মৎস্যাসন (Matsyasana): আসন অবস্থায় দেহটি অনেকটা মাছের মতো দেখায় বলে এ আসনের নাম মৎস্যাসন। দু’ধরনের মৎস্যাসন চর্চাই বহুল প্রচলিত।
মৎস্যাসন-(ক)
প্রণালী:
সটান চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন, পায়ের পাতা জোড়া থাকবে। হাতের তালু দু’টো চিৎ অবস্থায় পাছার নিচে রাখুন। এবার হাতের উপর ভর রেখে কোমরে চাপ দিয়ে সাধ্যমত বুক উঁচু করুন এবং মাথা পেছন দিকে নিয়ে এসে সামনের দিকে তাকানোর চেষ্টা করুন। ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ পর্যন্ত এই অবস্থায় থেকে এরপর আস্তে আস্তে হাতের উপর ভর রেখে পূর্বাবস্থায় ফিরে আসুন। এভাবে আসনটি ২/৩ বার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
# মৎস্যাসন-(খ)
প্রণালী:
প্রথমে পদ্মাসনে বসুন। এবার পা দু’টো পদ্মাসনে রেখে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ুন। এখন হাত দু’টো মাথার দু’পাশে রেখে চাপ দিয়ে কাঁধ, পিঠ, কোমর মেঝে থেকে তুলে ঠিক ধনুকের মতো করুন। শুধু মাথার ব্রহ্মতালু মেঝেতে থাকবে। এবার ডান হাত দিয়ে বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল এবং বাঁ হাত দিয়ে ডান পায়ের বুড়ো আঙুল ধরুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে ২০ সেঃ থেকে ৩০ সেঃ এ অবস্থায় থাকুন।
আসন ছাড়ার সময় একটু সাবধান হতে হবে। তাড়াতাড়ি করতে গেলে ঘাড়ে চোট লাগতে পারে। প্রথমে হাত আলগা করুন। হাতের তালু বা কনুই মেঝেতে রাখুন। এরপর হাতের উপর জোর রেখে মাথা সোজা করুন এবং মাথা, কাঁধ, পিঠ ও কোমর মেঝেতে রাখুন। এবার পা আলগা করে ছড়িয়ে দিন। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে পদ্মাসনের হাত-পা বদল করে আসনটি আবার করুন। এভাবে ২/৩ বার আসনটি অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমতো শবাসনে বিশ্রাম নিন।
উপকারিতা:
আসন দু’টো অভ্যাসে থাইরয়েড, প্যারাথাইরয়েড, টনসিল, থাইমাস প্রভৃতি গ্রন্থির খুব ভালো কাজ হয়। যাদের হাঁপানি, সর্দিকাশির ধাত, ব্রঙ্কাইটিস, টনসিলের দোষ আছে তাদের এ আসন অবশ্য করা উচিৎ। এ আসন মাথাধরা, অনিদ্রা, দৃষ্টিশক্তির দুর্বলতা রোগ দূর করে। আসনটির সঙ্গে শশাঙ্গাসন বা পদ-হস্তাসন জাতীয় মেরুদণ্ড সামনে বাঁকানো যায় মতো আসনের অভ্যাস রাখলে স্লীপড ডিস্ক, লাম্বার স্পণ্ডিলোসিস জাতীয় রোগ কোনদিন হতে পারে না। এছাড়াও যাদের বুকের খাঁচার কোন দোষত্রুটি থাকে, আসনটি তাদের জন্য বিশেষ উপকারী। প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তর্মুখী রস নিঃসরণে এ আসন বিশেষভাবে সাহায্য করে। এই রস ক্ষরণ যদি প্রয়োজনমতো না হয়, তবে দেহের ক্যালসিয়াম জীর্ণ হয়ে দেহের কাজে আসে না। ফলে শরীরে ক্যালসিয়াম ঘাটতি দেখা দেয়। তাছাড়া প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থির অন্তঃক্ষরণ কম হলে খাদ্যবস্তু হজম হয় না, ফলে অজীর্ণ, কোষ্ঠবদ্ধতা, পেটফাঁপা প্রভৃতি নানারকম পেটের রোগ দেখা দেয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে দাঁতও দুর্বল হয়ে যায়। এ্যাপেণ্ডিসাইটিস, পিত্তশূল প্রভৃতি রোগও দেখা দিতে পারে। নানারকম চর্মরোগ হয়। আবার এই গ্রন্থির অতিরিক্ত অন্তঃক্ষরণে রক্তচাপ বৃদ্ধি রোগ হয়। তাই এ আসনটি অভ্যাসের সঙ্গে সঙ্গে সর্বাঙ্গাসন করা উচিৎ। দু’টো আসন পরস্পর পরিপূরক। আসনটিতে দেহের সব জায়গায় কম-বেশি ব্যায়াম হয়। তাছাড়া আসন দু’টোর ভঙ্গিমায় ঘাড়, কাঁধ, গলা, হাত-পা, বুক, পেট, বস্তিপ্রদেশ, নিতম্ব, কোমর, মেরুদণ্ড ও মেরুদণ্ডের দু’পাশের পেশী ও স্নায়ুজালের খুব ভালো ব্যায়াম হয়, বুকের গড়ন সুঠাম ও সুন্দর হয়। বুকের খাঁচার দোষ-ত্রুটি থাকলে ভঙ্গিমা দু’টো অভ্যাসে অল্পদিনে ঠিক হয়ে যায়।
Leave a Reply