ট্যারা চোখঃ দীর্ঘ সময় ধরে স্বল্প মাত্রার ডায়াবেটিসের জন্য অক্ষিপেশির অবশজনিত কারণে ট্যারা চোখ দেখা দিতে পারে। সাধারণত বয়স্ক রোগীরা এ সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে রোগী কয়েক দিন তীব্র মাথাব্যথায় ভোগেন, হঠাৎ করে দ্বৈত দৃষ্টির উপসর্গে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। দ্বৈত দৃষ্টি হচ্ছে একটি জিনিসকে দুটি দেখা। সাধারণত দেখা যায়, চোখের এ সমস্যায় আক্রান্ত রোগী নিজের অজান্তেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রয়েছেন।
ডায়াবেটিসের পরিচিত উপসর্গের অনুপস্থিতির জন্য চিকিৎসকেরাও এ অবস্থায় বিভ্রান্ত হতে পারেন। তাই বয়স্ক রোগীদের হঠাৎ সৃষ্ট ট্যারা চোখের চিকিৎসায় সতর্কতার সঙ্গে কারণ নির্ণয় করা উচিত। ডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা তখন জরুরি হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের কারণে হওয়া ট্যারা চোখের চিকিৎসা সহজ। ডায়াবেটিসের সুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ ও দ্বৈত দৃষ্টির সমস্যা সেরে ওঠার জন্য ট্যারা চোখটি ঢেকে দেওয়াই এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট। পুরোপুরি ভালো হতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে নয় মাস। রোগীদেরও তাই কিছুটা ধৈর্য ধরতে হয়। কেননা এ ক্ষেত্রে দ্রুত ভালো হওয়ার কোনো উপায় নেই।
চোখের প্রদাহজনিত জটিলতাঃ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের সঙ্গে চোখের বিভিন্ন ধরনের প্রদাহজনিত রোগও নিবিড়ভাবে জড়িত। ডায়াবেটিসের জন্য প্রদাহজনিত রোগের প্রবণতা যেমন বেশি থাকে, তেমনি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে সেসবের কার্যকর চিকিৎসা দেওয়াও সম্ভব হয় না। শুধু চোখের নয়, যেকোনো অঙ্গের প্রদাহ বা ইনফেকশনের জন্যই এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য। বয়স্ক রোগীদের ক্ষেত্রে চোখের প্রদাহজনিত রোগের চিকিৎসা দেওয়ার সময় ডায়াবেটিসের প্রসঙ্গটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা দরকার। রোগীদেরও এ ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। কোনো প্রদাহে আক্রান্ত হলে অবহেলা না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ছানি রোগঃ আমাদের চোখের অভ্যন্তরে একটি লেন্স রয়েছে, যা দর্শন-প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই লেন্স কোনো কারণে অস্বচ্ছ হলেই ছানি রোগ হয়। আমাদের দেশে বয়স্কদের অধিকাংশই ছানি রোগ সম্পর্কে সচেতন। এ রোগ বয়স্কদের দৃষ্টি হ্রাসের অন্যতম প্রধান কারণ। ডায়াবেটিসের রোগীরা দুভাবে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
এক· ডায়াবেটিসজনিত ছানি,
দুই· ডায়াবেটিসের দরুন ত্বরান্বিত বয়োবৃদ্ধিজনিত ছানি।
রোগীর দেহে চিনির পরিমাণ অস্বাভাবিক মাত্রায় বৃদ্ধি পেলে চোখের লেন্সের বিপাক-প্রণালীতে জটিলতা দেখা দেয়। বিশেষত দীর্ঘ সময় ধরে রক্তে চিনির মাত্রা ২০০ মিগ্রা/১০০ মিলি বা ততোধিক হলে ‘সোরবিটল’ অ্যালকোহলের আধিক্য দেখা দেয়, যার উপস্থিতি লেন্সের জন্য ক্ষতিকর। ফলে লেন্স অস্বচ্ছ হয়ে পড়ে। এ ধরনের ছানি অল্পবয়সী ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। রক্তে চিনির মাত্রার কার্যকর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এ ধরনের ছানির প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব।
দ্বিতীয় প্রকারের ছানি ইনসুলিন-অনির্ভর ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে বেশি হয়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের বয়োবৃদ্ধিজনিত ছানির প্রবণতা বেড়ে যায়। কারণ হিসেবে বলা হয়, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর চোখের লেন্স একই বয়সী স্বাভাবিক ব্যক্তির লেন্সের তুলনায় ১৫ বছর বেশি বয়সীর লেন্সের অবয়ব নিয়ে থাকে। অর্থাৎ যাঁর ছানি হওয়ার কথা ৫৫ বছর বয়সে, তিনি হয়তো চল্লিশেই ছানি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন।
উৎসঃ দৈনিক প্রথম আলো, ১২ ডিসেম্বর ২০০৭
লেখকঃ ডা· মো· শফিকুল ইসলাম
সহযোগী অধ্যাপক, চক্ষুবিশেষজ্ঞ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
Leave a Reply