‘বাকবাকুম পায়রা মাথায় দিয়ে টায়রা’ কিংবা ‘হাট্টিমা টিম টিম’। এসব ছড়া সব শিশুরই প্রিয়। সেই প্রিয় ছড়াগুলো যখন তারা পোশাকে দেখতে পায়, তখন তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। দোকানেই পড়তে শুরু করে প্রিয় ছড়ার পঙিক্ত। আগ্রহী হয়ে কেনেও। পোশাক ও ছড়া থেকে শিখেও ফেলে কেউ কেউ। পোশাকে ছড়া, বর্ণমালার এ ব্যবহার সংস্কৃতির ইতিবাচক দিক বলে মনে করেন শিল্পী হাশেম খান। তিনি বলেন, ‘আমাদের পোশাকে নানা ধরনের পরিবর্তন এসেছে। আগে শুধু বর্ণমালা ব্যবহার করা হতো। এখন বাংলা শব্দ, কবিতা বা ছড়ার ব্যবহার হচ্ছে, যা নতুন মাত্রা যোগ করেছে সংস্কৃতিতে। রুচিসম্মতভাবে বাংলা ভাষাকে শিশুদের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। তারা শিখছে। শিশুর মনে সবকিছুরই দ্রুত প্রভাব পড়ে। তাই স্বাভাবিকভাবেই বর্ণমালা বা ছড়ারও প্রভাব পড়বে। এটি ইতিবাচক। নিজ দেশের শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে ছড়ার মাধ্যমে। পোশাকে বর্ণমালা, ছড়া, প্রবচন বা গানের কথা ব্যবহার রুচিতে বৈচিত্র্য এনেছে, যা শিশুরাও জানছে, শিখছে।’
শুধু বিশেষ দিবস সামনে রেখে নয়, সারা বছরই শিশুদের পোশাকে মোটিফ হিসেবে ছড়া, বর্ণমালার ব্যবহার করে ফ্যাশন হাউস নিত্য উপহার। এর স্বত্বাধিকারী বাহার রহমান জানান, এ বছর শিশুদের টি-শার্টে ছড়াকেন্দ্রিক নতুন ডিজাইন করা হয়েছে। কানা মাছি ভোঁ ভোঁ, হরিণ চলে তিড়িং বিড়িং থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন গানের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ‘নীল আকাশে কে ভাসালো সাদা মেঘের ভেলা’, ‘আমরা সবাই রাজা’—এসব গানের কথা ব্যবহার করা হয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস, বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান বা কবিতাও উঠে এসেছে এসব পোশাকে।
তবে পুরোপুরি শিশুদের উপযোগী করে, যাতে সহজেই তারা জানতে পারে, বুঝতে পারে। হ্যারি পটার, ওয়ার্ল্ড ডিজনির বই তাদের স্বপ্নের রাজ্যে নিয়ে যায়। শিশুদের কাছে এগুলো খুব প্রিয়। সেভাবেই ঠাকুমার ঝুলিও আমরা শিশুর কাছে পৌঁছে দিতে চাই। কারণ, রূপকথার এসব গল্প-কাহিনি তারা পছন্দ করে। শিক্ষার মাধ্যম বাংলা-ইংরেজি যা-ই হোক না কেন, তাদের কাছে এসব তুলে ধরতে পারলে বাংলা ভাষায়ও যে মজার কত কিছু আছে, তারা তা জানবে। তাই শিশুদের পোশাকে ব্যবহার করা হয়েছে ঠাকুমার ঝুলির রূপকথা। এসবের সঙ্গে মজার মজার চিত্রকর্ম বা রূপকথার চিত্ররূপ স্ক্রিনপ্রিন্টের মাধ্যমে টি-শার্টে, ফতুয়ায় ব্যবহূত হয়েছে। উজ্জ্বল রংকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, শিশুদের যাতে আর্কষণ করে।’
শিশুর আধো আধো বুলি শুনতে সবারই ভালো লাগে। আর সেসব আধো আধো বুলি নিয়ে ফ্যাশন হাউস যাত্রা এনেছে টি-শার্ট, শার্ট ও ফতুয়া। যাত্রার ধানমন্ডি শাখার আউটলেট ব্যবস্থাপক মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘বছরজুড়েই বাংলা ভাষার নানা ব্যবহার থাকে শিশুদের পোশাকে। শিশু প্রথম যখন কোনো কিছু চিনতে শেখে, বুঝতে শেখে, তার তখনকার ভাবনাকেই উপস্থাপন করা হয়েছে এসব পোশাকে। আধো আধো বুলি তুলে ধরেছি তাদের পোশাকে, যাতে তারা ভাবে, এ ভাষা তাদের ভাষা। টি-শার্ট ছাড়া ফতুয়া ও শার্টের কাটছাঁটেও বৈচিত্র্য আছে। হালকা নীল, হালকা গোলাপি, হলুদাভ, সবুজসহ নানা উজ্জ্বল রং ব্যবহার করা হয়েছে। দুই থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুর উপযোগী এসব পোশাক।’
কোথায় পাবেন: ফ্যাশন হাউস সাদাকালো, বাংলার মেলা, নিপুণ ছাড়াও আজিজ সুপার মার্কেটের বিভিন্ন দোকানে এসব পোশাক পাবেন। এসব পোশাক ১৫০-৪০০ টাকার মধ্যে সব জায়গায় পাবেন। এ ছাড়া কেউ চাইলে শিশুর আঁকা ছবি ও হাতের লেখা স্ক্রিনপ্রিন্টের মাধ্যমে তার পোশাকে ব্যবহার করতে পারেন। তাতে সে ছড়া শিখতে, পড়তে আগ্রহী হবে। সৃজনশীলতা বাড়বে। এর জন্য খরচও বেশি হবে না।
তৌহিদা শিরোপা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, ফেব্রুয়ারী ০১, ২০১০
Leave a Reply