শীতকালে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার অপরিহার্য। প্রাথমিক পর্যায়ে ময়েশ্চারাইজারের কাজ হলো ত্বকের বাইরের পরতে পানি বা আর্দ্রতা ধরে রাখা। এ ছাড়া সংবেদনশীল ত্বককে নিরাপত্তা দেওয়া, ত্বকের মান উন্নত করা এবং ত্বককে আরও মসৃণ করে তোলাও ময়েশ্চারাইজারের কাজ। নিজের বয়স, ত্বকের ধরন এবং ত্বকে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কি না, সেসব বিষয় লক্ষ রেখে সঠিক ময়েশ্চারাইজারটি বেছে নিতে পারলে শীতকালেও আপনি পেতে পারেন নরম ত্বক।
এ প্রসঙ্গে বিউটি সেলুন ‘রেড’-এর রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা কামাল বলেন, ত্বকের ধরন বুঝে উপযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজারের নিয়মিত ও সঠিক ব্যবহারে ত্বকে বার্ধক্যের ছাপ পড়াকেও বিলম্বিত করা সম্ভব। ময়েশ্চারাইজার সাধারণত লোশন ও ক্রিম হিসেবে পাওয়া যায়। বাজারে বিভিন্ন উপাদানসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার রয়েছে; যেমন—ভিটামিন ই, অ্যালোভেরাযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি। তিনি জানান, তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফল ও ভেষজ নির্যাসসমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো হবে। শুষ্ক ত্বকের জন্য বাদামসমৃদ্ধ, যেমন—আমন্ড বাদামযুক্ত ময়েশ্চারাইজার উপকারী। মিশ্র ত্বকের অধিকারী ব্যক্তিরা যেকোনেটি, অথবা স্বাভাবিক ত্বকের জন্য যে লোশন পাওয়া যায় তা ব্যবহার করতে পারেন। শীতকালে গোসলের পর অনেকের শরীর চুলকায়। অনেকের ত্বকে আ্য্যলার্জির সমস্যাও থাকে। সে ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজার বিশেষভাবে পরীক্ষিত কি না, তা লেবেল দেখে কিনুন। তৈলাক্ত ত্বকে আর্দ্রতা রক্ষায় পেট্রোলিয়াম জেলিও ভালো। শীতে অলিভ অয়েলও ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে অলিভ অয়েল মেখে রোদে বের হলে রোদে পোড়া বা ট্যান হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। বডি মিল্ক হিসেবেও কিছু ময়েশ্চারাইজার বাজারে পাওয়া যায়। লোশনের চেয়ে ঘন হয়ে থাকে বডি মিল্ক। অনেক সময় আর্দ্রতা ধরে রাখতে পারে এবং বেশি পুষ্টিদায়ক বলে বডি মিল্ক ত্বককে আরও কোমল করে তোলে। ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করতে গ্লিসারিনও বেশ কাজ দেয়। তবে গ্লিসারিন অবশ্যই পানিতে মিশিয়ে ব্যবহার করুন। এ ক্ষেত্রে মিশ্রণে গ্লিসারিন ও পানির অনুপাত হবে ২: ১।
শীতে ভ্যানিশিং ক্রিমের বদলে কোল্ড ক্রিম বেছে নিন। রাতের জন্য নাইট ক্রিম ব্যবহার করুন। তবে শীতকাল আর গরমকালের নাইট ক্রিম ভিন্ন হবে। মুখ ধুয়ে রাতে নাইট ক্রিম মেখে ঘুমালে সারা রাত ত্বক আর্দ্রতা পাবে, নরম থাকবে। তবে সকালে উঠে বাইরে যাওয়ার আগে মুখ থেকে নাইট ক্রিম অবশ্যই ধুয়ে ফেলতে হবে। অনেকের ত্বকের বিভিন্ন অংশ হালকা ও গাঢ় রঙের হয়ে থাকে। এমন ত্বকে সমান উজ্জ্বলতা আনতে জোজোবা-সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার খুব উপকারী। ত্রিশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা শীতে অ্যান্টি-এজিং ও অ্যান্টি-রিংকল ক্রিম ব্যবহার করুন।
‘হারমনি স্পা’র রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানা জানান, শুষ্ক ত্বকে অবশ্যই তেলযুক্ত এবং তৈলাক্ত ত্বকে তেলহীন বা পানিযুক্ত লোশন ব্যবহার করতে হবে। গরমে লাইট এবং শীতে ডিপ ময়েশ্চারাইজার বেছে নিতে হবে। মুখে রোদ প্রতিরোধক ময়েশ্চারাইজার লাগানো উচিত। কারণ, শীতের রোদ বেশ কড়া হয়ে থাকে। ঘরে বসেও কিছু প্যাক তৈরি করে নিজেই ময়েশ্চারাইজ করতে পারেন ত্বককে।
ময়েশ্চারাইজার হিসেবে দুধ ও মধু সমপরিমাণ মিশিয়ে মুখে ম্যাসাজ করে ১৫-২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এর সঙ্গে সমপরিমাণ মসুর ডাল বেটে মেশালে সেটা ডিপ ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে। তারপর চাইলে মুখে ক্রিম লাগানো যেতে পারে।
দুই টেবিল চামচ কালিজিরার তেলের সঙ্গে দু-তিন ফোঁটা মধু মিশিয়ে মুখে লাগালে সেটা বেশ আর্দ্রতা দেবে। ১৫-২০ মিনিট পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
পুরো শরীরের জন্য অ্যামন্ড তেল বা ময়েশ্চারাইজার দারুণ উপকারী। চাইলে তার সঙ্গে গ্লিসারিন মিশিয়ে নিতে পারেন।
মনে রাখতে হবে মুখ, হাত ও শরীরের জন্য আলাদা করে বিশেষভাবে যে লোশনগুলো তৈরি হয়, তা ওই নির্দিষ্ট অংশেই ব্যবহার করা উচিত। যেমন—বডি লোশন কখনোই মুখে ব্যবহার করা উচিত নয়। সব সময় ভালো ব্র্র্যান্ডের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। নিরাপদ থাকুন।
ফারাহ শাম্মা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ১১, ২০১০
Leave a Reply