সমস্যা: আমার বয়স যখন ১৫ বছর, তখন ঘর পরিষ্কার করার সময় প্রথম কাশি হয় এবং এর পর থেকে প্রায়ই আমার কাশি হতে থাকে। কাশির সঙ্গে তখন শ্বাসকষ্টও হতো। কাশির জন্য ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। কখনো কখনো কাশি এত বেশি হতো যে কাশতে কাশতে বমি করে দিতাম। তখন আমার বুক চওড়া ও উঁচু ছিল।
আমি লক্ষ করলাম, কাশির কারণে বুকের নিচের অংশের ডান, বাঁ ও সামনের দিকের হাড়গুলো ভেতরের দিকে ঢুকে যাচ্ছে। ফলে বুক ও পিঠ ছোট হয়ে সরু হয়ে যায়। কাশির জন্য প্রাথমিকভাবে কিছু ওষুধ সেবন করার পরও তা ভালো হয়নি। প্রায় তিন বছর পর আমি একজন বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের পরামর্শে কাশির ওষুধ খাই এবং এর পর থেকে আমার কাশি ভালো হয়ে যায়। কিন্তু আমার বুকের গঠন-প্রকৃতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। বর্তমানে আমার বুকের নিচের দিকের হাড়গুলো ভেতরের দিকে চলে যাওয়ার কারণে বুকের নিচের অংশ সরু ও ওপরের অংশ চওড়া অবস্থায় আছে। আমার বর্তমান বয়স ২৩ বছর। শরীরের অন্যান্য অংশ বৃদ্ধি পেলেও বুকের অংশ তেমন বাড়েনি। বুকের এ অবস্থার জন্য কারও সামনে খালিগায়ে যেতে লজ্জা পাই। বুকের এ অবস্থার জন্য মানসিক কষ্টে আছি। আমার প্রশ্ন, বুকের হাড় কী করলে আগের অবস্থায় ফিরে আসবে?
মো. সালাহউদ্দিন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পরামর্শ: আপনার চিঠি পড়ে মনে হচ্ছে, অত্যধিক কাশির কারণে বাড়ন্ত বয়সে আপনার বুকের গঠন সঠিকভাবে হতে পারেনি। অতিরিক্ত কাশির কারণে আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাংস, বিশেষ করে ডায়াফ্রাম বা মধ্যচ্ছদার (যা আমাদের বুক ও পেটের মাঝখানে থাকে) অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। ফলে ডায়াফ্রামের সঙ্গে যুক্ত বুকের হাড়গুলো বুকের ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। কারও যদি অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হয়, কখনো কখনো স্থায়ীভাবে বুকের নিচের অংশ ভেতরের দিকে ঢুকে যায়। বুকের গঠন তখন দেখতে অনেকটা ফানেলের মতো হয়। চিকিত্সাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে ফানেল চেস্ট বা পেকটাস এক্সকাভ্যাটাম বলা হয়।
বুকের এই আকৃতিগত ত্রুটি বাড়ন্ত বয়সে অতিরিক্ত কাশি ছাড়াও অন্যান্য কারণে হতে পারে। যেমন—জন্মগতভাবে, বাড়ন্ত বয়সে ভিটামিন ‘ডি’য়ের স্বল্পতার কারণে কারও কারও কোনো কারণ ছাড়াই এই পরিবর্তন হতে পারে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, বুকের এই আকৃতিগত ত্রুটি রোগীর কোনো অসুবিধা করে না। ফলে কোনো চিকিত্সার প্রয়োজন হয় না। তবে কেউ কেউ বুকের এই গঠনত্রুটির জন্য সামাজিকভাবে লজ্জা বোধ করে এবং মনঃকষ্টে ভোগে। কদাচিত্ কারও কারও বুকের এই আকৃতিগত ত্রুটি খুব বেশি হয়ে থাকে।
সে ক্ষেত্রে রোগীর কাশি, শ্বাসকষ্ট বা বারবার বুকে সংক্রমণ অথবা ইনফেকশন হতে পারে। যদি কেউ এই আকৃতিগত ত্রুটির জন্য বুকের সৌন্দর্যের হানি হওয়ার কারণে খুব মানসিক কষ্টে থাকে, এবং যাদের বুকে বারবার ইনফেকশন বা শ্বাসকষ্ট হয়, সে ক্ষেত্রে বুকের শল্যচিকিত্সার মাধ্যমে এই আকৃতিগত পরিবর্তন অনেকটা ঠিক করা সম্ভব। এ জন্য আপনি একজন চেস্ট সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করতে পারেন।
মো. দেলোয়ার হোসেন
বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
বারডেম হাসপাতাল ও ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০০৯
Leave a Reply