লিউকোপ্লাকিয়া একটি ক্যান্সারপূর্ব রোগ, যা জিভের ওপর বা মুখের ভেতর দেখা যায়। অনবরত প্রদাহজনিত কারণে এটি হয়ে থাকে। লিউকোপ্লাকিয়া রোগে মুখের ভেতর বা গালের মিউকাস মেমব্রেনে সাদা দাগের সৃষ্টি হয়।
মুখের ক্যান্ডিডিয়াসিস ও লাইকেন প্ল্যানাস রোগে মুখের ভেতর একই ধরনের দাগ দেখা যায়। তাই মুখের লিউকোপ্লাকিয়া রোগ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে লাইকেন প্ল্যানাস ও ক্যান্ডিডিয়াসিসও বিবেচনায় আনতে হবে। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ক্যানডিডা এবং এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে। একে হেয়ার লিউকোপ্লাকিয়া বা ্নোকার্স কেরাটোসিসও বলা হয়। সাধারণত খুব অল্পসংখ্যক লোক লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত হয়। এটি ৫০ থেকে ৭০ বছর বয়সে বেশি হয়ে থাকে। তবে এর মানে এই নয় যে কম বয়সীদের এ রোগ হয় না।
কারণ
- লিউকোপ্লাকিয়ার কারণ এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় এটি ধূমপান, দীর্ঘমেয়াদি মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহের কারণে হয়ে থাকে। মুখের জ্বালাপোড়া বা প্রদাহ বিভিন্নভাবে হতে পারে, যেমন-মুখের ভেতর ধারালো দাঁতের অংশবিশেষ দীর্ঘদিন ধরে থাকলে; কৃত্রিম দাঁতের অমসৃণ অংশ এবং ফিলিং বা ক্রাউনের অমসৃণ অংশ থাকলে এ রোগ হতে পারে।
- ধূমপান ও অন্যান্য তামাকের কারণেও এ রোগ হয়। সে ক্ষেত্রে একে ্নোকার্স কেরাটোসিস বলা হয়। দীর্ঘদিন পাইপ দিয়ে ধূমপান বা যেকোনো ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য ও মাদক গ্রহণ করলে এবং ঠোঁটের ওপর ক্রমাগত সরাসরি সূর্যের আলো পড়লেও এ রোগ হতে পারে।
- হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত বেশি দেখা যায় না। এটি দেখা যায় এইচআইভি পজিটিভ হলে। এইচআইভি সংক্রমণের ক্ষেত্রে এটি একটি প্রাথমিক লক্ষণ। যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা ভালোভাবে কাজ করছে না, তাদের ক্ষেত্রেও হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া দেখা যেতে পারে। এপস্টেন বার ভাইরাসের মাধ্যমেও এটি হতে পারে। তবে হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়ায় ক্যান্সারের কোনো ঝুঁকি থাকে না।
কোথায় হয়
অধিকাংশ ক্ষেত্রে জিভের পাশে বা ওপরে হয়ে থাকে। তা ছাড়া মুখের ভেতর দুপাশে হতে পারে। মেয়েদের ক্ষেত্রে কখনো কখনো প্রজনন অঙ্গের বাইরের অংশে লিউকোপ্লাকিয়া দেখা যায়। তবে এর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। সাধারণত লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত স্থানের রং সাদা অথবা ধূসর হয়ে থাকে। মাঝেমধ্যে তা লাল বর্ণেরও হতে পারে, তখন একে ইরাইথ্রোপ্লাকিয়া বলা হয়।
বাহ্যিক অবস্থা
লিউকোপ্লাকিয়ায় আক্রান্ত স্থান পুরু হয়ে থাকে। এর উপরিভাগ কিছুটা শক্ত হয়ে থাকে। আর হেয়ারি লিউকোপ্লাকিয়া সাধারণত ব্যথাযুক্ত হয়ে থাকে।
জটিলতা
আক্রান্ত স্থানে ক্রমাগত অস্বস্তিকর অবস্থা বিরাজ করে। ধীরে ধীরে এটি আকারে বেড়ে যেতে পারে। কখনো বা ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
লিউকোপ্লাকিয়ায় সাদা দাগ আক্রান্ত স্থান বাড়তে এক সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। সংক্রমিত স্থান ক্রমশ অমসৃণ হয় এবং স্পর্শ করলে ব্যথা হতে পারে। মসলাযুক্ত খাবার বা ঝাল খাবার খেলে জ্বালাপোড়া হতে পারে। লিউকোপ্লাকিয়া কি না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য বায়োপসি বা টিসু পরীক্ষা করতে হয়। মুখের ক্যান্সারও এতে নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা
- লিউকোপ্লাকিয়ার চিকিৎসা শুরুর আগে যেসব কারণে এ রোগ হতে পারে সেগুলো বর্জন করতে হবে। ধূমপান, পান-সুপারি খাওয়া, অ্যালকোহল পানের অভ্যাস থাকলে তা অবশ্যই বর্জন করতে হবে। ক্রমাগত প্রদাহজনিত কোনো কারণ যদি থাকে, যেমন-ধারালো দাঁতের অংশবিশেষ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা করাতে হবে।
- সংক্রমিত স্থানে অপারেশন করা জরুরি হতে পারে। সাধারণত লোকাল অ্যানেসথেসিয়ার মাধ্যমে সংক্রমিত স্থান সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ লিউকোপ্লাকিয়ার সংক্রমিত স্থানকে সংকুচিত করে।
- এ ক্ষেত্রে রোগীকে এ বিষয়ে অভিজ্ঞ ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে থাকতে হয়। ভিটামিন ‘এ’ ও ভিটামিন ‘ই’ একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রায় বিশেষ পদ্ধতিতে সেবন করতে হয়।
- না হলে ভিটামিন দীর্ঘদিন সেবন করলেও তা কার্যকর হবে না। ভিটামিন প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে প্রচলিত মলমের বদলে কিছু ওষুধ বিশেষ পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- একটা বিষয় বিশেষভাবে বলা দরকার, তা হলো-মুখস্থ বা প্রচলিত চিকিৎসা অনেক ক্ষেত্রেই লিউকোপ্লাকিয়ার চিকিৎসায় কোনো অবদান রাখে না।
- যেহেতু লিউকোপ্লাকিয়ার শতকরা তিন ভাগ ক্যান্সারের দিকে মোড় নেয়, তাই এ রোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট সবার আরও বেশি সচেতন ও যত্নশীল হওয়া জরুরী।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ ডা· মো· ফারুক হোসেন
Mizanur
Help me doctor! Hotat kora amar jiblar dain side a lal/khoiri rongar kijani fula asa ja dat brash ba khabar khaowar shomoi ghosha lagla betha kora ak2 ak2. Ata ki ami kisu bujsina. . . . Akhon ki korbo
Bangla Health
আপনার অন্য মন্তব্যের ঘরে উত্তর দেয়া হয়েছে।