একটি পরিবারে যখন একটি অটিস্টিক শিশু থাকে, সেই পরিবারের মা-বাবার এবং সব সদস্যদের শারীরিক ও মানসিক কষ্ট একটি স্বাভাবিক পরিবারের সদস্যদের ধারণার বাইরে। আবার অনেক পরিবারের মা-বাবা জানেনও না যে তার সন্তানটি অটিজমে আক্রান্ত।
অটিজম মস্তিস্কের বিকাশের প্রতিবন্ধকতা যা শিশুর জন্মের ৩ বছরের ভিতরই প্রকাশ পায়।
অটিজমকে সাম্প্রতিককালে বিশেষজ্ঞরা ‘অটিজম স্পেকট্রাম ডিসওর্ডার’ বলে আখ্যায়িত করছেন। যার ফলে অতি সামান্য থেকে শুরু করে গুরুতর সমস্যাগ্রস্থ অটিস্টিক শিশুরা এ নামের ছত্রছায়ায় চলে আসছে। যদিও অটিজম বলে চিহ্নিত করার ব্যাপ্তি বিশাল আকার ধারণ করেছে এবং এক একজন অটিস্টিক শিশু এক এক ধরনের, তবুও প্রধান তিন সমস্যা সকল অটিস্টিক ব্যক্তিদের ভিতরে রয়েছে।
অটিজমে আক্রান্ত শিশু কিশোররা সাধারণত ভাবভঙ্গি বা কথায় তাদের মনের ভাব প্রকাশে ব্যর্থ হয়।
স্বাভাবিক সামাজিক আচরণেও তারা অনেক পিছিয়ে থাকে। একটি অটিস্টিক শিশু কিশোর জানেনা কিভাবে বন্ধুত্ব করতে হয় কিংবা কিভাবে বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখা যায়।
আদান প্রদান মূলক খেলায় বিশেষ করে কল্পনাযুক্ত খেলায় অটিস্টিক শিশুরা অত্যন্ত পিছিয়ে থাকে। এছাড়া পুনরাবৃত্তি মূলক আচরণ ও রুটিন পরিবর্তনের ঘোর বিরোধিতা করাও অটিজমের আর একটি লক্ষণ।
এছাড়া অটিস্টিক শিশু কিশোররা পঞ্চ ইন্দ্রিয় যথাঃ দেখা, শোনা, স্পর্শ, স্বাদ, গন্ধ, চলাচলে কোনো না কোনো ভাবে সংবেদনশীল থাকে এবং এই সংবেদনশীলতার কারণেও অনেক ক্ষেত্রে তারা অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। অটিস্টিক শিশু কিশোররা আর সকল সকল শিশুদের মতই দেখতে। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে না। ব্যবহারিক সমস্যা দিয়েই অটিজমকে সনাক্ত করা হয়।
সম্ভাব্য কারণসমূহ
১. গর্ভকালীন সময়ে মার ভাইরাস জ্বর বিশেষ করে রুবেলা ভাইরাস, ঈুঃড়সবমধষড়ারৎঁং ইত্যাদি। ২. শিশুকালীন টিকা বিশেষ করে গগজ টিকা। ৩. জন্মের সময় শিশুর অক্সিজেনের অভাব। ৪. শিশুর কোনো কারণে খিঁচুনি রোগ। ৫. প্রসবকালীন সময়ে ঝুহঃড়পরহড়হ ফৎরঢ় ব্যবহার। ৬. খাদ্যনালীতে ছত্রাকের আধিক্য। ৭. খাদ্যে এলার্জি। ৮. পরিবেশ দূষণ। ৯. অতিরিক্ত এ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ। ১০. বংশগত কারণ।
অটিজমের চিকিৎসা
অটিজমের কোন জাদুকরী চিকিৎসা নেই। পৃথিবীর উন্নত দেশ সমূহে অটিজমের নানা ধরনের চিকিৎসা বের হয়েছে। তার ভেতর সবচেয়ে প্রচলিত ও কার্যকরী চিকিৎসা হচ্ছে অটিস্টিক শিশুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা পদ্ধতি সমূহ। যত দ্রুত এই রোগটি সনাক্ত করা যায় এবং যত দ্রুত একটি অটিস্টিক শিশুকে সঠিকভাবে যথোপযোগী একটা শিক্ষা কার্যক্রম সম্পৃক্ত করা যায় তত তাড়াতাড়ি উন্নতি লাভ করা সম্ভব। প্রতিটি অটিস্টিক শিশু কিশোরকে তাদের প্রতিভা ও সীমাবদ্ধতা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে একটা যথোপযোগী শিক্ষা কার্যক্রম সম্পৃক্ত করতে পারলে এই শিশুরা বিশেষভাবে উপকৃত হতে পারে।
কিভাবে বুঝবেন :
০ একটি শিশু যদি ১ বছরের ভেতর মুখে অনেক আওয়াজ না করে, কিংবা আঙ্গুল দিয়ে বা অঙ্গভঙ্গি করে কোন কিছু না দেখায়।
০ ১৬ মাসের ভেতর যদি এক শব্দের সংমিশ্রণে বাক্য না বলে।
০ ২ বছরের ভেতর যদি দুই শব্দের সংমিশ্রণে বাক্য না বলে।
০ একটি শিশুর কথা ও সামাজিক আচরণ যদি হঠাৎ হারিয়ে যায়।
অভিভাবকদের জন্য বক্তব্য
০ নিজেকে অসহায় কিংবা একা ভাববেন না।
০ শিশুর প্রতিভা কিংবা ভাল দিকগুলো বিকাশে সাহায্য করুন।
০ বাড়িতে শিশুর জন্য গঠনমূলক প্রোগ্রাম তৈরি করুন।
০ শিশুর যোগাযোগ ও সামাজিক বিকাশে জোর দিন।
০ ধৈর্য্য হারাবেন না কারণ এই শিশুদের অনেক উন্নতি সম্ভব।
অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন
অটিস্টিক শিশুদের কল্যাণে অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন ২০০৪ সালের ৪ঠা এপ্রিল মাত্র ২৩ জন শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ শুরু করে। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘কানন’ এর ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা ১১৬জন এবং শিক্ষা পদ্ধতি ১:১।
এটি একটি বেসরকারি, অলাভজনক, অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। ‘অটিজম ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ (অ ও ফা)- অটিজম সম্পর্কে গণসচেতনতা বৃদ্ধি এবং অটিস্টিক ব্যক্তি ও তার পরিবারকে সেবা দানে নিবেদিত একটি প্রতিষ্ঠান। বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করুন : ডাঃ রওনাক হাফিজ, চেয়ারপারসন, বাসা- ৩৮/৪০, রোড-০৪, ব্লক-খ, পিসিকালচার হাউজিং সোসাইটি, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭। ফোন : ৮১২১৭৫৯, ০১৫৫২৩৬৩৫৭৫।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, আগস্ট ২৯, ২০০৯
Leave a Reply