শুরু হলো নতুন বছর ২০১১। নতুন বছরে নতুন যাত্রা শুরুর সময় ফিরে দেখা যাক গত বছরটার জীবনযাত্রা। কেমন গেল ২০১০-এর সাজসজ্জা, পোশাক-আশাকে ফ্যাশনের ধারা; জীবনযাত্রাই বা ছিল কেমন—এসব নিয়েই এই আয়োজন।
কাতান-বেনারসির চল
বেনারসি ও কাতান শাড়ির জনপ্রিয়তা দেখা গেছে। এ ছাড়া শাড়ির পাড় এবং কামিজ বা কুর্তার পাড়ে, হাতায়, গলার কাছে ইয়ক হিসেবে বেনারসি, কাতানের মতো ঐতিহ্যবাহী কাপড় ব্যবহার করা হয়েছে। কখনো বা পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে, আবার কখনো বিপরীত রঙের পাড় লাগানো হয়েছিল। শিফন, মসলিন, জর্জেট শাড়ির আবেদন বাড়াতেও পাড় হিসেবে চমৎকার কাজ করেছে এসব। এ ছাড়া বেনারসি ও কাতান শাড়ির সঙ্গে আধুনিক গয়না পরার প্রচলন ছিল নজরে পড়ার মতো।
তরুণীদের কুর্তা
বিভিন্ন ধরনের কুর্তা ফ্যাশনে বেশ সাড়া ফেলেছিল। ফ্রক স্টাইল, স্ট্রেট স্টাইল, শার্ট-কাম কুর্তাগুলো পরতে দেখা গেছে তরুণীদের। হাতার কাটেও দেখা গেছে বেশ ভিন্নতা। ব্লকপ্রিন্ট, চুমকি, পুঁতি, মেশিন এমব্রয়ডারির কাজগুলো শোভা পেয়েছে শিফন, জর্জেট, সিল্ক ও সুতির কুর্তায়।
রূপচর্চায় ছেলেরাও
২০১০ সালে মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেদের রূপসচেতন হওয়ার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো ছিল। ছেলেদের বিউটি পারলারগুলোতেও ফেশিয়াল, মেনিকিউর, পেডিকিউর ও স্পা করার প্রতি আগ্রহী ছিল অনেকের। তাদের চুলের কাটছাঁটেও পরিবর্তন ছিল। হাল ফ্যাশনের সঙ্গে ছেলেরা তাল মিলিয়ে চলেছে গত বছরও।
ফুলহাতার খেলা
ব্লাউজ, কামিজ, কুর্তা, ফতুয়া—সব ধরনের পোশাকেই দেখা গেছে ফুলহাতার ব্যবহার। কখনো বা থ্রি কোয়ার্টার, কখনো লম্বা হাতায় পুরো বছর পার হয়েছে। ব্লাউজের ক্ষেত্রেও ফুলহাতার বাহার ছিল দেখার মতো। এর মধ্যে অন্যতম ছিল মসলিনের স্বচ্ছ হাতা। পাড়ে বোতাম, লেইসের কারুকার্য ছিল জমকালোভাবে।
ব্যালেরিনা শু
গত বছর মেয়েদের ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল ব্যালেরিনা শু। টিনএজ মেয়ে থেকে শুরু করে বয়স্ক—সবার পায়েই জায়গা করে নিয়েছিল ব্যালেরিনা শু।
মুক্তার জৌলুশ
স্নিগ্ধতা আর আভিজাত্যের সমন্বয় করে মুক্তার গয়না। গত বছর ফ্যাশনে এটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মুক্তার ছোট-বড় গয়না কর্মক্ষেত্রের অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন নিমন্ত্রণে নারীদের পরতে দেখা গেছে। বিয়ের নিমন্ত্রণেও এর ব্যবহার ছিল। কানের দুল, গলার মালা ও হাতের গয়না হিসেবে এর আবেদন ছিল। শুধু সাদা নয়, গোলাপি, কালো ও ধূসর রঙের মুক্তার গয়না প্রাধান্য পেয়েছে। সোনার ওপর মুক্তা বসানো গয়নার ব্যবহারও দেখা গেছে।
হেয়ার ব্যান্ড
এ বছর ফ্যাশনে জনপ্রিয়তা পেয়েছে হেয়ার ব্যান্ড। মাঝে কিছুটা সময় বিরতির পর বাজারে নতুন নকশায় শোভা পেয়েছে এটি। কাপড়ের তৈরি চওড়া ব্যান্ডগুলো টিনএজারদের জন্য ছিল আদর্শ ফ্যাশনের উপকরণ। এ ছাড়া প্লাস্টিকের তৈরি রংবেরঙের ব্যান্ডের ওপর শোভা পেয়েছে বিভিন্ন ধরনের পাথর। নতুন ডিজাইনের এ হেয়ার ব্যান্ডগুলো ছোট, বড়, সোজা, কোঁকড়া—সব ধরনের চুলেই এনেছে বাড়তি সৌন্দর্য।
শিশুর ঘর
শিশুদের ঘর হবে তাদের মতোই প্রাণবন্ত। সাধারণ কোনো রং নয়, বরং হালকা ও উজ্জ্বল রংই হবে তাদের জন্য আদর্শ। হালকা গোলাপি, নীল, বেগুনি প্রভৃতি রং দেখা গেছে দেয়ালে। এ ছাড়া মেয়েশিশু ও ছেলেশিশুর ঘরে ভিন্নরকম সাজসজ্জাও দেখা গেছে। তাদের পছন্দের কার্টুনগুলো দেখা গেছে দেয়ালচিত্র হিসেবে।
ফলের বৈচিত্র্য
শুধু দেশি ফলই নয়, বছরজুড়ে সুপার শপগুলোয় পাওয়া গেছে বৈচিত্র্যময় ভিনদেশি ফলও। ড্রাগন ফল, স্ট্রবেরি ইত্যাদি ফলের চাষও হয়েছে বাংলাদেশে।
ডিজিটাল জীবনযাত্রা
ডেস্কটপ কম্পিউটারের জায়গায় ব্যবহার বেড়েছে ল্যাপটপের। একই সঙ্গে তারহীন ইন্টারনেট সহজলভ্য হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইট ফেসবুকের জনপ্রিয়তা বেড়েছ অনেক। বাংলা ব্লগের জনপ্রিয়তা ছিল বরাবরের মতোই।
চলে গেলেন শাহরুখ শহীদ২০১০ সালে আমরা হারিয়েছি খ্যাতিমান ফ্যাশন ডিজাইনার শাহরুখ শহীদকে। ২৭ ফেব্রুয়ারি হূদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাত্র ৪৫ বছর বয়সে মারা যান তিনি।
লাল লিপস্টিকের ছোঁয়া
সাজে গাঢ় রঙের প্রাধান্য ছিল গত বছর। বিশেষ করে লাল রঙের। জমকালো শাড়ির সঙ্গে টকটকে লাল রঙে ঠোঁট রাঙাতে দেখা গেছে।
ক্লাচ
স্ট্র্যাপসহ বড় ব্যাগ নয়, বরং জনপ্রিয় হয়েছে ছোট্ট ক্লাচ। পার্টিতে তো বটেই, সাদামাটা পোশাকের সঙ্গেও এর ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেছে।
বিশ্বকাপে মাতোয়ারা
বিশ্বকাপ ফুটবল ছিল গত বছরের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের প্রভাব এসে পড়েছিল বাংলাদেশের মানুষের জীবনেও। রোনালদো, কাকা, মেসির চুল থেকে শুরু করে তাঁদের পোশাকও তরুণদের ফ্যাশনে প্রভাব ফেলে। ঘরের দেয়ালের রং থেকে ছাদে প্রিয় দলের পতাকার নকশা আঁকা হয়েছে। টি-শার্টেও ছিল বিশ্বকাপের উন্মাদনা।
স্নিকার জুতা
এ বছর ছেলে ও মেয়ে সবার পায়েই স্নিকার জুতা কদর পেয়েছে বেশ। একই সঙ্গে ফ্যাশনেবল ও আরামদায়ক বলে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল প্রায় টিনএজ থেকে তরুণ-তরুণী সব স্তরেই।
নখের রং
পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে নখ রাঙাতে হবে—এ ধারণাটি অনেকাংশেই বদলে গেছে এ বছর। বরং নখ রাঙানোটাই আলাদাভাবে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠেছে। আগে কম ব্যবহূত হতো এমন কিছু রং এ বছর বেশ জনপ্রিয় ছিল। সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে কালচে বেগুনি ও কালো রং। এ ছাড়া একটু ভিন্নধর্মী রং, যেমন—সবুজের বিভিন্ন শেড, উজ্জ্বল নীল, গাঢ় নীল, ফিরোজা, টকটকে গাঢ় লাল প্রভৃতির ব্যবহার দেখা গেছে।
বেড়ানো ও বাইরে খাওয়া
ঢাকায় গত বছর গড়ে উঠেছে অনেক খাবারের দোকান। বিশেষত্বও ছিল এসব দোকানের খাবারে। তাই বাইরে খাওয়ার বেশ প্রবণতা দেখা গেছে। বিভিন্ন ধরনের ক্যাফে ও বিশেষ খাবারের দোকানগুলোর সেসব খাবারের স্বাদ পেতে ঢুঁ মেরেছেন অনেকে। নিজেদের পরিচিত খাবার ছাড়াও দেশ-বিদেশের নানা স্বাদের খাবারও জনপ্রিয় ছিল গত বছর। খেতে খেতে গানও উপভোগ করেছেন অনেকে।
এ ছাড়া পরিবার বা বন্ধুবান্ধব নিয়ে বেড়ানোতেও উৎসাহ দেখা গেছে। সারা বছরই ভিড় ছিল দর্শনীয় স্থান ও রিসোর্টে।
এটিএম কার্ডের ব্যবহার বেড়েছে
চেকবইয়ের মাধ্যমে টাকা তোলার ঝামেলায় যেতে চাননা আর কেউ। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে তাই এটিএম কার্ডটাও করিয়ে নিয়েছেন বেশিরভাগ মানুষ। এটিএম বুথের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে।
গত বছর থেকে চালু হয়েছে যন্ত্রপাঠ্য পাসপোর্ট (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট বা এমআরপি)। অনেকেই করিয়েছেন এই এমআরপি।আর পাসপোর্ট করানোর প্রক্রিয়াটা হয়ে উঠেছে আগের চাইতে অনেক সহজ।
ফ্যাশনেবল মোবাইল ফোন
মোবাইল ফোন শুধু কাজে নয়, ব্যবহূত হয়েছে ফ্যাশনের অনুষঙ্গ হিসেবেও। স্লাইডিং ফোনগুলো বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেই সঙ্গে পিডিএ, স্মার্ট ফোনের ব্যবহারও বেড়েছে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ০৪, ২০১০
Leave a Reply