মানুষের পুরো মস্তিষ্ক জুড়ে স্মায়ুর বিস্তৃতি। স্মায়ুতন্ত্র প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত। কেন্দ্রীয় স্মায়ুতন্ত্র, পারিপার্শ্বিক স্মায়ুতন্ত্র। কেন্দ্রীয় স্মায়ুতন্ত্র (সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম) থেকে স্পাইনাল কর্ডের উৎপত্তি। স্পাইনাল কর্ড কেন্দ্রীয় স্মায়ুতন্ত্রের নিচের অংশ।
এটি ত্রিকোণাকৃতির স্মায়ু। মাথার পেছন দিয়ে কোমর পর্যন্ত স্পাইনাল কর্ডের বিস্তৃতি। আমাদের মেরুদণ্ড কশেরুকা নামক অজস্র হাড় দ্বারা তৈরি।
ঘাড়ের ওপরের অংশের প্রথম কশেরুকার নাম অ্যাটলাস। প্রতিটি কশেরুকার মধ্যে ত্রিকোণাকৃতির ফাঁকা স্থান আছে। এই ফাঁকা স্থানের মধ্য দিয়ে, অর্থাৎ অ্যাটলাস থেকে কোমরের দ্বিতীয় নম্বর কশেরুকা পর্যন্ত স্পাইনাল কর্ডের বিস্তৃতি। এটি প্রায় ৪৫ সেন্টিমিটার লম্বা। হালকা লালচে বাদামি বর্ণের। লম্বা, পাতলা, মাংসল আকৃতির। আর তার দেহের চারপাশ থেকে গাছের শাখা-প্রশাখার মতো ৩১ জোড়া স্পাইনাল স্মায়ু সারা দেহে ছড়িয়ে গেছে।
মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্মায়ুর মধ্যে এই স্মায়ু যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুরো মেরুদণ্ডের হাড়ের ফাঁকা দিয়ে এর বিস্তৃতি এবং এর শাখা-প্রশাখা দেহের প্রায় প্রতিটি অঙ্গের সঙ্গে সম্পৃক্ত। স্পাইনাল কর্ডের রক্ত চলাচল সারা দেহের রক্ত চলাচলের তুলনায় যথেষ্ট বেশি।
দেহের অন্য অঙ্গগুলো কাজ করে এবং কোন অঙ্গ কী কাজ করবে বা করল তার দিকনির্দেশনা দেয় স্মায়ু। স্পাইনাল কর্ডকে দৈর্ঘচ্ছেদ করলে ইংরেজি এইচ আকৃতির অবস্থান পাওয়া যায়। এখানে সাদা ও বাদামি আবরণ থাকে। সাদা অংশকে বলে হোয়াইট ম্যাটার আর বাদামি অংশকে বলে গ্রে ম্যাটার। গর্ভাবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক ও স্পাইনাল কর্ড তৈরি হয়। স্পাইনাল কর্ড তার শাখা-প্রশাখার মাধ্যমে সারা দেহের তথ্য মস্তিষ্কে পৌঁছায়, অর্থাৎ দূরপ্রান্তের তথ্য বহন করে। এ জন্য স্পাইনাল কর্ডকে “দেহের দূরালাপনী” বলে। ফাঁসিতে কারও মৃত্যু হলে সর্বপ্রথম তার অ্যাটলাস ভেঙে স্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে যায়। ফলে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ কী কাজ করবে এ সংকেত মস্তিষ্ক স্পাইনাল কর্ডকে দিতে পারে না। আর স্পাইনাল কর্ডও মস্তিষ্কে ও বিভিন্ন অঙ্গে বার্তা পৌঁছায় না।
স্পাইনাল কর্ডের যত্নে যা করবেন
- সবসময় প্রফুল্ল থাকুন, দুশ্চিন্তা দেহের স্মায়ুগুলোর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
- উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন। দীর্ঘদিন উচ্চ রক্তচাপের জন্য একই ওষুধ খাবেন না।
- মোটরসাইকেল চালানোর সময় হেলমেট ব্যবহার করুন।
- বালিশ ছাড়া ঘুমানোর অভ্যাস করুন। এতে মস্তিষ্কের প্রতিটি কোষস্মায়ুতে সঠিকভাবে রক্ত চলাচল হবে। (ধীরে ধীরে এ অভ্যাস গড়ে তুলুন)।
- শিশুকে সঠিক সময়ে পোলিও টিকা দিন। পোলিও হলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্মায়ু প্রায় অকেজো হয়ে যায়, যার ক্ষতিকর প্রভাব মস্তিষ্কের বিভিন্ন স্মায়ুর ওপর পড়তে পারে। তাই সর্বদা সতর্ক থাকুন।
- দেহের প্রতিটি স্মায়ু, হরমোন, অঙ্গের জন্য পানি ও সুষম খাবারের কোনো বিকল্প নেই। তাই সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা কাজের চাপে মাথা জ্যাম মনে হলে মুক্ত বাতাসে কিছুক্ষণ হাঁটুন। বড় বড় নিঃশ্বাস নিন। মুক্ত স্থান সম্ভব না হলে বসা বা শোয়া অবস্থায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট নিশ্চুপ হয়ে চোখের পাতা বন্ধ রাখুন। এতে স্মায়ুর বিশ্রাম হয়।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ ফারহানা মোবিন
Leave a Reply