এইচআইভি প্রতি-রোধে গবেষকেরা একটি নতুন টিকা তৈরি করেছেন। এই টিকা এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকি প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমাবে বলে দাবি করছেন এর উদ্ভাবকেরা। মার্কিন সেনাবাহিনী ও থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে সাত বছর গবেষণা করে এ টিকা তৈরি করেছে। গবেষকেরা বলছেন, আগের দুটি টিকার সমন্বয়ে নতুন এই টিকা তৈরি করা হয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা তৈরির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে অভিনন্দন জানিয়েছে। চিকিত্সাবিজ্ঞানবিষয়ক জার্নাল দ্য ল্যানসেট-এর সম্পাদক রিচার্ড হার্টন প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, গবেষণার ফলাফল উত্সাহব্যঞ্জক। এইডসের টিকা তৈরির ক্ষেত্রে এক দশকের মধ্যে এটি প্রথম ইতিবাচক সংবাদ। তিনি বলেন, ‘আমরা আশাবাদী, কিন্তু আমাদের সতর্ক থাকা উচিত। নতুন উদ্ভাবন জরুরিভাবে পুনঃ পুনঃ প্রয়োগ করে এর ফলাফল অনুসন্ধান করা দরকার।’
থাইল্যান্ডের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকিতে আছে এমন ১৬ হাজার নারী ও পুরুষের ওপর এই টিকার পরীক্ষামূলক ব্যবহার হয়েছে। গবেষকেরা দাবি করছেন, টিকা নিয়ে কোনো গবেষণায় এর আগে এত বেশিসংখ্যক মানুষকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ গবেষণায় অর্থায়ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস।
গবেষকেরা জানান, ফ্রান্সের ওষুধ ও টিকা তৈরির প্রতিষ্ঠান সানোফি এভেন্টিসের ‘এএলভিএসি’ এবং ভ্যাক্সজেন কোম্পানির ‘এইডভ্যাক্স’-এর সম্মিলন ঘটিয়ে নতুন টিকা তৈরি করা হয়েছে। এইচআইভি ভাইরাস প্রতিরোধে আগের দুটি টিকা পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাঙ্ক্ষিত সফলতা আসেনি। খবর এএফপি, এপি ও বিবিসির।
মার্কিন সেনাবাহিনীর এইচআইভি গবেষণা কর্মসূচির কর্মকর্তা কর্নেল জেরম কিম বলেন, ‘এটাই আমাদের প্রথম সাফল্য যে টিকা দিয়ে এইচআইভি ভাইরাস প্রতিহত করা সম্ভব।’ থাইল্যান্ডের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উইটহায়া কাইওপারাডাই বলেন, পরীক্ষার ফলাফল চিকিত্সাবিজ্ঞানের একটি বড় ধরনের অগ্রগতি।
গবেষণা শুরু হয় ২০০৩ সালের অক্টোবর মাসে, ব্যাংককের নিকটবর্তী দুটি প্রদেশে। গবেষণায় অংশ নেওয়া নারী ও পুরুষের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৩০ বছর। এঁদের অর্ধেককে নতুন টিকা দেওয়া হয় এবং বাকিদের বিকল্প ওষুধ (প্লেসবো: ওষুধ বলে দেওয়া হয়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা ওষুধ নয়। ওষুধ নিয়ে গবেষণায় এটা করা হয়) দেওয়া হয়। তবে সবাইকে কিছু অভিন্ন দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, বিকল্প ওষুধ গ্রহণকারী আট হাজার ১৯৮ জনের মধ্যে ৭৪ জন এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর টিকা গ্রহণকারী আট হাজার ১৯৭ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ৫১ জন। এই ফলাফল থেকে গবেষকেরা বলছেন, নতুন টিকায় এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি ৩১ শতাংশ হ্রাস পাবে।
জাতিসংঘ বলেছে, বাণিজ্যিকভাবে এ টিকা তৈরির জন্য এখনই অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না। এ টিকা থাইল্যান্ডের বাইরে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও একইভাবে কার্যকর কি না, তা আরও গবেষণা করে দেখার প্রয়োজন আছে।
১৯৮১ সালে বিশ্বে প্রথম এইডস রোগ ধরা পড়ে। এই রোগের কারণ এইচআইভি ভাইরাস। এ পর্যন্ত এ রোগে আড়াই কোটি লোক মারা গেছে। জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউএনএইডস বলছে, বিশ্বে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে সাত হাজার মানুষ এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০০৯
Leave a Reply