শীতের সময় অনেকেরই হাঁচি, গলা-খুসখুস, নাক বন্ধ, মাথাব্যথা, জ্বর প্রায়ই লেগে থাকে। এই ভাইরাস ইনফেকশনের প্রকোপে শিশু থেকে বয়স্ক সবাইকেই কমবেশি কাবু হতে হয়। আরেকটি সমস্যা হলো, ঠান্ডা লেগে সর্দি-জ্বরের জন্য যেসব ভাইরাস দায়ী তা সংক্রামক; একজন থেকে আরেকজনে খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়ে। তাই ঠান্ডা যাতে না লাগে সেসব সাবধানতার সঙ্গে সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকেও দূরে থাকা জরুরি। ঠান্ডা লাগা থেকে বাঁচতে একেবারে ফলপ্রসূ কোনো পদ্ধতি না থাকলেও কয়েকটি সাধারণ নিয়ম মেনে চললে পুরো শীতকালই সুস্থভাবে কাটাতে পারবেন।
লক্ষণ
- নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, ক্রমাগত হাঁচি, গলা ব্যথা, খেতে কষ্ট হওয়া, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, পুরো শরীরে ব্যথা।
প্রাথমিক সতর্কতা
- ঘুম থেকে উঠেই কোনো গরম পোশাক ছাড়া বারান্দায় বা বাইরে যাবেন না।
- ঠান্ডা পানি না খেয়ে হালকা গরম পানি খেতে পারেন।
- খুব ভোরে বা সন্ধেবেলা হালকা চাদর গায়ে দিন বা মোটা পোশাক পরুন।
- বাড়িতে চটি পরে থাকুন।
- হালকা গরমপানিতে গোসল করুন।
- হালকা গরমপানিতে লবণ কিংবা চায়ের লিকার দিয়ে গার্গল করুন।
আরও যা করতে পারেনঃ
বারবার হাত ধুয়ে ফেলুনঃ সংক্রমণ রুখতে ভালো উপায় হলো হাত ধোয়া। বিশেষ করে বাইরে থেকে এসে অবশ্যই অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান দিয়ে হাত ধোবেন।
মুখে হাত দেবেন নাঃ বারবার মুখে হাত না দেওয়াই ভালো। অযথা চোখ কচলানো, নাকে হাত দেওয়া থেকে ইনফেকশন ছড়ায়। বাড়িতে কেউ সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হলে ডিসপোজেবল (একবার ব্যবহার্য) জিনিসপত্র ব্যবহার করাই ভালো। কাপড়ের রুমাল ব্যবহার না করে টিস্যু ব্যবহার করুন। যিনি অসুস্থ তাঁর কাপ, গ্লাস প্রভৃতি আলাদা রাখুন।
ঘরদোর পরিষ্কার রাখুনঃ দরজার হাতল, সুইচ বোর্ড, কম্পিউটারের কি-বোর্ড, টেলিফোন, রিমোট কন্ট্রোল ইত্যাদি ইনফেকশন ছড়ানোর অন্যতম উৎস। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তি এসব জায়গায় হাত দিলে সেখানে ভাইরাস অনেকক্ষণ পর্যন্ত থাকে। তাই সাবানপানি বা জীবাণুনাশক তরল দিয়ে দিনে দু-তিনবার পরিষ্কার করুন।
পেপার টাওয়েল ব্যবহার করুনঃ বাথরুম ও রান্নাঘরে কাপড়ের বদলে কাগজের তোয়ালে (পেপার টাওয়েল) ব্যবহার করতে পারেন। কারণ কাপড়ে জীবাণু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়।
স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন বজায় রাখুনঃ নির্দিষ্ট সময়ে খাওয়া, যথেষ্ট পরিমাণে ঘুম ও নিয়মিত ব্যায়াম শরীরের রোগপ্রতিরোধ-ক্ষমতা বাড়ায়। ফলে সহজেই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া থেকে দূরে থাকা যায়।
ঘরোয়া চিকিৎসাঃ ঠান্ডাজনিত অসুস্থতার তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে কিছু ব্যবস্থা নিলে স্বস্তি বোধ হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যানালজেসিক ও প্যারাসিটামল খাওয়া ছাড়াও যতটুকু পারেন বিশ্রাম নিন। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খান। হালকা গরমপানি, ভেষজ চা, মুরগির স্যুপ, টমেটোর স্যুপ খেলে গলায় আরাম বোধ হয়, ভালো লাগে। নাক বন্ধ ও মাথা ভার লাগা কমাতে হালকা গরমপানি দিয়ে গোসল করুন।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো।
লেখকঃ ডা· গৌতম দাশগুপ্ত
Leave a Reply