এ আসন অভ্যাসে শরীরের সব অংশের উপর কম-বেশি প্রভাব পড়ে, তাই আসনটির নাম সর্বাঙ্গাসন (Sarvangasana)|
পদ্ধতি:
সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা দু’টো জোড়া থাকবে এবং পায়ের আঙুলগুলো উপর দিকে থাকবে। হাত দু’টো পাঁজরের দু’পাশে মাটিতে রাখুন। এখন হাতের উপর ভর দিয়ে পা দু’টো জোড়া ও সোজা অবস্থায় যতদূর পারেন উপরে তুলুন। এবার হাত দু’টো কনুইয়ের কাছ থেকে ভেঙে কোমরের দু’পাশে ধরুন এবং কনুইয়ের উপরে জোর দিয়ে কোমর ও পা সোজা অবস্থায় উপরে তুলে নিয়ে আসুন। পায়ের বুড়ো আঙুল ঠিক মাথা বরাবর উপরে থাকবে, কাঁধ থেকে পা পর্যন্ত দেহটি ঠিক ৯০ ডিগ্রীতে থাকবে। কনুইয়ের উপর জোর রেখে হাত দিয়ে দেহটি উপর দিকে ঠেলে রাখুন। চিবুকখানা বুক ও কণ্ঠনালীর সংযোগস্থলে লেগে থাকবে। কনুই থেকে হাতের উপরাংশ, কাঁধ, ঘাড় ও মাথার পেছনদিকটা শুধু মাটিতে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে কুড়ি সেঃ থেকে তিরিশ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর কনুইয়ের উপর জোর রেখে আস্তে আস্তে পা নামিয়ে আনুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন। আসনটি প্রথম প্রথম ২/৩ বার করুন। তবে ভালোভাবে অভ্যস্ত হয়ে গেলে একবারে মিনিট খানেক সময় নিয়ে আসনটি অভ্যাস করলে আর একাধিকবার করার দরকার হয় না।
উপকারিতা:
যোগশাস্ত্রমতে আসনটিতে সর্বরোগ দূর হয়। আসন অবস্থায় রক্তবাহী ধমনী, উপশিরা বিপরীতমুখী হয় বলে গলদেশ ও মস্তিষ্ক রক্তে প্লাবিত হয়। ফলে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, স্যালিভারী প্রভৃতি গ্রন্থিগুলো সতেজ ও সক্রিয় হয়ে উঠে। পিটুইটারি ও পিনিয়াল গ্রন্থিও বিশুদ্ধ রক্ত থেকে তাদের পুষ্টির জন্য উপাদান সংগ্রহ করতে পারে। এই গ্রন্থিগুলো দেহরক্ষার অতি প্রয়োজনীয় কাজগুলো করে। থাইরয়েড গ্রন্থির অন্তঃস্রাবী রসের সঙ্গে অতি দরকারি আয়োডিন থাকে, যা রক্তের সঙ্গে মিশে দেহের সমস্ত স্নায়ু ও গ্রন্থিকে সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। থাইরয়েড গ্রন্থিকে যৌবন গ্রন্থিও বলা হয়ে থাকে। কারণ এই গ্রন্থিটি সক্রিয় থাকলে দেহে জরা ও ব্যাধি সহজে আক্রমণ করতে পারে না। যৌবনকে অটুট রাখতে আসনটি অদ্বিতীয়। আমাদের দেহে হৃৎপিণ্ড মস্তিষ্কের নিচে থাকায় মাধ্যাকর্ষণকে কাটিয়ে হৃৎপিণ্ডকে মস্তিষ্কে রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয়। সর্বাঙ্গাসন অবস্থায় মস্তিষ্ক হৃৎপিণ্ডের নীচে চলে আসে। ফলে হৃৎপিণ্ডের মস্তিষ্কে রক্ত পাঠাতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় না, কিছুক্ষণ এই পরিশ্রম থেকে রেহাই পায়। এতে তার কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া আসনটি জঠরাগ্নি বৃদ্ধি করে, কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে এবং প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয় প্রভৃতিকে সক্রিয় রাখে। টনসিলের দোষ কোনদিন হয় না। সর্বাঙ্গাসন অভ্যাসকারিণীদের কোন স্ত্রী-ব্যাধি হতে পারে না, এমনকি স্থানচ্যুত জরায়ু ঠিক জায়গায় ফিরে আসে।
নিষেধ:
হৃদরোগীদের এবং বার-তের বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের আসনটি করা উচিত নয়।
বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসন (Baddha-Sarvangasana)
পদ্ধতি:
প্রথমে সর্বাঙ্গাসন করুন। তারপর পা দু’টো হাঁটুর কাছ থেকে ভেঙে পদ্মাসনের ভঙ্গিমায় নিয়ে আসুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এই অবস্থায় থাকুন। এরপর পা আলগা করে আস্তে আস্তে পা নামিয়ে শুয়ে বিশ্রাম নিন। ২/৩ বার আসনটি করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
সর্বাঙ্গাসনের সব গুণ আসনটিতে বর্তমান। এ ছাড়াও এতে পায়ের খুব ভালো ব্যায়াম হয়।
নিষেধ:
সর্বাঙ্গাসনের নিষেধগুলো বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসনেও মেনে চলতে হবে।
পূর্ণ-বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসন (Purna-Baddha-Sarvangasana)
পদ্ধতি:
প্রথমে সর্বাঙ্গাসন ও পরে বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসনে আসুন। এবার হাত দুটো কোমর থেকে নামিয়ে নিয়ে সুপ্ত-বজ্রাসনের ভঙ্গিমায় মাথার পেছনদিকে মুড়ে মেঝেতে রাখুন। এখন পা দুটো পদ্মাসনে রেখে কপালের উপর অথবা মাথার পেছনে হাতের উপর নামিয়ে আনুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক থাকবে এবং কুড়ি সেঃ থেকে তিরিশ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন। এরপর আস্তে আস্তে উল্টো নিয়মে প্রথমে বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসনে, পরে সর্বাঙ্গাসনে ফিরে যান। পা নামিয়ে হাত আলগা করে শুয়ে বিশ্রাম নিয়ে আসনটি ২/৩ বার করুন। প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
সর্বাঙ্গাসন ও বদ্ধ-সর্বাঙ্গাসনের সব গুণ আসনটিতে বর্তমান। এ ছাড়াও দেহের মধ্যভাগের খুব ভালো ব্যায়াম হয়। প্লীহা, যকৃৎ, মূত্রাশয় প্রভৃতির কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অজীর্ণ, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি পেটের রোগ হতে পারে না। মেরুদণ্ডের হাড়ের জোড় নমনীয় ও মজবুত করে। মেরুদণ্ড-সংলগ্ন স্নায়ুকেন্দ্রগুলো ও মেরুদণ্ডের পেশী সুস্থ ও সক্রিয় রাখে। পেট, পিঠ, কোমর, নিতম্ব, পায়ের পেশী ও স্নায়ুজাল সতেজ ও সক্রিয় রাখে। ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কিশোর-কিশোরীদের লম্বা হতে সাহায্য করে। শরীরের কোন অংশে বাত বা সায়টিকা হতে পারে না। কোন স্ত্রী-ব্যাধি সহজে হতে পারে না, আর থাকলেও অল্পদিনের অভ্যাসে ভালো হয়ে যায়। দেহের মধ্যভাগের অপ্রয়োজনীয় মেদ কমিয়ে দেহকে সুঠাম ও সুন্দর করে তোলে।
এই আসনটির সাথে ধনুরাসন, পূর্ণ-ধনুরাসন, উষ্ট্রাসন, পূর্ণ-উষ্ট্রাসন অভ্যাস থাকলে দেহে কোনদিন বাত বা সায়টিকা, লাম্বার স্পন্ডিলোসিস ও স্লীপড্ ডিস্ক জাতীয় রোগ হতে পারে না।
নিষেধ:
যাদের প্লীহা ও যকৃৎ অত্যধিক বড় এবং যাদের কোনরকম হৃদরোগ আছে, রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এই আসনটি তাদের করা উচিত নয়। ১২/১৩ বছরের কম বয়সের ছেলেমেয়েদের এ আসন করা বাঞ্ছনীয় নয়।
আসন-বিচিত্রা:
প্রায়োগিক চর্চায় সর্বাঙ্গাসনে বেশ কিছু বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। এই বিবর্তিত রূপগুলো হচ্ছে সেতুবন্ধ-সর্বাঙ্গাসন, এক পদ সেতুবন্ধ-সর্বাঙ্গাসন, পার্শ্ব-সর্বাঙ্গাসন ইত্যাদি।
এক পদ সর্বাঙ্গাসন (Eka Pada Sarvangasana)
সেতুবন্ধ-সর্বাঙ্গাসন (Sethubandha-Sarvangasana)
এক পদ সেতুবন্ধ-সর্বাঙ্গাসন (Eka Pada Sethubandha-Sarvangasana)
এক পদ উত্থান সর্বাঙ্গাসন (Eka Pada Uttana Sarvangasana)
পার্শ্ব সর্বাঙ্গাসন (Parsva-Sarvangasana)
অর্ধ-সর্বাঙ্গাসন (Ardha-Sarvangasana)
Leave a Reply