ঢাকার ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালের পাশে পুরোনো ধাঁচের এক বাড়ি। লম্বা লন পেরোনোর সময় বারবার চোখ আটকে যাবে হরেক পদের লতাগুল্ম আর গাছগাছালিতে। তিন কোনা বাঁশের খাঁচায় মোড়া কাঁঠালগাছের কোল ঘেঁষে ছোট্ট একটা সিঁড়ি। ভেতরে ঢুকতেই আপনাকে ঘিরে ধরবে একঝাঁক লাল আলো। এটাই ক্যাফে ম্যাঙ্গো। পরিচিত ঢাকার ভেতরে একেবারেই অন্য রকম একটা জায়গা। নিজের মত করে কিছু সময় উপভোগের জন্য চমৎকার।
শুরুর কথা
২০০০ সালের কথা। যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় পড়াশোনা শেষ করে দেশে ফিরেছেন সালাউদ্দিন আহমেদ। নিজেদের ধানমন্ডির বাসার বিশাল গ্যারেজটা পড়ে ছিল অলসভাবে। ভাবলেন, জায়গাটাকে কাজে লাগানো উচিত। পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে গ্যারেজের একটা অংশে দিব্যি রেস্টুরেন্ট দিয়ে বসে গেলেন। সেই থেকে শুরু। দিনে দিনে বাসার গ্যারেজ ছেড়ে ২০০৭ সালে ক্যাফে ম্যাঙ্গোর নতুন জায়গা হয়েছে গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালের পাশে। আরও দুটো শাখা যুক্ত হয়েছে। একটি গুলশানে, আর তৃতীয় শাখাটি মোহাম্মদপুরের জাকির হোসেন রোডে। আড্ডা আর খাওয়ার জন্য শহরবাসীর কাছে ক্যাফে ম্যাঙ্গোর তৈরি হয়েছে আলাদা একটা পরিচিতি। সালাউদ্দিন আহমেদ বললেন, ‘যখন প্রথমে আমার খাবারের দোকানের পরিকল্পনা সবার সঙ্গে ভাগ করলাম, অনেকেই ভেটো দিল। বলল, আমি যেটা করতে চাইছি সে রকম আমেরিকাতেই সম্ভব, বাংলাদেশে নয়। একটা জেদ চেপে গেল। ক্যাফে ম্যাঙ্গোর প্রতিটি কোনা আমার নিজ হাতে বানানো। ডিজাইন থেকে শুরু করে সবকিছুতে।’ সে কারণেই কিনা ক্যাফে ম্যাঙ্গোর প্রতিটি কোনায় আন্তরিকতার ছোঁয়া।
আরাম করে আড্ডা
কীভাবে বসে আড্ডা দিতে আরাম পান আপনি? চেয়ারে, সোফায়, টুলে, নাকি মাটিতে? এর সব ব্যবস্থাই করা আছে ক্যাফে ম্যাঙ্গোতে। সঙ্গে নরম আলো আর গরম খাবার। কানে ভেসে আসবে প্রিয় সব গান। বাংলা থেকে ইংরেজি কোনো ব্যাপার নয়, ভালো গানই সেখানে আসল কথা। সব মিলিয়ে মায়াময় এক পরিবেশ। আপনি অর্ডার দিলে খাবার তৈরি হবে। এই সময়টা পড়ার জন্য আছে দেশি-বিদেশি একগাদা ম্যাগাজিন। আছে আলোকচিত্রভরা বই। ম্যাগাজিনে মনোযোগ দিতে না চাইলে কেবল স্থাপত্যশৈলী দেখেই কাটিয়ে দিতে পারবেন অনেকটা সময়। কোথাও খোপ খোপ করে বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও মাথার ওপর তৈরি করা হয়েছে একটু বাড়তি জায়গা। পুরো ক্যাফে জুড়েই এই জায়গা আর রং নিয়ে খেলেছেন সালাউদ্দিন আহমেদ। চাইলে খোলা হাওয়ায় বসেও আড্ডা দিতে পারেন। বাঁশ দিয়ে মুড়ে চমৎকার এক পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে সেখানটায়। ‘আমি চেয়েছিলাম লোকজনের মধ্যে একটা নেশা তৈরি করতে। একটা জায়গার প্রতি নেশা। ভালো লাগার কারণে সে যেন বারবার একই জায়গায় আসতে চায়। এ কারণে দেখবেন, আমাদের এখানে যাঁরা আসেন, তাঁরা নিয়মিতই আসেন।’ বলছিলেন সালাউদ্দিন আহমেদ।
খাবার-দাবার
আড্ডা দিন আর যা-ই করুন, খাবারটা কেমন জানতে হবে তো। খাবারের মেন্যুতে শুধু কফি পাওয়া যায় আট পদের। আর চায়ের পদ নয়টি। এ ছাড়া আছে স্যুপ, বিভিন্ন ধরনের পাওয়ার মিল, ব্রেকফাস্ট, কুকিজ, ডেজার্ট প্রভৃতি। সম্প্রতি এর সঙ্গে আরও যুক্ত হয়েছে চিকেনের কন্টিনেন্টাল খাবার, বিফ স্টেক, সি ফুড, রাইস মিলিয়ে আরও নতুন গোটা ত্রিশেক পদ। আপনি অর্ডার দিলে তবেই খাবার রান্না করা হবে। রান্না থেকে শুরু করে পরিবেশনের প্রতিটি ধাপ স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। খাবার সরবরাহ করতে আসা মানুষগুলোর ব্যবহারেও পাবেন বাড়তি আন্তরিকতা।
শুধু খাওয়া নয়
শুধু খাওয়া-দাওয়া আর আড্ডা নয়, এখানে নিয়মিত চলে চিত্রকলার প্রদর্শনী। ঘুরে ঘুরে নিজের ইচ্ছেমতো দেখতে পারবেন এসব প্রদর্শনী। চাইলে পারবেন কিনতেও। তরুণ চিত্রকরদের বিনা মূল্যে এই প্রদর্শনী করার সুযোগ ক্যাফে ম্যাঙ্গো দিয়ে আসছে শুরু থেকেই। প্রতিমাসেই দেয়ালের ছবিগুলো পাল্টে যায়। আসে নতুন শিল্পীর আঁকা ছবি। আর ক্যাফে ম্যাঙ্গোর দেয়ালগুলো ভরে ওঠে নিত্যনতুন ছবিতে। তাই একঘেঁয়েমি লাগার সুযোগই নেই। ছবিগুলো আপনাকে অনায়াসে ঘুরিয়ে নিয়ে আসবে অন্য দুনিয়া থেকে।
স্প্যাগেটি উইথ মরোক্কান মিট সস
উপকরণ: গরুর মাংসের কিমা ১০০ গ্রাম, ক্যাপসিকাম ১০০ গ্রাম, টমেটো সস, চিলি সস, স্প্যাগেটি পরিমাণমতো
পার্সলিপাতা পরিমাণমতো
রসুন ও অন্যান্য মসলা।
প্রণালি: গরুর মাংসের কিমা অল্প তেলে রসুন ও অন্যান্য মসলা দিয়ে হালকা ভাজতে হবে। এরপর অল্প পানি দিয়ে পাঁচ মিনিট সেদ্ধ করতে হবে।
এ সময় চিলি সস, টমেটো সস, দারচিনি, এলাচ, জিরাগুঁড়া, জায়ফলসহ মিশ্র মসলা পরিমাণমতো দিতে হবে।
লবণ, চিনি, টেস্টিং সল্ট দিয়ে হালকা আঁচে নাড়তে হবে।
এবার পার্সলিপাতা লবণ দিয়ে ভেজে নিতে হবে।
স্প্যাগেটি আদা ও লবণ দিয়ে ভালোমতো সেদ্ধ করে নিতে হবে। স্প্যাগেটির ভেতরে পার্সলিপাতা দিয়ে দিতে হবে।
এরপর প্লেটে প্রথমে স্প্যাগেটি সুন্দর করে সাজাতে হবে। তার ওপর গরুর মাংসের কিমা দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
পার্থ সরকার
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১১, ২০১০
Leave a Reply