খলিল (ছদ্মনাম) সাহেব সচেতন মানুষ। কদিন ধরেই শরীরটা দুর্বল, দেহের ওজন যেন কমছে। পানির পিপাসা অতিরিক্ত। ধরা পড়ে যায় ডায়াবেটিস। খলিল সাহেব বেশ চিন্তিত। তিনি বুঝতে পারে, কদিনেই হয়তো রক্তচাপ বেড়ে যাবে। তারপর যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে হার্ট অ্যাটাক! যেন মৃত্যু অবধারিত!
চিকিত্সাব্যবস্থার উন্নতি হচ্ছে দিন দিন। মানুষের আয়ুও বাড়ছে। তেমনি বাড়ছে রোগ ও রোগের জটিলতা। এ সময় মানুষের শারীরিক পরিশ্রম কমে যাচ্ছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবারও অনেকে খায়। বেড়ে যাচ্ছে ‘ফাস্টফুড কালচার’। যেমন বড়রা, তেমনি ছোটরাও মোটা হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে দেহের ওজন। আক্রান্ত হচ্ছে ডায়াবেটিসে। বংশগত ও পরিবেশগত প্রভাব বাদ দিলে ফাস্টফুড কালচার হচ্ছে মানুষের সুস্বাস্থ্যের প্রধান শত্রু।
ডায়াবেটিসের মতো ‘রোগের জননী’ শরীরে বাসা বাঁধলে আরও রোগের উত্পত্তি ঘটে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে বিপদ। উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। ঘটে যায় হার্ট অ্যাটাকসহ অন্যান্য হূদরোগ। কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। চোখে ছানি পড়ে। এমনকি স্নায়ুরোগসহ অন্যান্য জটিল রোগ সৃষ্টি করে। কিন্তু একটু নিয়মেই জীবন যাপন করা যায় আরামে। ডায়াবেটিস হলেই যে মৃত্যুর মুখোমুখি, তা এখন ভাবাই উচিত নয়। নিয়ম পালনে এ রোগ সহজেই নিয়ন্ত্রণে থাকে। তখন মনের ইচ্ছাশক্তিকে প্রবলভাবে জাগাতে হবে। হোক না পুরোপুরি কর্মময় জীবন। ‘রোগের নিয়ম মেনেই চলব’—এ ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে। ভাবতে হবে ‘রক্তের সুগার’ স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার কথা। আরও ভাবতে হবে উচ্চ রক্তচাপের কথা। ডায়াবেটিসের রোগীরা বেশি উচ্চ রক্তচাপে ভোগে। একে স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতেই হবে। রক্তের সুগার ও উচ্চ রক্তচাপ, দুটোই বেশি থাকা মানে বিপজ্জনক। সব রোগ এসে ভর করে দেহে।
তাই শুধু ওষুধ খেয়ে নয়, আগে আনতে হবে জীবনযাপনে পরিবর্তন। তিনটি বিষয় মনে রাখতেই হবে—সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা; নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করা; আর ধূমপান একেবারেই ত্যাগ করা।
খাদ্য নির্বাচনের ব্যাপারে খুব সতর্ক হতে হবে, বলাই বাহুল্য। গরু ও খাসির মাংস, ডিমের কুসুম, ঘি, তেল, মাখন বর্জন করা উচিত। তবে ছোট মাছ, ডিমের সাদা অংশ, চামড়া বাদে মুরগির মাংস, কিছু ভোজ্যতেল খাওয়া যায় পরিমাণমতো।
মিষ্টি বা মিষ্টিজাতীয় খাবার পুরোপুরি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। আঁশযুক্ত খাবার বেশি খাবেন। যেমন—সবুজ শাকসবজি, টক ফল, শসা বেশি খেতে পারেন। অভ্যাস করুন। আর শরীরচর্চা। দিনে আধঘণ্টা হাঁটুন। মুক্ত বায়ু সেবন করুন। রোজ না হলেও সপ্তাহে পাঁচ দিন হাঁটুন। যেকোনো সময় হাঁটা যায়। কারও মতে সকালে আবার কারও মতে বিকেলে। আসলে সময় পেলেই হাঁটা উচিত। নিশ্চিন্তে নিজের কর্মময় জীবন চলতে থাকুক। রোগশোক কমে যাবে।
যদি দেহের ওজন ঠিক রাখতে পারেন, ফাস্টফুড ও ধূমপান একেবারে ছেড়ে দিতে পারেন, পরিমিত খাবার খেতে পারেন আর হাঁটতে পারেন নিয়মিত, তবে বাড়বে না রক্তে সুগার কিংবা উচ্চ রক্তচাপ।
এস কে অপু
হূদরোগ বিশেষজ্ঞ
ময়মনসিংহ চিকিত্সা মহাবিদ্যালয়
সূত্র: প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০০৯
Leave a Reply