উৎসবে মাতিয়ে তুলুন অল্প কিছু সময়। লেখক ক্লাইড এইচ রিড বলেন, ‘সেলিব্রেট দ্য টেম্পোরারি’। তিনি যা বোঝাতে চেয়েছেন তা হলোঃ অনেক সময় আমরা আগামী দিনের জন্য প্রস্তুতিতে থাকি ব্যস্ত, নয় তো অতীতে ডুবে যেতে চাই, এতে কী হয়? আমরা আজকের দিনের অভিজ্ঞতা ও আনন্দকে হারাই।
ভোরের শিশিরে ভেজা ঘাসের ওপর খালি-পা ফেলে আপনারা কজন হেঁটেছেন। যাঁরা হেঁটেছেন তাঁরা ভাগ্যবান; যাঁরা হাঁটেননি, দুর্ভাগ্য তাঁদের।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শীষের উপর/একটি শিশির বিন্দু। চোখ মেলে এ দৃশ্য দেখার সময় নেই যাঁদের, তাঁরা বদনসিব।
সেই কবে ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে গ্রামের বাড়িতে উঠান পেরিয়ে ঘাসে ঢাকা সরু মেঠো পথ দিয়ে যেতে যেতে আমাদের পা ভিজেছিল শিশিরে। আমার পায়ের নিচে শীতল, নরম ঘাসের স্পর্শ, আশ্চর্য লেগেছিল, আজ আমার মনে হয় সেসব উদ্বেগহীন, ভাবনাহীন দিনগুলোর কথা, যেসব দিন পেরিয়ে আমি বড় হয়ে উঠেছিলাম।
আমরা বন্ধুরা কত হাসি, কত গান, কত দৌড়াদৌড়ি, সাঁতার-কাটা, দুষ্টুমি এসব করে করে বড় হয়েছি। আমরা ফুলের বাগানের মধ্যে সরু পথ দিয়ে হেঁটেছি, গন্ধ নিয়েছি ফুলের, দিনের তাপ থেকে রেহাই পেতে দিয়েছি ঝাঁপ ঝুপ করে নদীতে···।
আমি ছেলেবেলায় পড়েছি বিশ্বভারতী ‘পাঠভবনে’। মনে আছে, খুব ভোরে লাল কাঁকর বিছানো পথ দিয়ে হেঁটে গেছি স্কুলে, পথে পড়েছে টগর ফুলের গাছ, জামগাছ ও আমলকীর বন। বাসার কাছে ছিল ‘প্রাত্যহিক’ নামে হাট, সেই হাট পেরিয়ে হেঁটে গেছি পাঠভবনে। সিংহসদনে ঘণ্টা বেজেছে ঢং ঢং। ভোরের প্রার্থনা শেষে ছায়াবীথিতলে ক্লাস। পড়াতেন নলিনীদি, বারীণদা, প্রজাপতিদা···।
বুধবার পিকনিক, গোয়ালপাড়ার পথ ধরে দূরের টিলায়। ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ আমার মন ভুলায় রে’ গানটি গাইতে গাইতে সন্ধ্যায় ফিরি বাসায়···।
অনেক সময় সন্ধ্যায় খোয়াই নদীর অগভীর জলে খালি-পা ডুবিয়ে বসে থাকা···।
মনে পড়ে, বাসায় ফিরলে দিদিমার হাত থেকে ‘মাধুপুরি’ খাওয়া··· আমাদের শান্তিনিকেতন, আমাদের সব থেকে আপন···।
এমন পরিবেশে শরীর-মন দুটোই ভালো হয়ে যায়। আনন্দে-উল্লাসে চিৎকার দিতে ইচ্ছে হয়, রোমাঞ্চ শিহরণ বয়ে যায় শরীরে, এই বুড়োকালেও আমি যখন মনে করি এসব স্মৃতি···
আরও স্মৃতি, মনে পড়ে বুনোলতা ও ঘাস-ডোবানো ঝরনাজলের কথা, আমি ডুব দিতাম, একা কেবল জলচর মাছকে সঙ্গী করে।
শরীর-মন দুটোই ভালো হয়ে যায়। ক্ষণকালের এ উৎসবে।
এসব দিনের কথা ভোলা যায় না। এমন দিন ফিরে পেতে ইচ্ছে করে বারবার।
শরীর ও মনের কুশলের জন্য।
সেই সুখের মুহূর্তগুলো জীবনে বারবার পেতে ইচ্ছে কার না করে, যখন পৃথিবীকে, জীবনকে দেখা যায় শিশুর চোখ দিয়ে।
আমরা বয়স্কদের পৃথিবী ছেড়ে ক্ষণকালের জন্য কি ফিরে যেতে পারি না শৈশবের পৃথিবীতে? আমরা বড়রা, আমাদের অভিজ্ঞতার একটি সীমারেখা টেনে দিই, অথচ আমরা বুঝি না যে পৃথিবীর অনেকটাই এখনো অপেক্ষা করে আছে আবিষ্কারের জন্য। জীবনের বড় চ্যালেঞ্জ। সময় নিয়ে, একটুকু সময়কে, আজকের দিনকে উপভোগ করুনঃ দেহ ও মন শিথিল করার জন্য ভালো উপায়।
বয়স যাদের কম তারা যদি মাঝেমধ্যে গ্রামে যায়, প্রকৃতির কাছাকাছি কিছুক্ষণ সময় কাটায়, তখন তারাও হবে আরও সজীব, সবুজ ও সুস্থ।
শরীর-মন দুটোই এমনিতে ভালো হয়ে যায়। এভাবে স্বাস্থ্যের কুশলের জন্য প্রকৃতির কাছে যেতে হয়।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
Leave a Reply