সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস, এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা আর সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা মিলে তৈরি হয়েছে একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রজাতির ভাইরাস-নাম ইনফ্লুয়েঞ্জা এইচ১এন১। পরিচিতি পেয়েছে সোয়াইন ফ্লু নামে। গত শতাব্দীর তিনটি ভয়াবহ ‘ফ্লু বিশ্বমারি’র পর বিজ্ঞানীরা আশঙ্কা করছিলেন আরেকটি ফ্লু বিশ্বমারির। এইচ১এন১ বা সোয়াইন ফ্লু সেই বিশ্বমারি হিসেবে এসেছে বিশ্বজুড়ে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করেছে বিশ্বমারি প্রতিরোধের জন্য। সোয়াইন ফ্লুর প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে যাতে মহামারির রূপ নিতে না পারে, সে জন্যই ‘স্বাস্থ্যকুশল’-এর উদ্যোগে প্রথম আলোর এই গোলটেবিল।
যাঁরা অংশ নিলেন
প্যানেল আলোচক
শাহ মনির হোসেন
মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
এ কে আজাদ খান
সভাপতি, বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতি
মো· নজরুল ইসলাম
সাবেক উপাচার্য ও অধ্যাপক ভাইরোলজি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
কামরুজ্জামান বিশ্বাস
রোগতত্ত্ববিষয়ক জাতীয়কর্মকর্তা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
নীতীশ চন্দ্র দেবনাথ
উপাচার্য, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যালসায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়
পিনাকী ভট্টাচার্য
প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা
পপুলার ফার্মা
সঞ্চালক
আব্দুলকাইয়ুম
যুগ্ম সম্পাদক, প্রথম আলো
ইকবাল কবীর
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও রোগতত্ত্ববিদ
আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম
সোয়াইন ফ্লু নিয়ে মানুষের মধ্যে নানা দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। অনেকে ব্যাপারটি পুরোপুরি জানেও না। কতটা বিপদ কিংবা এটা থেকে বের হওয়ার উপায় কী-এ সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে আলোচনার জন্য আজকের আয়োজন। বার্ড ফ্লু আসার পর মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এখন সোয়াইন ফ্লু আসার পর দেখা যাচ্ছে, সোয়াইন থেকে সোয়াইনে ছড়িয়েছে, এরপর সোয়াইন থেকে মানুষে ছড়িয়েছে এবং সর্বশেষ মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে, যেটি ভয়াবহ আকারে দেখা গেছে। এখন বিশ্বমারি হিসেবে আবির্ভূত সোয়াইন ফ্লু থেকে মুক্ত থাকতে আমাদের কী করণীয়, সেটার ভয়াবহতা কতটা, কোন জায়গায় সতর্ক হতে পারলে সত্যিকার অর্থে আমরা মোকাবিলা করতে পারব, সে বিষয়টি আলোচনা করা হবে। শুরুতে ডা· ইকবাল কবীর আলোচ্য বিষয়ের পটভূমি সম্পর্কে বলবেন।
ইকবাল কবীর
ধন্যবাদ, কাইয়ুম ভাইকে। তিনি সংক্ষেপে বলে দিলেন আজকে ‘সোয়াইন ফ্লুঃ আমাদের করণীয়’ বিষয়ে আলোচনার মূল লক্ষ্যটি। এটা ঠিক যে দীর্ঘদিন ধরে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে এবং একটা গ্লোবাল ইস্যু হিসেবে গত শতাব্দীর ফ্লু মহামারির যে বিশ্ব ইতিহাস রয়েছে, সেটার আলোকে যেকোনো মুহূর্তে আমাদের মধ্যে বিশ্বমারি আসতে পারে, আশঙ্কা ছিল। এর ফলে বার্ড ফ্লু নিয়ে চিন্তিত ছিলাম এবং গত তিন বছরে এটা নিয়ে অনেক কিছু হয়েছে। সম্প্রতি মেক্সিকোতে যখন সোয়াইন ফ্লু দেখা দিল এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যখন এর সর্বোচ্চ প্যান্ডেমিক অ্যালার্ট দিল, তখন প্রাথমিকভাবে সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন বন্দরে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলো, যাতে এর আগমনটা ঠেকিয়ে রাখা যায় এবং বেশ অনেক দিন ঠেকিয়ে রাখা সম্ভবও হয়েছে। ফলে আমাদের দেশে ফ্লু সংক্রমণ একটু পরই হয়েছে। তবে যখন দেখা গেল এই ফ্লুর কারণে মৃত্যু ঘটেছে, তখন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সবাই নড়েচড়ে বসল। এ অবস্থায় দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা চলছে। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা কী? সংবাদমাধ্যমে বেশি প্রচার হলে বেশি সমস্যা হচ্ছে কি না। রোগী বাড়ছে। এখন মানুষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাচ্ছে কি না। সরকারিভাবে যেখানে গেলে চিকিৎসা পাওয়ার কথা বলা হচ্ছে, সেখানে মানুষ যাচ্ছে কিন্তু সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছে না। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আজকের আলোচনা।
আমাদের আজকের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিশেষজ্ঞদের কাছে জানা-সোয়াইন ফ্লু কতটা খারাপ হতে পারে; আমাদের প্রস্তুতি ঠিক আছে কি না; রোগতাত্ত্বিকভাবে আমরা বড় কোনো ধরনের সমস্যা মোকাাবিলার জন্য প্রস্তুত কি না-প্রাথমিকভাবে সমস্যা মোকাবিলার ক্ষেত্রে যে ত্রুটিগুলো ছিল, সেগুলো শোধরানোর ক্ষেত্রে আমাদের প্রস্তুতি কেমন হওয়া উচিত, এ বিষয়গুলো নিয়ে আজকের আলোচনা। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে সিলেক্ট করা বেশ কয়েকটি হাসপাতালের মধ্যে বারডেম রয়েছে। যাঁরা রিস্ক গ্রুপের মধ্যে আছেন তাঁদের মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা অন্যতম। ডায়াবেটিক সমিতির সারা দেশে অনেক শাখা রয়েছে। বারডেমের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক রয়েছে, তাদের মাধ্যমে জনগণকে সতর্ক করা যায়। সর্বোপরি সরকারের দিক থেকে, মিডিয়া কিংবা আমাদের দিক থেকে কী ভূমিকা থাকতে পারে, চিকিৎসা বিষয়ে জানানো, এসব বিষয় নিয়ে বলবেন অধ্যাপক এ কে আজাদ খান।
এ কে আজাদ খান
ধন্যবাদ। আমার মনে হয়, সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কে মানুষের যে ভীতি, তা অতিরঞ্জিত। পশ্চিমা উন্নত বিশ্বে ফ্লুর টিকা রয়েছে, কিন্তু সোয়াইন ফ্লুর টিকা তৈরি হয়নি বলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক রয়েছে। আমাদের দেশে যেখানে সাধারণ ফ্লুর টিকাই নেই, সেখানে আমাদের সাধারণ ফ্লু থেকে সোয়াইন ফ্লুতে বেশি আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। পত্রপত্রিকায় যা দেখি, আমাদের দেশে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে দুজন মারা গেছে। এর আগে ফ্লুতেও অনেক লোক মারা গেছে। তবে আমাদের সাবধান হতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোগীকে চিহ্নিত করা সর্বপ্রথম জরুরি। যেহেতু খুব সহজে তা নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে না, সে জন্য আমরা সবাইকে সচেতন করতে পারি। ফ্লু টাইপ লক্ষণ দেখা দিলে নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে, যাতে হাঁচি-কাশি না ছড়ায়। উন্নত বিশ্বে এ কাজটি এমনিতেই করা হয়। এটা অভ্যাসের বিষয়। আমাদের দেশে যেহেতু এই অভ্যাসের ব্যাপারটি এখনো গড়ে ওঠেনি, সুতরাং এ ব্যাপারে জোর দিতে হবে। শুধু সাবান ব্যবহারের মাধ্যমে পরিষ্কার থেকে যদি এই ভাইরাস প্রতিরোধ করা যায়, তাহলে ভালোই হয়। বারডেমে আমরা ফ্লু কর্নার খুলেছি। এটাকে সোয়াইন ফ্লু কর্নার বলা ঠিক নয়। কারণ এখানে আসা অধিকাংশ রোগীই সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত। আমরা আমাদের বিভিন্ন শাখায় ফ্লু কর্নার খোলার অনুরোধ করেছি এবং চিকিৎসার প্রয়োজনে আমরা বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
ডায়াবেটিসের রোগীদের অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হলে সমস্যা হয়ে যায় নিয়ন্ত্রণ না থাকলে। এ ক্ষেত্রে আমরা নিয়ন্ত্রণ করার ওপর জোর দিচ্ছি। প্রয়োজনের তাগিদে ভিড়ের মধ্যে গেলে মাস্ক ব্যবহার করা উচিত। যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা উচিত। পাশাপাশি যিনি আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর কাছে সেবাদানকারী ছাড়া অন্যদের না যাওয়া উচিত। মূল ব্যাপারটি হচ্ছে সবাইকে সচেতন করা। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, এটাও একটা সচেতনতা। আমাদের সাবধান থাকতে হবে। যেহেতু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, তাই সতর্ক থাকতে হবে। এর আগে যেমন ডেঙ্গু সমস্যা ছিল। ডেঙ্গু মশার কামড় থেকে বাঁচতে সবাই সতর্ক হয়েছিল। সে রকম আমাদের সতর্ক হতে হবে। পাশাপাশি যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা। যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তাঁকে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা বারডেমে আউটডোরে ফ্লু কর্নার করেছি। পাশাপাশি যদি রোগী ভর্তি করার প্রয়োজন হয়, এ জন্য আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আব্দুল কাইয়ুম
আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি যে ধারণা দিয়েছেন, সে অবস্থায় আশা করি কিছুদিনের মধ্যেই পৌঁছাব। সাধারণভাবে সতর্ক থাকলেই চলবে-এ কথাটি তিনি বলেছেন। এখন ডা· কামরুজ্জামান বিশ্বাসকে বলার জন্য অনুরোধ করছি, সোয়াইন ফ্লু আর সাধারণ ফ্লুর মধ্যে যে পার্থক্য আছে সে বিষয়টি।
কামরুজ্জামান বিশ্বাস
ধন্যবাদ। সাধারণ বা সিজোনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সবাইকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা তৈরি করে দেয়। কারণ এটি বছরব্যাপী বা প্রতিবছরই হচ্ছে। আমাদের এসব ফ্লু ভাইরাসের ওষুধ নেই। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এসব ফ্লু বেশি ছড়ায় না। কারণ প্রায় সবার মধ্যেই কিছুটা রোগ-প্রতিরোধব্যবস্থা রয়েছে। তবে সোয়াইন ফ্লুকে বিশ্বমারি ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ এই ফ্লুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা সারা বিশ্বে এখনো গড়ে ওঠেনি। এখন যারা আক্রান্ত হয়েছে, তাদের প্রতিরোধক্ষমতা কিছুটা তৈরি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ১৮২টি দেশে দুই লাখ ৫৪ হাজার জন আক্রান্ত হয়েছে ৩০ আগস্ট পর্যন্ত। এটা কিন্তু ল্যাবরেটরির হিসাব। তবে বাস্তবে এর সংখ্যা অনেক। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, সোয়াইন ফ্লু মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে এবং এর প্রতিরোধক্ষমতা অনেক কম।
এ কে আজাদ খান
যেহেতু মানুষের মধ্যে সোয়াইন ফ্লুর প্রতিরোধক্ষমতা খুব কম, তাই এটা এমনভাবে ছড়াচ্ছে। তবে এটাও বলা দরকার, অধিকাংশ রোগীর বেলায়ই সোয়াইন ফ্লু থেকে সিরিয়াস কিছু হয়নি।
কামরুজ্জামান বিশ্বাস
এখানে শতকরা ৯৯ ভাগ রোগীই সেরে উঠেছে। কেউ কেউ স্বল্প ওষুধ খেয়ে কিংবা কেউ কেউ কোনো ধরনের ওষুধ ছাড়াই। সুতরাং এটা নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার কিছু নেই। সতর্ক থাকতে পারলে এ ধরনের রোগবালাই থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আরেকটি ব্যাপার, এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে ২০ লাখ ট্যাবলেট দেওয়া হয়েছে। বাংলদেশেও প্রায় নয় লাখ ট্যাবলেট তৈরি রয়েছে। পাশাপাশি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কান্ট্রি অফিসেও এক লাখ ট্যাবলেট মজুদ আছে। তাই ওষুধ সম্পর্কে কোনো দুশ্চিন্তা নেই। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ওষুধ খেলে সমস্যা হতে পারে। চলতি মাসে লাইসেন্সড এইচ১এন১ ভ্যাকসিন বাজারে আসছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য। পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত ও ব্যাংককে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা চলছে এবং বছরে এরা ২২০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। এদের থেকে কম খরচে উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। আমরা যেহেতু এর আগেও ট্যাবলেট পেয়েছি, আশা করি ভ্যাকসিনও পাব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সোয়াইন ফ্লু সম্পর্কিত যেকোনো সাহায্য করবে বাংলাদেশকে।
এ কে আজাদ খান
একটা ব্যাপার সবার জানা উচিত। অন্যান্য ফ্লুর ক্ষেত্রে দেখা যেত ওষুধ নেই। তবে সোয়াইন ফ্লুর পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে এবং তা খুব বেশি দাম নয়। তবে লক্ষ রাখতে হবে, ওষুধের কোর্স শুরু করলে অবশ্যই তা শেষ করতে হবে।
আব্দুল কাইয়ুম
এখানে একটি বিষয় যোগ করা যায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে তো আমরা পাচ্ছি, কিন্তু দেশে উৎপাদনের ক্ষেত্রে যদি এর কাঁচামালের ওপর থেকে ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক তুলে নেওয়া হয়, তাহলে ওষুধের দাম অনেক কমে আসবে। সামনে শীতকাল। পরিস্থিতি যদি আরও খারাপের দিকে যায়, তাহলে শুল্ক তুলে দিলে ওষুধের দাম অনেক কমে যাবে।
কামরুজ্জামান বিশ্বাস
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ, ওষুধের মানের ব্যাপারে লক্ষ রাখা, অর্থাৎ যতটুকু বলা হচ্ছে ততটুকু দেওয়া হচ্ছে কি না এ বিষয়ে দৃষ্টি দেওয়া। এটা সরকারের নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।
এ কে আজাদ খান
এক অর্থে বাংলাদেশ বর্তমানে ওষুধ রপ্তানিকারক দেশ। সুতরাং মান নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কাজ করা যায়। তবে আরেকটি ব্যাপারও গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে ওষুধের মূল্য। অর্থাৎ ওষুধ সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা।
আব্দুল কাইয়ুম
এখন বলার জন্য অনুরোধ করছি নীতীশ চন্দ্র দেবনাথকে।
নীতিশ চন্দ্র দেবনাথ
ধন্যবাদ। শুরুতে একটা ব্যাপার বলি, সোয়াইন ফ্লু যখন নামটা এল, আমরা ধরে নিয়েছিলাম এটা শূকর থেকে এসেছে। এটা সোয়াইন বা শূকর থেকে আসায় এ ধরনের নামকরণ। তবে এই ভাইরাসের যে আটটি সেগমেন্ট, এর মধ্যে দুটি সেগমেন্ট আলাদা। বাকি ছয়টির সঙ্গে সোয়াইন ফ্লুর মিল রয়েছে।
আমাদের সোয়াইন পপুলেশন কম। তিন লাখের মতো
রয়েছে। তবে আমরা কিন্তু নিশ্চিত নই আমাদের দেশের শূকরগুলোয় এই ভাইরাস আছে কি না। উন্নত বিশ্বে একটা রোগতাত্ত্বিক নিরীক্ষণ নিয়মিতভাবেই হচ্ছে, ইনফ্লুয়েঞ্জা
ভাইরাসের বৈশিষ্ট্য কীভাবে বদলাচ্ছে তা মূল্যায়নের জন্য। আরেকটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এখন সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত, এর আগে বার্ড ফ্লুতে, এর আগে নিপা, এর আগে সার্স ভাইরাস-এই সব ভাইরাসই কিন্তু প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে
চলে এসেছে। আমরা বলছি, গত ২৫ বছরে হিউম্যান ডিজিজ হিসেবে ৩৫টি রোগ দেখা গেছে, যার মধ্যে শতকরা ৭৫ ভাগ রোগই প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে এসেছে। বলা হচ্ছে, প্রতি আট মাসে একটি করে নতুন রোগের উদ্ভব হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই আসছে প্রাণী থেকে। এটা কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ।
আগেও প্রাণী থেকে মানুষের মধ্যে রোগ আসত, তবে এর সংখ্যা এত বেশি ছিল না। কিছুদিন ধরে যে হারে বাড়ছে, তা আশঙ্কাজনক।
আরেকটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আগে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে হাঁস-মুরগি পালন করতাম। এখন কিন্তু তা হচ্ছে না। এখন এক জায়গায় হাজারটা প্রাণী পালন করা হচ্ছে। ফলে প্রাণী থেকে রোগ বেড়ে চলেছে। পরিবেশ, প্রাণী ও মানুষের মধ্যে এত
ব্যাপক হারে রোগ বাড়ছে যে সবকিছুকে ওয়ান হেলথের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। কারণ হিউম্যান হেলথ প্রাণী হেলথের ওপর নির্ভরশীল। প্রাণীর হেলথ পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। তাই শুধু হিউম্যান হেলথ নিয়ে কাজ করলেই হবে না। প্রাণী থেকে আবার তা ছড়াবে। ওয়াইল্ড লাইফের পরিবর্তনের ফলে নানা সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য ওয়ান হেলথ প্রয়োজন। এটা সরকারিভাবে চিন্তা করা উচিত। রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম বাড়ানো উচিত।
আব্দুল কাইয়ুম
ধন্যবাদ আপনাকে। আমরা জানলাম, রোগ প্রতিরোধের ব্যাপারে বড় পরিসরে ব্যাপক আকারে আমাদের ভূমিকা নিতে হবে। এখন মো· নজরুল ইসলামের কাছে জানতে চাইছি, ভাইরোলজির দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা কীভাবে সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধ করতে পারি এবং এর চিকিৎসায় ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।
মো· নজরুল ইসলাম
শুরুতে বলি, সম্প্রতি আইসিডিডিআরবির এক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হাঁসের মধ্যে বার্ড ফ্লুর সংক্রমণ বিষয়ে একটা সার্ভিলেন্স টিম গঠন করা হয়েছে। শূকরের মধ্যেও আশা করি শুরু হয়ে যাবে। রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তন করা খুবই জরুরি। যেকোনো ক্ষেত্রেই আচার-আচরণের পরিবর্তন জরুরি। আর ভিড়ের মধ্যে গেলে মাস্ক অপরিহার্য। কারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে লক্ষণ যেদিন থেকে দেখা দেবে, এর এক দিন আগে থেকে ট্রান্সমিশন শুরু হয়। এক দিন আগে আক্রান্ত ব্যক্তি মাস্ক ব্যবহার করবে না। সুতরাং জনসমাগমস্থলে বা ভিড়ের মধ্যে গেলে সবারই নিজ থেকে মাস্ক ব্যবহার করা ভালো।
আব্দুল কাইয়ুম
মাস্ক ব্যবহার করে কি সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস আটকানো সম্ভব?
মো· নজরুল ইসলাম
না, ভাইরাসটি মাস্ক দিয়ে আটকানো সম্ভব নয়। মাস্কটা ব্যবহার হয় ড্রপলেট (হাঁচি, কাশি, থুথুর জলকণা) আটকানোর কাজে। পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির তিন ফুটের মধ্যে থাকলে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ছড়াবে। সে জন্য রোগীর তিন ফুটের কাছে যাওয়া ঠিক নয়। তবে উন্নত এক ধরনের মাস্ক রয়েছে এন৯৫, যা ৯৫ ভাগ নিরাপদ, যার মূল্য অনেক বেশি। এ মাস্ক ব্যবহারে বিশেষ সুবিধা, অর্থাৎ নিরাপদ থাকা সম্ভব হয়।
আরেকটি তথ্য, এই ভাইরাসটি খোলা অবস্থায় রোদের মধ্যে দুই ঘণ্টার বেশি বাঁচতে পারে না। সোয়াইন ফ্লুতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল। ১৯১৮ ও ১৯১৯ সালে দুই বছরে আক্রান্ত ফ্লুতে কমপক্ষে দুই কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল। তখন পৃথিবীর লোকসংখ্যা ছিল এখনকার পৃথিবীর অর্ধেক। তখন এ ইনফেকশন ছড়ানোর মতো প্লেন, বাস সার্ভিস ছিল না। ওই সময় এতগুলো লোক মারা গেছে ভাইরাল নিউমোনিয়ায় নয়, ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ায়। কারণ তখন ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়নি। অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়েছে ১৯২৯ সালে। ১৯৪০ সালে ১১ বছর পর এটা সাধারণ মানুষ ব্যবহার করেছে। ১৯৪০ সালের আগে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ছিল না। ইনফ্লুয়েঞ্জায় মানুষ মারা যায় কেন? কারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা নিজে মারে না, ইনফ্লুয়েঞ্জার কমপ্লিকেশনে মারা যায়। ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে তাড়াতাড়ি ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হতে পারে। অথবা ইনফ্লুয়েঞ্জা বিশেষ কতগুলো রোগে জটিলতা তৈরি করে-হার্ট, ফুসফুসের রোগে ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে মানুষ মারা যায়। গত শতাব্দী, অর্থাৎ ১৯০০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনটি প্যান্ডেমিক বা বিশ্বমারি হয়েছে, যার মধ্যে ১৯১৮ সালে একটি, ১৯৫৭ সালে একটি ও ১৯৬৪ সালে একটি। ১৯১৮ সালেও এইচ১এন১ ভাইরাসটিই ছিল। এ বছর এইচ১এন১ ভাইরাস আবার দেখা দিল মেক্সিকোতে। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সবাইকে সতর্ক করল যে সেই ভাইরাস চলে এসেছে। পরিস্থিতি এখন ভিন্ন। ভাইরাস ছড়ানোটা এখন খুব সহজ হয়ে গেছে এক দেশ থেকে অন্য দেশে। ১৯১৮ সালে তা ছিল না। তবে ভাইরাল ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন হয়ে মানুষ মারা যাবে না সহজে। কারণ বর্তমানে ডজনে ডজনে অ্যান্টিবায়োটিক রয়েছে। সুতরাং আমরা বিশেষ সুবিধা পাচ্ছি। যদি পিওর ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়, ভাইরাল নিউমোনিয়া হয়, তাহলে সেখানে অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট রয়েছে, যদিও আমাদের তিনটি অ্যান্টিভাইরাল এজেন্টের মধ্যে দুটি রেজিস্টেন্ট। দুটি ওষুধ বাদ হয়ে গেছে, এখন শুধু রয়েছে ওসেলটামিভির ও জানামিভির ওষুধটি।
সোয়াইন ফ্লু ট্রিটমেন্টের আগে দরকার সঠিক ডায়াগনোসিস। কারও ইনফ্লুয়েঞ্জা হলে সেটা এইচ১এন১-এর সংক্রমণ কি না, তা আগে জানতে হবে। এটি জানতে তিনটি পদ্ধতি রয়েছে। একটি হচ্ছে আইসোলেশন অব দ্য ভাইরাস, এটি খুব ব্যয়বহুল নয়। আরেকটি হলো অ্যান্টিবডি ডিটেক্ট করে করা যায়। আরেকটি হলো আরটিডিসিআর, যেটি রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা কেন্দ্র (আইইডিসিআর) করছে। এই তিনটি পরীক্ষাই দেশে চালু করা যায়। আমাদের দেশে সস্তায় রোগ নির্ণয়ের ভালো পদ্ধতি চালু করা উচিত। এগুলো তৈরি করাই আছে, শুধু ছড়িয়ে দিতে হবে। অন্তত সবগুলো মেডিকেল কলেজে এ ব্যবস্থা রাখতে হবে। শুধু আইইডিসিআরে এগুলো থাকলে হবে না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের যেকোনো লোকের পক্ষে ঢাকায় এসে পরীক্ষা করা সম্ভব নাও হতে পারে। আরেকটি হচ্ছে ক্লিনিকাল ডায়াগনোসিস। এতে দেখা যায় আক্রান্ত লোকের জ্বর হবে, সর্দি-কাশি হবে, চোখ লাল হবে, নাক দিয়ে পানি পড়বে। দুদিন বা তিন দিন জ্বরের পর প্যারাসিটামল খাওয়ানো হলো-দেখতে হবে তার ব্যাকটেরিয়াল নিউমেনিয়া হয়েছে কি না। ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়া হলে শুধু ওসেলটামিভির দিয়ে চিকিৎসা করলে চলবে না, সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকও দিতে হবে।
আব্দুল কাইয়ুম
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শাহ মনির হোসেন সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ সম্পর্কে বলবেন।
শাহ মনির হোসেন
সোয়াইন ফ্লু নিয়ে এত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
শতকরা ৯৮ ভাগ রোগী এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। বাকি দুই ভাগ রোগীর যদি জ্বর, গলাব্যথা, কাশি, সর্দি ইত্যাদি উপসর্গের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হয়, তবেই সোয়াইন ফ্লুর চিকিৎসা দিতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে সোয়াইন ফ্লুর ওষুধ ‘নিয়ন্ত্রিত বাজারে’ বিক্রি হবে। ঢাকা মহানগর এলাকায় ৫০টি, চট্টগ্রামে ২০টি ও অন্যান্য বড় শহরে ১০টি করে দোকানে এ রোগের ওষুধ বিক্রি হবে। জেলা শহরে পাঁচটি ও উপজেলায় তিনটি করে দোকানে এ ওষুধ বিক্রি করা হবে। সরকার-নির্ধারিত দোকান ছাড়া অন্য কোনো দোকান এ ওষুধ বিক্রি করা যাবে না। অননুমোদিত দোকানে এ ওষুধ বিক্রি করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর সঙ্গে এক আলোচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অপব্যবহার বন্ধ ও ওষুধ সহজলভ্য করার জন্য সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোয়াইন ফ্লুর প্রতিটি বড়ির দাম ১৮০ থেকে কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করতে কোম্পানিগুলো রাজি হয়েছে। সরকারের কাছে সোয়াইন ফ্লুর ২৯ লাখ ওষুধ মজুদ করা আছে। কোম্পানিগুলোর কাছে আছে আরও আট লাখ ওষুধ। গণমাধ্যমের মাধ্যমে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাও আমরা গ্রহণ করেছি, যাতে নির্দিষ্ট দোকান ছাড়া কেউ ওষুধ না কেনে। এতে নকল ওষুধের হাত থেকে জনগণ রেহাই পাবে। পাশাপাশি ওষুধও কালোবাজারিদের হাতে পৌঁছাবে না।
সামনে ঈদ। ঈদের ছুটিতে ঢাকা থেকে বিপুলসংখ্যক লোক দেশের বিভিন্ন স্থান যায়। লঞ্চ, ট্রেন ও বাসে অতিরিক্ত ভিড় হয়। আমাদের আশঙ্কা, এ সময় সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই আমাদের ঈদের ছুটির সময়টাতে সতর্কভাবে চলাফেরা করতে হবে। যাঁরা ইতিমধ্যে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে; সম্ভব হলে চলাফেরা না করাই ভালো।
আরেকটা কথা এসেছে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স নিয়ে। যেকোনো ওষুধেরই পুরো কোর্স কমপ্লিট না করলে কিংবা কমপ্লায়েন্স অনুযায়ী ব্যবহার না করলে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে। সেটা যাতে না হয় সে কারণেই আমরা বলছি চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন না করতে।
পিনাকী ভট্টাচার্য
সরকারকে সহায়তা করার জন্য ওষুধের দাম কমাতে ব্যবসায়ীরা রাজি হয়েছেন। তবে দাম বেশি কমলে তা অন্য দেশে পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তখন কালোবাজারিদের কাছেও ওষুধ সহজলভ্য হয়ে উঠবে। এ ছাড়া ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স তৈরি হতে পারে ঠিকমতো ওষুধ ব্যবহার না করলে। এটা পৃথিবীর যেকোনো দেশেই হতে পারে। তবে আমাদের অবশ্যই সাবধান থাকতে হবে।
আমরা দেশে ওষুধ তৈরি করছি, তাই এ দেশের মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। তৈরির সময় ওষুধের মান সতর্কতার সঙ্গে নিশ্চিত করা হবে।
আব্দুল কাইয়ুম
আশা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সোয়াইন ফ্লু প্রতিরোধে সক্ষম হব। আপনাদের সবাইকে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০০৯
তোফাসানি
লেখাটা সচেতনতার জন্য খুব সহায়ক।