বারবার কেন সংক্রমণ হয়?
অনেক মহিলা ঘনঘন মূত্রপত্রের সংক্রমণে ভোগেন। দেখা গেছে, ওষুধ খাওয়ার পর কিছুদিন ভালো থাকেন, আবার তার মূত্রপথে সংক্রমণ দেখা দেয়। প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলাই বারবার মূত্রপথে সংক্রমণের অভিযোগ করেন। অনেককে দেখা গেছে, অতিষ্ঠ হয়ে চিকিৎসক পরিবর্তন করতে। কেন তারা ঘনঘন মূত্রপথের সংক্রমণের শিকার হন তা নির্ণয় করা জরুরী এবং সেই মতো চিকিৎসা করাও জরুরী। হুটহাট করে অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান না করে আগে রোগের প্রকৃত কারণ খুঁজে বের করতে হবে।
সাধারণত একবার এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার পর দেখা গেছে দ্বিতীয়বার তারা ভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ কেউ অবশ্য একই ধরনের ব্যাকটেরিয়া দ্বারাও আবার আক্রান্ত হন। আবার কেউ কেউ একাধিক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হন। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ (এনআইএইচ) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বারবার মূত্রপথের সংক্রমণ ঘটার জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়াকে মূত্রপথের কোষের দেয়ালে এটে রাখার ক্ষমতা। এনআইএইচ’র গবেষণায় আরো দেখা গেছে, যেসব মহিলার বারবার মূত্রপথের সংক্রমণ হয়, তাদের এই সংক্রমণের জন্য রক্তের বিশেষ ধরনও দায়ী। এসব মহিলার জননাঙ্গ ও মূত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া সহজে লেগে থাকে।
গর্ভাবস্থায় মূত্রপথের সংক্রমণ
অন্য মহিলাদের তুলনায় গর্ভবতী মহিলাদের মূত্রপথে সংক্রমণ হওয়ার প্রবণতা খুব বেশি দেখা যায় না। তবে গর্ভবতী মহিলাদের মূত্রপথে সংক্রমণ হলে সেই সংক্রমণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিডনিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও মূত্রপথের সংক্রমণ মহিলাদের মধ্যে এমনিতেই বেশি দেখা যায়। বেশ কিছু রিপোর্ট অনুযায়ী গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের সংক্রমণ রোগে আক্রান্ত হন প্রায় দুই-চার শতাংশ গর্ভবতী মহিলা। বিজ্ঞানীদের ধারণা, গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তন হয় বলে ও মূত্রপথের অবস্থান সরে যায় বলে ব্যাকটেরিয়া সহজে বৃক্কনালী পথে কিডনিতে পৌঁছে। এ কারণে গর্ভাবস্থায় প্রতি মাসে অন্তত একবার প্রস্রাবের পরীক্ষা করে কোনো সংক্রমণ আছে কিনা তা দেখা উচিত।
কিডনি রোগ ও মূত্রপথের সংক্রমণ
কিডনি রোগ আর মূত্রপথের সংক্রমণ কিন্তু এক নয়। তবে একটির কারণে অন্যটি হতে পারে। কিডনি রোগের প্রধান দুইটি কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। পরিবারের কারো কিডনি রোগ হলে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এছাড়া নেফ্রাইটিস, ডায়রিয়া, পুড়ে যাওয়া, একাধিকবার মূত্রনালীর সংক্রমণ, মূত্রনালীতে কোনো প্রতিবন্ধকতা, পলিসিস্টিক কিডনি, টিউবারক্যুলোসিস বা যক্ষা, হঠাৎ রক্তচাপ কমে যাওয়া, দীর্ঘদিন ব্যথার ওষুধ খাওয়া প্রভৃতি কারণে কিডনি রোগ হতে পারে।
কিডনি রোগের উপসর্গ হলো ঘন ঘন প্রস্রাব, রক্ত স্বল্পতা, ক্লান্তিবোধ করা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, হাত-পা ও চোখ-মুখ ফুলে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, কাজে মনোযোগ দিতে না পারা, মাসংপেশীতে খিল ধরা, হাত ও পায়ের আঙুল ধীরে ধীরে ফুলে যাওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, রক্তে ইউরিয়া ও ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, প্রস্রাবে রক্ত, ইউরিক এসিড ও প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া, অল্প পরিশ্রমে বুক ধড়ফড় ও শ্বাসকষ্ট হওয়া, কোমরের পেছন দিকে ব্যথা করা ইত্যাদি।
সূত্রঃ ২৫শে নভেম্বর ২০০৭, দৈনিক ইত্তেফাক
লেখকঃ ডা. মিজানুর রহমান কল্লোল
চেম্বার: কমপ্যাথ লিমিটেড, ১৩৬, এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা
Leave a Reply