বেশির ভাগ লোকের ধারণা, পুরুষেরা বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। মেয়েদের হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পরিসংখ্যান কম। কিন্তু করোনারি কেয়ার ইউনিটে গেলে দেখা যায়, সেখানে পুরুষের চেয়ে নারীর সংখ্যাই বেশি। সবার বয়সই পঞ্চাশের ওপরে। এ কথা মিথ্যা নয়, সার্বিকভাবে পুরুষের হার্ট অ্যাটাক নারীর চেয়ে বেশি হয়। আসলে এ ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী বলে কথা নেই। উভয়ই সমান ঝুঁকিতে আছে। হার্ট অ্যাটাক হওয়ার অনেক কারণ আছে; কিছু কারণ পরিবর্তনযোগ্য। অর্থাৎ যে কারণে হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে, তা দূর করলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকবে না। আবার কিছু অপরিবর্তনযোগ্য কারণ আছে। যেমন-বয়স। বয়স তো হৃদরোগের অন্যতম কারণ। বয়স তো আর ফেরানো যাচ্ছে না। ছেলেবেলায় হার্ট অ্যাটাক হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। তবে আজকাল বিভিন্ন কারণে ৩০ বছরের ওপরেই হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে। কিন্তু ৩০ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে দেখা যায়, নারীর চেয়ে পুরুষেরাই বেশি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন। দেখা গেছে, আনুপাতিকভাবে দুজন পুরুষ ও একজন নারী আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে ৪৫ বছর বয়স আর নারীর ক্ষেত্রে ৫৫ বছর বয়সের পর হৃদরোগের আশঙ্কা অনেক বেড়ে যায়। সঙ্গে নারীদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাও পুরুষের সমান হয়। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে অনুপাত ১:১। নারীর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি প্রথম জীবনে পুরুষের চেয়ে কম হলেও তা সারা জীবনের জন্য নয়।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েদের হৃদরোগের ঝুঁকি কম থাকে; কিন্তু এর পর থেকেই ঝুঁকি ক্রমেই বাড়তে থাকে। যতই বয়স বাড়ে, ততই ঝুঁকি বাড়ে। ঠিক পুরুষের মতোই। বর্তমান গবেষণায় বলা হচ্ছে, নারীর মৃত্যু ও ভোগান্তির বড় কারণ হচ্ছে পুরুষের মতোই হার্ট অ্যাটাক।
বিজ্ঞানীরা গবেষণায় দেখেছেন, নারীকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত হার্ট অ্যাটাক থেকে রক্ষা করে প্রাকৃতিক কিছু উপাদান। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ইসট্রোজেন হরমোন। মেনোপজ হওয়ার আগ পর্যন্ত এ হরমোন মেয়েদের রক্তে উচ্চমাত্রায় থাকে। তাতে হার্টের করোনারি ধমনিতে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় না বা এসব ক্ষতিকর পদার্থের চলাচল সীমিত রাখে। ধমনিগুলো প্রসারিত রাখে। রক্ত জমাট বাঁধে না, তাই চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে না। হার্টে রক্ত প্রবাহিত হয় অবিরাম। কিন্তু মেনোপজের পর রক্তে ইসট্রোজেন হরমোন কমে যায়। রক্তের প্রাকৃতিক নিরাপত্তার অভাব ঘটে। হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বাড়ে। ৫৫ বছর বয়সের পর তাই নারী-পুরুষ সমানভাবেই হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হতে পারে।
সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো,
লেখকঃ ডা· এস কে অপু
Leave a Reply