এক ভদ্রমহিলা চিকিৎসকের পরামর্শমতো কয়েক দিন ধরে একটি করে সুগার কোটেট (চিনির প্রলেপ দেওয়া) আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন। তাঁর পাঁচ বছরের শিশুসন্তান তা লক্ষ করে। শিশুটির ধারণা, তার মা প্রতিদিন ক্যান্ডি বা চকোলেট-জাতীয় কিছু খেয়ে থাকে। একদিন তিনি অসাবধানতাবশত শোয়ার ঘরের টেবিলের ওপর ওষুধের প্লাস্টিকের বোতলটি রেখে বাড়ির বাইরে গেলেন। এ সুযোগে শিশুটি দু-তিনটি ট্যাবলেট একসঙ্গে মুখে নিয়ে চকোলেটের মতো করে খাওয়ার চেষ্টা করে। অবধারিতভাবে শিশুটির গলায় ট্যাবলেটগুলো আটকে যায় এবং সে ছটফট করতে থাকে। এ সময় ভদ্রমহিলা ঘরে ঢুকে দেখেন, শিশুটি ছটফট করছে। ভাগ্য সহায়, তিনি সময়মতো এসে পৌঁছেছিলেন। তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ায় সেযাত্রা রক্ষা পাওয়া গেল। এ জন্যই প্রত্যেক ওষুধের মোড়কের গায়ে লেখা থাকে ‘ওষুধটি শিশুর নাগালের বাইরে রাখুন’।
ওষুধ যতই গুণগত মানসম্পন্ন হোক না কেন, ঠিকমতো সংরক্ষণ করতে না পারলে সব আয়োজন ব্যর্থ হয়ে যাবে। ‘সংরক্ষণ’ কথাটা যেভাবে সহজে বলা যায়, ব্যাপারটা তত সহজ নয় মোটেই। নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ নিশ্চিত করা যায় সঠিকভাবে ওষুধ সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে। কারখানায় গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ তৈরির মধ্য দিয়ে সংরক্ষণের ধাপ শুরু হতে থাকে। তৈরি ওষুধ কারখানায় ঠিকমতো সংরক্ষণ করে রাখা হয় এবং প্রয়োজনমতো তা কোম্পানির বিপণন চ্যানেলে পাঠানো হয়। এরপর চাহিদামতো ওষুধ পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছায়। সে পর্যন্ত ওষুধ সংরক্ষণের প্রত্যক্ষ দায়িত্ব কোম্পানিগুলোর।
এ কথা সব সময় মনে রাখতে হবে, মোড়কের গায়ে যে মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ লেখা থাকে, সেটা একান্তভাবে নির্ভর করে ওষুধটি সঠিকভাবে সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ নির্দেশনামতো সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা না গেলে ওষুধের মেয়াদ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই শেষ হয়ে যাবে। ওষুধ যদি শীতাতপ-নিয়ন্ত্রিত কক্ষে সংরক্ষণ করা যায় তাহলে খুবই ভালো হয়। কোনোক্রমেই রান্নাঘরের আশপাশে কিংবা সঁ্যাতসেঁতে ঘরে সংরক্ষণের জন্য ওষুধ রাখা ঠিক হবে না। কোনো ওষুধই ২৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার বেশি, এমন স্থানে রাখা যাবে না।
ওষুধ সংরক্ষণের ‘ঠান্ডা স্থান’ বলতে বোঝানো হয়, যেখানে তাপমাত্রা দুই থেকে চার ডিগ্রির মধ্যে থাকে। আর ‘স্বাভাবিক তাপমাত্রার শুষ্ক স্থান’ বলতে বোঝানো হয়, যেখানকার তাপমাত্রা আট থেকে ২৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকে।
কোনো কোনো ওষুধ সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মিতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এ জন্যই ওষুধটি সরাসরি সূর্যের আলো লাগে এমন জায়গা থেকে দূরে রাখতে হয়। যে কারণে কোম্পানিগুলো অনেক ওষুধ পাথুরে রঙের কাচের বোতলে বাজারজাত করে থাকে। মনে রাখবেন, যদি নির্দেশনা থাকে তাহলেই শুধু ওষুধ ফ্রিজে রাখা যাবে। নির্দেশনা ছাড়া ওষুধ ফ্রিজে রাখার দরকার নেই।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ সুভাষ সিংহ রায়
Leave a Reply