্যানেসথেসিয়ার প্রভূত উন্নতি অস্ত্রোপচার নিরাপদ এবং রোগীকে বেদনাবিহীন করতে সক্ষম হয়েছে। অগ্রগতির বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে এখন কম্পিউটারচালিত অ্যানেসথেসিয়া যন্ত্র দিয়ে অজ্ঞান করার প্রক্রিয়া আয়ত্ত করার চেষ্টা চলছে। বলা হয়ে থাকে, একজন প্রশিক্ষিত অবেদনবিদের (অ্যানেসথেটিস্ট) হাতে অ্যানেসথেসিয়া-সংক্রান্ত দুর্ঘটনা লাখে একটা হওয়ারও নয়। পাশ্চাত্যের পরিসংখ্যান এ ঘোষণার সম্পূরক। ওই অবস্থায় আসতে আমাদের দেশকে আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।
এ দেশের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা প্রশিক্ষিত জনবল। লোকসংখ্যার অনুপাতে প্রয়োজন ১৪ হাজার অবেদনবিদ। আমাদের রয়েছে এক হাজারের মতো। সত্তরের দশকে সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোথাও অবেদনবিদ ছিলেন না। সেখানে আজ ৭০টির মতো উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও অবেদনবিদ রয়েছেন। অবেদনবিদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে শল্যচিকিত্সার প্রসার ঘটেছে। যদিও এখনো এ দেশে অনেক ক্ষেত্রে অবেদনবিদের অভাবে অত্যন্ত বেদনাদায়ক অস্ত্রোপচারও প্রয়োজনের কারণে বাধ্য হয়ে করতে হয়।
১০ লাখে একটি দুর্ঘটনার অনুপাত অর্জনে আমাদের প্রয়োজন সরকারি দৃষ্টি ও সামাজিক সম্মান। এ দেশের চিকিত্সাক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের কারখানা সরকারি হাসপাতাল। হাসপাতালে অবেদনবিদের পদ পর্যাপ্ত সংখ্যায় বাড়ালে রাতারাতি অবস্থার পরিবর্তন সম্ভব।
এ দেশের চিকিত্সাশাস্ত্রের নিরাময়যোগ্য অংশের বিশেষ অংশ শল্যচিকিত্সা। বর্তমানে প্রশিক্ষিত সার্জন-অবেদনবিদের অনুপাত ১: ১০, অর্থাত্ সার্জনরা ইচ্ছা করলেও সেবা দিতে পারছেন না। অপেক্ষমাণ তালিকা দীর্ঘতর হচ্ছে। এই সার্জন-অবেদনবিদের অনুপাত কমপক্ষে ১: ৪ হওয়া প্রয়োজন।
লক্ষণীয়, জনসাধারণের কাছে অ্যানেসথেসিয়া এখন অনেক গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃত।
আমরা আগেও দেখেছি রোগীদের মধ্যে জ্ঞান হারানোর উত্কণ্ঠা, অ্যানেসথেসিয়ার আগের মুহূর্তে কান্নাকাটি ইত্যাদি। তবে এখন অধিকাংশ রোগী বেশ স্বাভাবিকভাবেই অ্যানেসথেসিয়া গ্রহণ করে। অ্যানেসথেসিয়ার ‘নিরাপদ’ বৈশিষ্ট্য সাধারণের নজরে এসেছে।
এখন প্রয়োজন এই বৈশিষ্ট্য ধরে রাখা এবং নিরাপদ অ্যানেসথেসিয়া সহজলভ্য করা।
অবেদনবিদদের কাজের পরিধি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিউ) ব্যথা নিরাময়ের বিদ্যা (প্রশমনসেবা) পর্যন্ত বিস্তৃত। আমাদের দেশে অবেদনবিদদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ৯০ শতাংশ নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা নিরাময়ে অবেদনবিদেরা বিশেষভাবে পারদর্শী। সরকারি হাসপাতালে এ বিভাগগুলো কার্যকর করা জরুরি।
বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ সেবা দেওয়া হয়। তবে লোকবল বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করলে এ সেবা সব হাসপাতালেই দেওয়া সম্ভব।
খলিলুর রহমান
সাবেক অধ্যাপক, অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১৪, ২০০৯
Leave a Reply