আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলনের শেষ দিনে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে অর্থনৈতিক অগ্রগতি, স্বাস্থ্যের উন্নতি ও জীবনমান বাড়বে। সম্মেলনে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে যে বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম আরও কয়েক বছর বেশি ও অস্থিতিশীল থাকবে। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে দরিদ্র দেশের দরিদ্র শ্রেণীর মা ও শিশুপুষ্টির ওপর। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী ও জাতীয় সরকারগুলোকে দেরি না করে মা ও শিশুপুষ্টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ১৯তম আন্তর্জাতিক পুষ্টি সম্মেলন শেষ হয়েছে। থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে এ সম্মেলন শুরু হয় ৫ অক্টোবর। আয়োজকেরা সমাপনী অনুুষ্ঠানে বলেছেন, পৃথিবীর ১০৭টি দেশের চার হাজার ৫১৭ জন প্রতিনিধি এতে অংশ নেন। চার বছর পর পরবর্তী সম্মেলন হবে স্পেনে।
কানাডার ওয়াটার লু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুজান হার্টন বলেন, পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে স্বাস্থ্যের অন্যান্য খাতে বিনিয়োগ কম প্রয়োজন হয়। পুষ্টি খাতে বিনিয়োগ বাড়ালে উত্পাদনশীলতা বাড়ে। তিনি বলেন, পুষ্টির মান উন্নত করার কাজটি অসম্ভব না হলেও কঠিন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে স্কুলের শিশুর কাছে যাওয়া সহজ, কারণ তাদের এক জায়গায় নির্দিষ্ট সময়ে পাওয়া যায়। কিন্তু দুই বছরের শিশুর কাছে পৌঁছানো কঠিন।
মানুষের আচরণ পরিবর্তন করে, অনুপুষ্টি ও কৃমিনাশক বড়ি দিয়ে এবং খাদ্যকেন্দ্রিক পদক্ষেপের মাধ্যমে অপুষ্টি দূর করতে হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে কম খরচ হবে আচরণ পরিবর্তনের বিকল্পে। আর খাদ্যকেন্দ্রিক পদক্ষেপে খরচ বেশি। সুজান হার্টন বলেন, বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় বছরে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দরকার হবে। অনেক খাতের তুলনায় তা কম। অপুষ্টি মোকাবিলায় আলাদা তহবিল গড়ে তোলার সুপারিশ করেন তিনি।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মকর্তা মার্টিন ব্লোয়েম বলেন, বিশ্ব খাদ্যের মূল্য এক দশকেরও বেশি সময় ধরে অস্থিতিশীল ও বেশি থাকতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যমূল্য বাড়লে মানুষ কম খায় বা নিম্নমানের খাবার খায়। কোনো ক্ষেত্রে অবস্থা সামাল দিতে ছেলেমেয়ের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেন অভিভাবকেরা। অনেকে অধিক ক্ষতি পোষানোর জন্য বেশি সময় ধরে কাজ করে। এ অবস্থার সবচেয়ে বড় শিকার হয় নারী ও শিশু।
আন্তর্জাতিক খাদ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জেফ লেরি বলেন, মেক্সিকো, হন্ডুরাস ও নিকারাগুয়ায় গবেষণায় দেখা গেছে, খাদ্যমূল্য বাড়ার কারণে শিশুরা অনুপুষ্টি কম পায় এবং তাদের বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।
এবারের সম্মেলন আয়োজনে খরচ বহন করেছে বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানি। এর বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন একাধিক দেশের প্রতিনিধি। তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ছিলেন ভারতের বন্দনা প্রসাদ। ভারতের কিছু এলাকায় ইউনিসেফ শিশুদের মধ্যে পাম্পিনাট নামের তৈরি খাবার বিতরণ শুরু করে। বন্দনা প্রসাদ মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক সনদের প্রশ্ন তুলে সম্প্রতি ইউনিসেফের পাম্পিনাট বিতরণ বন্ধ করেছেন।
পুষ্টির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক ও জাতীয় নেতৃত্ব, আন্তর্জাতিক পুষ্টি তহবিল গড়ে তোলা, শিশুখাদ্য প্রস্তুতকারক বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণ করা— এসব বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই সম্মেলন শেষ হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, অক্টোবর ১০, ২০০৯
Leave a Reply