এবার দেখা হলে বলে দেব, স্ট্রেটকাট ভালোবাসি…
লিখেছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।
তখন দেখা হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হতো। এখন তার দরকার হয় না। স্কাইপে ফ্লোরিডায় বসে ফরিদপুরের মেয়েকে বলে দেওয়া সম্ভব—ভালোবাসি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। একজন ছাত্র কথা বলতে চান কোনো এক সহপাঠিনীর সঙ্গে। নিয়ম হলো, এটা করতে হলে প্রক্টরের অনুমতি লাগবে। প্রক্টরের কাছে আবেদন করা হলো। কোনো একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেওয়া হলো, এ দুজনের কথোপকথন পর্বে তিনি উপস্থিত থাকবেন। ড. আনিসুজ্জামান ১৯৫৩ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, তখন এই নিয়ম খানিকটা শিথিল করা হয়েছে। শৈথিল্যটা কী? ড. আনিসুজ্জামানের কাছ থেকে জানা গেল, প্রক্টর ছাড়াও অন্য শিক্ষকেরা শিক্ষার্থী ও শিক্ষার্থিনীর কথোপকথনের অনুমতি দিতে পারতেন। তারপর নাকি আস্তে আস্তে সেই কড়াকড়িও উঠে যেতে লাগল। তখন মেয়েটি হয়তো চার কদম এগিয়ে, পেছনে পেছনে হাঁটছেন ছেলেটি, কথাবার্তা সেরে নিচ্ছেন। সেখান থেকে আজকের প্রজন্ম। তারা কি বুঝবে কেন পাপিয়া সারোয়ার এই গান গেয়েছিলেন, ‘নাই টেলিফোন নাইরে পিয়ন নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম।’ ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়ছেন, খেলছেন, কোচিং ক্লাস করছেন, পিকনিকে যাচ্ছেন, হইহল্লা করছেন। তাঁদের প্রত্যেকের হাতে একটা করে মুঠোফোন। কাউকে ভালো লাগলে সামনাসামনি মুখ ফুটে যদি বলা না যায়, একটা কল করলেই সেটা সেরে নেওয়া যাবে। তাতেও যদি বাধো বাধো ঠেকে, তাহলে এসএমএস করলেই তো ল্যাটা চুকে যায়। মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে, সে দিন ভরা সাঁঝে, যেতে যেতে দুয়ার হতে কী ভেবে ফিরালে মুখখানি— কী কথা ছিল যে মনে—রবীন্দ্রনাথের এই গান কি আর প্রাসঙ্গিক!
কিন্তু মনের কথা বলে ফেললেই সব ল্যাটা চুকেবুকে যায় না। বরং, সেটা থেকেই শুরু হতে পারে কাহিনির। এই পৃথিবীতে ৩০০ কোটি পুরুষ, ৩০০ কোটি নারী, এর মধ্যে দুজনের মধ্যে ঘটে যেতে পারে এক গূঢ় রসায়ন। আজকের দিনে অবশ্য একই এসএমএস—‘ঠিক করেছি সাবান ছাড়া, কোনো কাপড় কাঁচব না,/ ঠিক করেছি তোমায় ছাড়া একটা দিনও বাঁচব না’—৫ জনকে কি ২৫ জনকে পাঠানো যায়। তার মধ্যে তিনজন তো সাড়া দেবে। এর মধ্যে দুজনের সঙ্গে তো ব্যাটিং-বোলিং চালিয়ে যাওয়া যাবে।
তবুও সব ক্ষেত্রে ব্যাটে-বলে হয় না। প্রথম কথা, লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট হতে পারে, কিন্তু যাকে চেনো না, জানো না, তাকে প্রপোজ করে বোসো না। প্রাণ ফেটে গেলেও নয়। বরং কোনো একটা অজুহাত বের করে তার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করো। তার সঙ্গে কথা বলো, মেশো, তাকে সময় দাও। তারপর একদিন নিজেই বুঝে ফেলবে তার চোখের ভাষা। সে তোমাকে চায়, নাকি চায় না। যদি চায় বলে মনে হয়, উপহার দাও, সময় দাও, তোমার জন্মদিনটিতে তুমি কেবল তার সঙ্গেই সময় কাটাতে চাও, বলো। তারপর এক ১৪ ফেব্রুয়ারিতে বলেই ফেলো, এই বন্দীই আমার প্রাণেশ্বর। আর যদি বোঝো, ওর দিক থেকে সাড়া পাওয়ার সম্ভাবনা কম, তাহলে একবার আকারে-ইঙ্গিতে বলে দেখতে পারো। সাড়া পেলে তো ভালোই, না পেলে যেন কিছুই হয়নি, এমন ভাব করে চলতে থাকো। ‘কা তব কান্তা, পৃথিবীতে কে কাহার। যাহার জন্য চক্ষু বুজে বহিয়ে দিলাম অশ্রু সাগর, তাহারে বাদ দিয়েও দেখি বিশ্বভুবন মস্ত ডাগর।’ ওকে ছাড়াও তোমার পৃথিবী খুব ভালো চলবে। তাই বলে ওকে তোমার জীবনের শত্রু জ্ঞান কোরো না। ওকে তো তুমি মনে মনে ভালোই বাসো। খারাপ তো বাসো না।
হিসাব করে ভালোবাসা হয় না। প্রেমেরই ফাঁদ পাতা ভুবনে, কে কোথায় ধরা পড়ে কে জানে। তবে আজকের দিনে হিসাব না করেই বা উপায় কী। ক দেখতে ভালো, খ-এর কণ্ঠস্বর দারুণ, গ খুবই অ্যাডভেঞ্চারাস, ঘ খুবই রোমান্টিক আর ঙ-এর ফিউচার ভালো। সবাই তোমাকে পছন্দ করে। তুমি করবেটা কী!
ছেলে আর মেয়েদের মধ্যে আকর্ষণটা একেবারে ছোটবেলা থেকেই অনুভব করা যায়। তবুও বলি, যাকে বলে সঙ্গী বা সঙ্গিনী নির্বাচন, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে তো নয়ই, অনার্সের আগে না করাই ভালো। কারণ, প্রেমের মতো সর্বগ্রাসী জগৎপ্লাবী অনুভূতি আর কিছুই নেই। এ তোমার সমস্ত অস্তিত্বকে আচ্ছন্ন করে ফেলবে। ফলে তোমার রেজাল্টের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। ‘ওরা সুখের লাগি চাহে প্রেম, প্রেম মিলে না, শুধু সুখ চলে যায়।’ নতুন প্রজন্মের পাঠক কি হেসে উঠছে? তোমাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাহলে তোমরাই বলো, আমি শুনি। আরেকটা কথা, প্রেম ভেঙেও যায়। কোথায় যেন একটা জরিপের ফল পড়েছিলাম, মানুষের জীবনে গড়ে প্রেম আসে ছয়বার। যদি তোমার জীবনে প্রেম তারও চেয়ে বেশিবার এসে থাকে, তাহলে তুমি অন্য কারওটা কমিয়ে দিয়েছ। আর যদি এখনো না এসে থাকে, হতাশ হোয়ো না। আসবে। ধৈর্য ধরো। ধৈর্য ধরা যাচ্ছে না? তাহলে রবীন্দ্রসংগীত শোনো, ‘কবে আর হবে থাকিতে জীবন আঁখিতে আঁখিতে মধুর মিলন!’ সান্ত্বনা পাবে। তোমরা যে বলো দিবস-রজনী ‘ভালোবাসা’ ‘ভালোবাসা’, সখী ভালোবাসা কারে কয়? সে কি কেবলই যাতনাময়? সে কি কেবলই চোখের জল? সে কি কেবলই দুখের শ্বাস? লোকে তবে করে কী সুখেরই তরে এমন দুখের আশ…।
তার পরও ঝুঁকি নিয়ে স্ট্রেটকাট বলে দিতে পারো, ভালোবাসি। কারণ, কবি নির্মলেন্দু গুণই বলেছেন, ‘কিছু না পাওয়ার চেয়ে ভালোবেসে দুঃখ পাওয়া ভালো…’
আনিসুল হক
নকশার এ আয়োজনে মডেল হয়েছেন নদী ও ইমরান।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০৮, ২০১০
কাজী জাহিদুল ইসলাম
এখনও অনেক তথ্য অজানা । ভাল লাগল ।
ধন্যবাদ ।
কাওসার আহমেদ
আমার ভাসায় মন্তব্য করতে হলে বল্বঃ
জটিল লাগছে অনেক মজা পাইছি আর অনেক কিছু শিখলামও ।
কাওসার আহমেদ
ভুলে গেছিলাম
ধন্যবাদ আপনাকে।
monir
vere good
sudipto
khub sundar lekhati..kintu kichu kichu kalponic o bote…bt afterall made me smile….:)