ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়েদের নবজাতকদের বিভিন্ন রকম জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। মাঝেমধ্যেই শোনা যায়, গর্ভ ধারণ করার পর গর্ভবতী মা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়েছেন।
কিন্তু আগে তিনি আক্রান্ত ছিলেন না, একে বলা হয় জেসটেশনাল ডায়াবেটিস বা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস। আবার গর্ভধারণের আগে থেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, এমন মাও দেখা যায়।
ডায়াবেটিক মায়ের নবজাতকের জ্ন নেওয়ার সময় আঘাত পাওয়া, সিজারিয়ান অপারেশনের ঝুঁকি ও নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া অন্য স্বাভাবিক মায়েদের নবজাতকদের তুলনায় যথাক্রমে দ্বিগুণ, তিনগুণ ও চারগুণ বেশি দেখা যায়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের নবজাতক দেখতে বেশ বড়সড়, নাদুসনুদুস, গোলগাল এবং ওজন বেশি হয় (চার কেজির বেশি) শরীরে রক্তের আধিক্য থাকার জন্য, এ নবজাতককে লালবর্ণ দেখায়। এ ছাড়া কানে বেশি রোম থাকে, যা অন্যান্য স্বাভাবিক নবজাতকের ক্ষেত্রে দেখা যায় না।
এসব নবজাতক দেখতে বড় হওয়ার কারণ মায়ের রক্তে গ্লুকোজের আধিক্য, যা কিনা গর্ভফুল দিয়ে গর্ভের সন্তানের পেটে প্রবেশ করে শরীরের বিভিন্ন অংশে গ্লাইকোজেন, প্রোটিন, ফ্যাট আকারে জমা হতে থাকে। তাই এ সন্তানটি দ্রুত বেড়ে ওঠে, জ্নের সময় ওজন বেশি পাওয়া যায়।
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের নবজাতকের জটিলতা
- গর্ভের শিশুর ওজন বেশি থাকার পরও যদি স্বাভাবিকভাবে জ্নগ্রহণ করে, তাহলে জ্নের পরপরই প্রসবজনিত জটিলতা, যেমন-মস্তিষ্কে আঘাতজনিত কারণে না কাঁদা, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, কণ্ঠের হাড় ভেঙে যাওয়া, মুখের স্মায়ুর দুর্বলতা, কাঁধের মাংসপেশির দুর্বলতা ইত্যাদি লক্ষ করা যায়।
- জ্নের পরপরই নাড়ির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর মায়ের কাছ থেকে গ্লুকোজ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়, পাশাপাশি নবজাতকের অতিরিক্ত ইনসুলিন নিজ শরীরের গ্লুকোজ ব্যবহার করে ফেলায় নবজাতকের রক্তে হঠাৎ করে গ্লুকোজের মাত্রা কমে যায়।
- এ সময় তাৎক্ষণিকভাবে নবজাতককে বুকের দুধ খাওয়ানো শুরু করতে হবে, প্রয়োজনে ইনজেকশনের মাধ্যমে গ্লুকোজ শরীরে সরবরাহ করে নবজাতকের মস্তিষ্ককে স্থায়ী ক্ষতের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
- কখনো কখনো এসব নবজাতকের রক্তে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম কমে যাওয়ায় এবং রক্তের আধিক্যের কারণে নবজাতকের মস্তিষ্কে ক্ষতির আশঙ্কা থাকে বলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
- রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অন্যান্য নবজাতকের তুলনায় বেশি বেড়ে গিয়ে জন্ডিসের সৃষ্টি করে।
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের নবজাতকের সময়ের আগে অপরিণত স্বল্প ওজনের শিশু জ্নগ্রহণ করার প্রবণতা বেশি থাকে। এসব অপরিণত শিশুর ফুসফুস অপরিপক্ব থাকায় শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা থাকে।
- এই নবজাতকদের জ্নগত ত্রুটির আশঙ্কা প্রায় দুই থেকে চারগুণ বেশি থাকে। শরীরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-যেমন হৃৎপিণ্ড, কিডনি, স্মায়ুতন্ত্র, খাদ্যনালির বিভিন্ন ত্রুটি দেখা যায়।
চিকিৎসা
হাসপাতালে নবজাতকের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রেখে এসব শিশুর চিকিৎসা করতে হবে। জ্নগত ত্রুটিগুলোর চিকিৎসা সম্ভব, কিন্তু তা ব্যয়বহুল।
সন্তানের ভবিষ্যৎ
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মায়ের নবজাতকের জ্নের সময় ওজন বেশি থাকার কারণে পরে ওজন বেড়ে গিয়ে মোটা হয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। এসব নবজাতকের ভবিষ্যতে ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অন্যান্য শিশুর তুলনায় ১০ গুণ বেড়ে যায়।
গর্ভকালীন ও গর্ভপূর্ববর্তী সময়ে ডায়াবেটিক মায়ের রক্তের গ্লুকোজ সঠিক চিকিৎসা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার মাধ্যমে নবজাতকের এসব জটিলতা ও জ্নত্রুটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ ডা· ইমনুল ইসলাম
Leave a Reply