মূলবন্ধ মুদ্রা (Mulabandha Mudra):
মূল শব্দের অর্থ আদি বা উৎপত্তিস্থল। আমাদের স্নায়ুরজ্জুর প্রধান ধারক হিসেবে মেরুদণ্ড মস্তিষ্কের নিম্নাংশ থেকে বের হয়ে গুহ্যদেশে এসে শেষ হয়েছে। নাভিপ্রদেশে কতকগুলো অতি প্রয়োজনীয় গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্র আছে। এই গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রগুলো মলমূত্রত্যাগ, সন্তান প্রসব প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ কাজে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এই গ্রন্থিগুলোর মধ্যে কিডনী (Kidney), পুরুষ দেহের টেস্টিস (Testes), প্রস্ট্রেট গ্রন্থি (Prostrate gland), ক্যুপার্স গ্ল্যান্ড (Cowper’s gland) এবং নারী দেহের ওভারী (Overy), বারথোলিনস গ্ল্যান্ড এবং স্কেনিস গ্ল্যান্ড (Bertholin’s gland and Skene’s gland) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। দেহের এই অংশেই মূলাধার চক্র অবস্থিত।
প্রাচীনকালের সিদ্ধিপ্রাপ্ত যোগী-ঋষিরা প্রতীকী ব্যঞ্জনায় এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা দেন এভাবে। আমাদের শরীরের মধ্যে অসংখ্য নাড়ী আছে, তার মধ্যে ১৪টি প্রধান। এগুলো হলো- ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, সরস্বতী, বারূণী, পূষা, হস্তিজিহ্বা, যশস্বিনী, বিশ্বোদরী, কুহূ, শঙ্খিনী, পরদ্বিণী, অম্লম্বুষা ও গান্ধারী। জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে ইড়া, পিঙ্গলা, সুষুম্না, কুহূ, শঙ্খিনী প্রভৃতি প্রধান নাড়ীগুলোর উৎপত্তি হয়েছে। এদের মধ্যে কুহূনাড়ী জননেন্দ্রিয়ের সমস্ত কাজ সুসম্পন্ন করে আর শঙ্খিনী নাড়ী দেহের মলাদি নির্গমনে সহায়তা করে। এই কুন্দস্থানেই কুলকুণ্ডলিনী নিদ্রিত সাপের আকারে বিরাজ করছেন।
যে মুদ্রা অভ্যাসে বা প্রক্রিয়ায় এই মূলস্থানের অর্থাৎ কুন্দস্থানের গ্রন্থি, স্নায়ু প্রভৃতি সুস্থ, সক্রিয় ও অধিক কর্মক্ষম ও সবল হয়ে ওঠে, তাকেই মূলবন্ধ মুদ্রা (Mulabandha Mudra) বলে।
পদ্ধতি:
পদ্মাসনে বা সহজ সিদ্ধাসনে বসুন। এবার ধীরে ধীরে শ্বাস নিতে নিতে গুহ্যদেশ সবলে আকুঞ্চিত করুন এবং একই সাথে শঙ্খিনী নাড়ীকে (জননেন্দ্রিয় ও গুহ্যদেশের মাঝখানে অবস্থিত কুন্দস্থান থেকে যার উৎপত্তি) উপরে আকর্ষণ করুন। অর্থাৎ গুহ্যদেশ থেকে নাভিদেশ পর্যন্ত সবলে আকর্ষণ করুন। আকর্ষণের সময় মলদ্বারও সঙ্কুচিত হয়ে আসবে। এরপর আস্তে আস্তে শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আকুঞ্চন শিথিল করে দিন। এভাবে দশবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন।
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা দুইবেলা প্রতিবারে দশবার করে দিনে কুড়িবার মুদ্রাটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
এই মুদ্রা অভ্যাসে বস্তিপ্রদেশের গ্রন্থি ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য খুব ভালো ব্যায়ামের কাজ হয়। এতে করে কোষ্ঠবদ্ধতা, অজীর্ণ প্রভৃতি পেটের পীড়া হয় না, জঠরাগ্নি বা ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, শারীরিক মিলনে ধারণশক্তি বৃদ্ধি পায়, কোনপ্রকার স্ত্রী-ব্যাধি সহজে হতে পারে না। অর্শরোগ ও বন্ধ্যাত্ব রোগ প্রতিকারেও ভালো ফল পাওয়া যায়। ইন্দ্রিয় সংযম বা ব্রহ্মচর্য রক্ষায় মুদ্রাটি বিশেষভাবে কার্যকরি।
হঠযোগ-প্রদীপিকা-৬৫ স্তোত্রে যোগ-শাস্ত্রকাররা বলেন- ‘যুবা ভবতি বৃদ্দোহপি সততং মূলবন্ধনাং’। অর্থাৎ মূলবন্ধ মুদ্রা অভ্যাসে বৃদ্ধও যুবার মত স্বাস্থ্য ও শক্তির অধিকারী হয়।
নিষেধ:
১২ বছরের কম বয়সী ছেলেদের এবং ঋতু প্রতিষ্ঠিত হয়নি এমন মেয়েদের জন্য মুদ্রাটি অভ্যাস করা বারণ।
Leave a Reply