ক্যান্সার সম্পর্কে একটা কথা প্রচলিত আছে অর্থাৎ ‘ঈধহপবৎ যধং হড় অহংবিৎ’ বাংলায় এভাবেও বলা যায় যে, ‘যার হয় ক্যান্সার তার নাই অহংবিৎ’ আমাদের শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার হয় সেটা আমরা বেশ ভাল করেই জানি কারণ প্রতিনিয়তই আমাদের অনেকেরই আত্মীয়-স্বজন এই ক্যান্সারের কারণেই মারা যাচ্ছেন। কিন্তু ত্বকেরও যে ক্যান্সার হয় সেটা কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না। তাই ত্বকের দুটো গুরুত্বপূর্ণ ক্যান্সার নিয়ে আজ এখানে সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করব।
স্কয়ামাস কোষ ক্যান্সার
পৃথিবী জুড়েই এই প্রকারের ক্যান্সারের বিস্তার। শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর ১ লক্ষ লোক এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তবে কালো বর্ণের লোকেদের ক্ষেত্রে এ ক্যান্সারের প্রাদূর্ভাব সাদা বর্ণের লোকদের চেয়ে অনেক কম। তুলনামূলকভাবে মহিলাদের চেয়ে পুরুষরাই এই ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং যারা রোদে বেশি কাজ করেন তাদেরই এই ক্যান্সার বেশি হতে দেখা যায়। এই ক্যান্সার ত্বকের বাইরের আবরণ অর্থাৎ বহিস্তক থেকেই উৎপত্তি হয়ে থাকে।
কাদের বেশি হয়
যাদের রঙ সাদা, যারা রৌদ্রে কাজ করেন বেশি, যারা বয়সের দিক থেকে প্রবীণ ও যাদের পরিবারে এই রোগ ইতিপূর্বে ছিল তাদেরই এই রোগ বেশি হতে দেখা যায়।
কোন স্থানে বেশি হয়
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথা, মুখমন্ডল, ঘাড় ও হাতে বেশি হতে দেখা যায়। কারণ এই স্থানগুলোই সাধারণত পোশাক দিয়ে অনাবৃত থাকে এবং এখানেই রোদ পড়ে সব চেয়ে বেশি। ফলে রোদের প্রভাবে এই উন্মুক্ত ত্বকে ক্যান্সার হয় বেশি।
কিভাবে চেনা যায়
দীর্ঘস্থায়ী ক্ষত বা ঘা, যা কিনা চিকিৎসা করিয়েও ভাল হয় না। যার থেকে খুব অল্পতেই রক্তপাত ঘটতে থাকে এবং তা যদি আবার রৌদ্র প্রাপ্ত স্থানে হয় তাহলে অবশ্যই তা ক্যান্সার কিনা বিবেচনায় আনতে হবে এবং আক্রান্ত স্থান থেকে ত্বক কেটে নিয়ে বায়োপসি পরীক্ষার জন্য পাঠাতে হবে। তবে দীর্ঘস্থায়ী সব ক্ষতই ক্যান্সার হবে এমন ধারণা মোটেই সঠিক নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নডিউল বা টিউমারের আকারেও দেখা দিতে পারে। এক হিসাবে দেখা গেছে এই ক্যান্সারের সংখ্যা মুখমন্ডলে (মাথা সহকারে) হয় ৮১ শতাংশ। হাতে ১৬ শতাংশ। পায়ে ১.৩ শতাংশ এবং দেহের অন্য অংশে মাত্র ১.৫ শতাংশ।
ব্যাসাল কোষ ক্যান্সার
ত্বকের ক্যান্সারের মধ্যে সব চেয়ে বেশি হয় এই ধরনের ক্যান্সার। এই ক্যান্সারেও ত্বকের বাইরের স্তর অর্থাৎ বহিস্তক থেকে শুরু হয়। সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি যেহেতু ত্বকের বহিস্তকের উপরই পড়ে তাই ধরা হয় এই সূর্য রশ্মির প্রভাবই এই ক্যান্সার হওয়ার অন্যতম কারণ এবং আমাদের দেহে যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার মধ্যে সংখ্যার দিক দিয়ে এই ক্যান্সারই হলো সব চেয়ে বেশি। শুধুমাত্র ইউএসএ’তেই প্রতি বছর নতুন করে চার লাখ লোক এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। এই ক্যান্সারও সাদা বর্ণের লোকদের মধ্যেই বেশি হয় যা প্রথমে একটা খুব ছোট্ট টিউমার আকারে দেখা দিতে পারে। যার থেকে খুব সহজেই রক্তপাত ঘটে থাকে এবং যা কোনো ওষুধেই ভাল হয় না। ফলে এই ক্যান্সার খুব সহজেই রোগীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ও তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে বাধ্য করে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ত্বকের উপর ছোট দানার আকারেও দেখা যায় এবং যা আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে এবং মূখনো সেই দানার মধ্যখানের উপরিভাগে ক্ষতেরও সৃষ্টি করে থাকে এবং মখ্যত এটি মুখেই হতে দেখা যায়। এই ক্যান্সার মুখে বেশি হওয়ার কারণও একই যেহেতু মুখ অনাবৃত থাকে সেহেতু সূর্য রশ্মির প্রভাবেই তা মুখেই বেশি হয়ে থাকে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটু বাদামি রঙ নিয়ে গোটা বা নডিউল নিয়েও উঠতে দেখা যায়।
রোগ নির্ণয়
বর্ণিত ধরনের ক্যান্সারই ইরড়ঢ়ংু করে নির্ণয় করা যায়। অর্থাৎ আক্রান্ত স্থান থেকে ত্বক কেটে নিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে মাইক্রোসকোপের নিচে পরীক্ষা করতে হয়।
চিকিৎসা
মনে রাখতে হবে ত্বকের ক্যান্সার সঠিক সময় নির্ণয় ও চিকিৎসা হলে কোনই বিপদের সম্ভাবনা নেই। অর্থাৎ ঈধহপবৎ যধং হড় ধহংবিৎ ত্বক ক্যান্সারের ক্ষেত্রে মোটেও সত্য নয়। চিকিৎসা ক্ষেত্রে কিউরেট, ইলেকট্রডেসিকেশন বা অপারেশনই অন্যতম।
ডা. দিদারুল আহসান
চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ
চেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল
১২, ফার্মগেট, ঢাকা
ফোন : ০১৭১৫৬১৬২০০।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, সেপ্টেম্বর ০৫, ২০০৯
Leave a Reply