মানুষের জীবনে আনন্দঘন গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের দিনটিকে ঘিরে সবার মনেই থাকে হাজারো স্বপ্ন। সেই স্বপ্নকে সার্থক করতে আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে বেসরকারি ব্যাংক।
বিয়ের নানা আনুষ্ঠানিক খরচ বহনের জন্য ঋণ দেয় তারা। কিছু ব্যাংক সরাসরি বিয়ের জন্য ঋণ দিচ্ছে আর কিছু ব্যাংক ব্যক্তিগত ঋণ দিচ্ছে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য।
প্রাইম ব্যাংক
প্রাইম ব্যাংক সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেয়। সুদের হার ১৬ থেকে ১৭ শতাংশ। এ ঋণ পেতে আবেদনকারী চাকরিজীবী হলে তাঁর মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা এবং আত্মকর্মসংস্থানকারী হলে তাঁর মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকা হতে হবে।
এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে সর্বোচ্চ তিন বছরের মধ্যে।
ট্রাস্ট ব্যাংক
বিয়ের ঋণ যদি অভিভাবক নিতে চান, তবে তাঁর বয়স ২৫ থেকে ৬০ বছর এবং যিনি বিয়ে করবেন তিনি যদি নিজেই আবেদনকারী হন, তাহলে তাঁর বয়স ২৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে হতে হবে। অভিভাবকদের আয়ের উৎসের ওপর ভিত্তি করে এ ঋণ দেওয়া হয়। আর যিনি বিয়ে করবেন, তিনি নিজে আবেদনকারী হলে বিয়ের যেকোনো ধরনের প্রমাণ (এগ্রিমেন্ট) এ ক্ষেত্রে লাগবে। ঋণের পরিমাণ সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ তিন বছর। সে ক্ষেত্রে সুদের হার ১৭ শতাংশ। ঋণগ্রহীতা চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ী হলে তাঁর আয় মাসিক ২০ হাজার টাকা হতে হবে।
এইচএসবিসি ব্যাংক
এ ব্যাংকে ঋণ পেতে চাকরিজীবী হলে তাঁর আয় কমপক্ষে ৪০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আয়ের প্রমাণসাপেক্ষে ৫০ হাজার টাকা হতে হবে। যদি আবেদনকারী অটো পে অথবা সেপস গ্রাহক হন, তবে মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা হতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ২৩ থেকে ৬০ বছর হতে হবে। যদি আপনি অটো পে গ্রাহক হয়ে থাকেন, তবে মাসিক আয়ের ছয় গুণ এবং সেপস গ্রাহক হয়ে থাকেন, মাসিক আয়ের ১০ গুণ পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যাবে। সুদের হার ১৯ শতাংশ। প্রতিটি ঋণই মাসিক কিস্তিতে চার বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। কোনো ব্যক্তিগত গ্যারান্টার বা নগদ জামানতের প্রয়োজন নেই।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংক
ব্যাংকে পারসোনাল লোনের সাবপ্রোডাক্ট হলো বিয়ের ঋণ। অর্থাৎ শুধু বিয়ের উদ্দেশ্যকে প্রাধান্য দিয়ে এ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। আবেদনকারী চাকরিজীবী হলে তাঁর মাসিক আয় ১০ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ী হলে তাঁর মাসিক আয় ৩০ হাজার টাকা হতে হবে। বিয়ের আনুষ্ঠানিক খরচের লক্ষ্যে এ ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে। এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হয়। সুদের হার ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ।
ইস্টার্ন ব্যাংক
ইস্টার্ন ব্যাংক সরাসরি বিয়ের জন্য ঋণ দেয় না। এ ব্যাংকে পারসোনাল লোনের এনি পারপাসের আওতায় যে ঋণ দেওয়া হয়, তাতে আবেদন ফরম পূরণের সময় বিয়ের উদ্দেশ্যে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে, তা লিখে দিতে হবে। আবেদনকারীর বয়স ২২ থেকে ৬০ বছর হতে হবে। আবেদনকারী চাকরিজীবী হলে তাঁর আয় ১৫ হাজার এবং ব্যবসায়ী হলে তাঁর আয় ২৫ হাজার টাকা হতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। সুদের হার ১৫ শতাংশ। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ এক থেকে পাঁচ বছর।
সিটি ব্যাংক
এ ব্যাংক থেকে বিয়ের উদ্দেশ্যে আপনি ঋণ নিতে পারেন সিটি সলিউশনের মাধ্যমে। ঋণের পরিমাণ ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ১২ থেকে ৬০ মাস। সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে কোনো গ্যারান্টার লাগবে না। প্রসেসিং ফি ১ দশমিক ৫ শতাংশ। আবেদনকারী চাকরিজীবী হলে তাঁর মাসিক আয় ১৫ হাজার টাকা। আত্মকর্মসংস্থানকারী হলে তাঁর আয় ২৫ হাজার টাকা এবং ব্যবসায়ী হলে তাঁর আয় ৩০ হাজার টাকা হতে হবে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক
পারসোনাল লোনের আওতায় এ ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া যায়। তবে আবেদন ফরমে অবশ্যই বিয়ের উদ্দেশ্যে এ ঋণ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করতে হবে। সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত এ ঋণ দেওয়া হয়ে থাকে। এক থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে এ ঋণ পরিশোধ করতে হয়। সুদের হার পরিবর্তনশীল। প্রসেসিং ফি ঋণের পরিমাণের দুই শতাংশ। আবেদনকারীর আয় ১৫ হাজার টাকা হতে হবে।
বিয়ের আয়োজন করা সহজ কথা নয়। আবার ধুমধাম করে বিয়ে করার শখটাও তো একদম জলাঞ্জলি দেওয়া যায় না। পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকলে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিয়ের আয়োজন করতে পারেন।
নাঈমা আমিন
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১১, ২০১০
Leave a Reply